বৃহস্পতিবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » রাঙামাটিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি : বাজারে আগুন
রাঙামাটিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি : বাজারে আগুন
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: গত দুই মাসে রাঙামাটির বাজারে প্রতিটি কাঁচা তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরোজমিনে গত কাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার রাঙামাটির ঘাগড়া বাজার, কল্যাণপুর বাজার, বনরুপা বাজার, তবলছড়ি বাজার ও রিজার্ভ বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি কাঁচা শাক-সবজি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ক্রেতা সাধারন বলছেন পণ্যের বাজারে আগুন লেগেছে।
কচু শাক আটি ২০ টাকা, ডেকি শাক আটি ২০ টাকা, লাল শাক আটি ৩০ টাকা, পুই শাক আটি ৩০ টাকা, মুলা শাক আটি ৩০ টাকা, কলমি শাক আটি ২০ টাকা, লাউ শাক আটি ৩০ টাকা ও টক পাতা আটি ২০ টাকা।
বেগুন প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকা, ওল কচু প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ছোট কচু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, পাতা কপি প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১২০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৫০ টাকা, চিছিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেপে প্রতি কেজি ২০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, ঢেরস প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পুই শাকের কুঁড়ি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা, নারিকেল কচু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, শশা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, তিত করলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, ধান্য কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০-১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০-২০০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০-৬০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, আদার ফুল আটি ৪০ টাকা, আনাজ কলা প্রতি হালি ২০ টাকা, হলুদের ফুল আটি ২০ টাকা, ধনিয়া পাতা আটি ১০ টাকা ও লেবু প্রতি হালি ২০ টাকা।
গরুর মাংস হাড়সহ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, গরুর মাংস হাড় ছাড়া প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, সোনালী মুরগী প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, পাকিস্তানী বড় মুরগী প্রতি কেজি ২০০ টাকা, দেশী মুরগী প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, ডিম প্রতিটি ১০ টাকা।
শুকুরের মাংস ৩৫০-৪০০ টাকা, শুকনা শুকুরের মাংস প্রতি কেজি ৩০০ টাকা ও ছেকা মুরগী (পাকিস্তানী) ৩৫০ টাকা।
সাগরের মাছ নারিকুল্য মাছ প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা, পোপা মাছ প্রতি কেজি ১৫০-১৭০ টাকা, চন্দনা ইলিশ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, বাল্যাই মাছ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা ও লইট্ট্যা মাছ প্রতি কেজি ৮০ টাকা।
কাপ্তাই হৃদের মাছ কেছকি প্রতি কেজি ১২০-২০০ টাকা, চাপিলা মাছ প্রতি কেজি ১২০-২৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ১৫০-২৫০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, বাইঙ মাছ প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, আইড় মাছ প্রতি কেজি ২৫০-৬০০ টাকা, কালি বাউস মাছ প্রতি কেজি ২৫০-৬০০ টাকা, দেশী শিং মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ২৫০-৮০০ টাকা, টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, ফলই মাছ প্রতি কেজি ১৫০-৩০০ টাকা, মৃগেল মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, কাতলা মাছ প্রতি কেজি ২০০-৫০০ টাকা, গজাল মাছ প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, বড় গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা, দেশী ছোট চিংড়ি প্রতি কেজি ৪০০ টাকা ও বাছা মাছ প্রতি কেজি ৩০০-৭০০ টাকা।
ইছা শুটকি প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা, ছুরি শুটকি (বড় সাইজ) প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, ছুরি শুটকি (মাঝারী সাইজ) প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, ছুরি শুটকি (ছোট সাইজ) প্রতি কেজি ২৫০-৩২০ টাকা, হাঙ্গর শুটকি প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, মইল্লা শুটকি প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, উলুয়া শুটকি প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, লইট্টা শুটকি প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা, মাঝারী সাইজের নুনা ইলিশ প্রতিটি ৮০-১০০ টাকা ও সিদোল প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা।
সাগরের কাঁকড়া প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, জীবিত নদীর কাঁকড়া প্রতি কেজি ২০০ টাকা, কুচিয়া প্রতি কেজি ৩০০ টাকা ও ব্যাঙ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা।
দেশী পেয়াজ প্রতি কেজি ৮৫-৯০ টাকা, মায়নমার, ভারতীয় ও ইরানী পেয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকা, রসুন প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা, পুরাতন আদা প্রতি কেজি ২০০ টাকা, নতুন আদা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা, কাঁচা হলুদ প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ৫ লিটারী সয়াবিন তৈল ৫২০ টাকা, মুসারী ডাল প্রতি কেজি ৮০-১২০ টাকা, বুটের ডাল প্রতি কেজি ৪০ টাকা, সকল ধরনের চাউল প্রতি কেজি ১-২ টাকা বেশীতে বিক্রয় করা হচ্ছে।
বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে প্যারাগন সেলস সেন্টার এর মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি পণ্যের দাম বেশিদামে কিনতে হচ্ছে, যা বিক্রির দামের সাথে কোন মিল নেই।
কামার লক্ষীকান্ত দেবনাথ জানান, দোকানেও কাজ নাই, সকাল থেকে ৫ শত টাকার পণ্য বিক্রি করেছি, লাভ হবে ২ শত টাকা, মানুষ যথেষ্ট অভাবের মধ্যে আছে।
মৌসুমি ফসলের বীজ বিক্রেতা আব্দুল মান্নান বলেন, লাল শাকের বীজ প্রতি কেজী আগে ১৬০ টাকা এখন বিক্রি করছি ২ শ টাকা করে। মূলা শাকের বীজ আগে দাম ছিল ২শত টাকা এখন ৩ শত থেকে ৩শত ২০ টাকা কেজি।
শুকরের মাংস বিক্রেতা ধনমনি চাকমা বলেন, আগে ১৮০-২০০ টাকায় প্রতিকেজি মাংস বিক্রি করে ৫০-৬০ টাকা লাভ হতো, এখন ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি মাংস বিক্রি করে ১০-২০ টাকা লাভ হচ্ছে।
ছ্যাকা মুরগি বিক্রেতা পূণ্যধন চাকমা বলেন, আগে প্রতিকেজি মুরগি কিনতাম ১৮০-২০০ টাকায় এখন কিনতে হচ্ছে ২২০ টাকা করে যা আমাদের লাভের অংশ অনেক কম।
সিদোল বিক্রেতা ধর্মধন চাকমা বলেন, আগে আমরা যে সিদোল ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি করতাম বর্তমানে ২০০-২২০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে প্রত্যেক বিক্রেতার উত্তর বাজারে চাহিদার চেয়ে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, এবং সবকিছু বেশিদামে ক্রয় করতে হচ্ছে। উৎপাদন কম বলে ধারণা করছে বিক্রেতারা।
কাউন্সিল অব ভোক্তা অধিকার কমিশন-সিআরবি রাঙামাটি জেলা সদস্য সচিব সোহেল চাকমা বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে সুযোগ বুঝে একশ্রেণীর লোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছে। ভোক্তাদের আরো সচেতন হতে হবে, সেই সাথে স্থানীয় প্রশাসনের লোক দেখানো ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা না করে বাজারের দিনে প্রতি শনি ও বুধবারে ভোর ৬টা থেকে প্রত্যেকটি বাজারে সকাল বিকাল ভ্রাম্যমান আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভোক্তাদের পক্ষে দাবি জানান তিনি।
রাঙামাটি জেলা গণ তদারকি কমিটির প্রধান জুঁই চাকমা বলেন, ভোগ্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রনে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ, আলু ও পেয়াজের দাম সরকার নির্ধারণ করার পর বাজার থেকে আলু উধাও, সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু পেয়াজ কোনটাই বিক্রি হচ্ছে না, এমনকি বাজারেও সরবরাহ অনেক কম, এর দায়ভার সরকার ও সরকার দলীয় প্রশাসনের লোকজন এড়াতে পারেনা। সাধারন মেহনতি ক্ষেতে খাওয়া মানুষ দ্রব্যমূল্যের যাতাকলে আজ নিষ্পেষিত, অথচ সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মানুষের ভোটের ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েও এ সরকার সন্তুষ্ঠ নয় বলে মনে হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হোক সেই সাথে রাঙামাটি জেলায় সর্বদলীয় বাজার মনিটরিং এর উদ্যোগ নেওয়া হোক। এতে বাজারের সিন্ডিকেট খুজে বের করে ভোগ্য পণ্য সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।