শুক্রবার ● ৩০ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » খাগড়াছড়িতে অপশক্তি প্রতিরোধ দিবস পালন
খাগড়াছড়িতে অপশক্তি প্রতিরোধ দিবস পালন
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: ‘অন্যায়রে বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত’ এই স্লোগানে আজ ৩০ অক্টোবর শুক্রবার খাগড়াছড়িতে অপশক্তি প্রতিরোধ দিবস পালন করেছে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল) সমর্থীত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা। দিবসটি উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ও ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, স্থিরচিত্র প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আজ সকাল ৯টায় পেরাছড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে পিসিপি’র জেলা সভাপতি সমর চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল) এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি চাকমা।
অপরদিকে আজ দুপুর ১২ টায় ভাইবোনছড়া এলাকায় দিবসটি উপলক্ষে একই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি চাকমা ও ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বক্তব্য রাখেন।
গণসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু করা হয়। কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রাম ও বিশ্ব বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহকে ধ্বংস করার জন্য শাসকগোষ্ঠীর ভাগ করে শাসন করার নীতি অবলম্বন করে হত্যা, গুম,নির্যাতন ও ভূমি বেদখলের মত জঘন্য ঘটনা ঘটাচ্ছে।
বক্তারা অভিযোগ করে আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন ঘটনা ঘটলেও তার সুষ্ঠু বিচার হয় না। সেনা প্রশাসনের মেডিক্যাল রিপোর্টের উপর গোপন নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত খাগড়াছড়ি সদর বলপিয়ে আদামে এক পাহাড়ি নারী গণধর্ষণ ঘটনার মেডিক্যাল রিপোর্ট নেগেটিভ দেয়া তার অন্যতম দৃষ্টান্ত।
বক্তারা আরও বলেন, জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে ভেস্তে দেয়ার জন্য সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিত্য নতুন কৌশল প্রয়োগ করছে। তাদের মদদপুষ্ঠ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে লেলিয়ে দিয়ে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে প্রকাশ্য গণতান্ত্রিক কর্মসূচি প্রাক্কালে হামলা চালিয়ে ছাত্র ও যুব নেতাসহ মোট সাত জনকে হত্যা করা করা হয়েছে।
আলোচনা সভা থেকে বক্তারা ১৯৯৩ সালের ৩০ অক্টোবর যেভাবে ছাত্র -জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল সেভাবে আগামীতেও সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ঐক্য গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, সকল ধরনের সুবিধাবাদী, দালাল ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে। তারা ছাত্র,যুব ও নারীসহ সকল মুক্তিকামী জনতাকে পূর্ণস্বায়ত্তশনের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্টের উপর সেনা-সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, ভূমি বেদখল, ধর্ষণ,নির্যাতন, অন্যায় দমনপীড়ন ও হয়রানিসহ সকল অন্যায়অবিচার বন্ধ করা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালের ৩০ অক্টোবর পিসিপি’র তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি ডাকে ডিসি অফিসের সম্মুখে আহূত শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘটে মিছিল সহকারে যাত্রার প্রস্তুতিকালে খেজুড়বাগান মাঠে (বর্তমানে উপজেলা পরিষদ মাঠ) দাঙ্গা পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালালে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পুলিশ ৩৮টি টিয়ার শেল নিক্ষেপ, ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে, আধা-সামরিক বাহিনী বিডিআর নামিয়েও জনতার প্রতিরোধ ভাঙতে ব্যর্থ হয়। ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ফলে পরবর্তীতে প্রশাসন আটক ছাত্র নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এরপর ছাত্র-জনতা নারাঙহিয়া চৌমুহনীতে কারামুক্ত ছাত্রনেতাদের সংবর্ধনা দেয় এবং এই চৌমুহনীকে ‘রেডস্কোয়ার’ নামকরণ করে।