শিরোনাম:
●   বৈরী আবহাওয়ায় ও শীতের তীব্রতায় বাড়ছে কৃষকের দুশ্চিন্তা ●   কোন হটকারিতায় গণঅভ্যুত্থানের অর্জন নষ্ট করা যাবেনা ●   তরফভাইখাঁ সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ ●   মিরসরাইয়ে শীতার্তের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ●   ঈশ্বরগঞ্জে জিয়াউর রহমান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ●   লংগদু এস এস সি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা সামগ্রী বিতরন ●   ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৫ এর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন সম্ভব ●   হালদা থেকে বিপন্ন গাঙ্গেয় প্রজাতির মৃত ডলফিন উদ্ধার ●   খাগড়াছড়ির আলুটিলায় পর্যটকবাহী বাস উল্টে আহত-২০ ●   পানছড়িতে লোগাং জোন এর অনুদান সামগ্রী প্রদান ●   আত্রাইয়ে কুলি-বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরণ ●   চুয়েটে স্থাপত্য বিভাগের ১ম জাতীয় কনফারেন্স শুরু ●   বিজিবির অভিযানে খাগড়াছড়িতে ১২ অনুপ্রবেশকারী আটক ●   ঈশ্বরগঞ্জে জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত ●   কুষ্টিয়ায় বালুঘাট দখল নিতে তাণ্ডব চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ●   রাউজানে বিকাশ প্রতারকের ফাঁদে নারী উদ্যোক্তা তানিয়া ●   যোবায়ের-সাদপন্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র ইজতেমা মাঠ : নিহত ৩ ●   মিরসরাইয়ে মধ্য তালবাড়ীয়া স্পোর্টিং ক্লাবের কমিটি গঠন ●   জিয়া কিংবা শেখ মুজিব নয়; জনগণই মুক্তিযুদ্ধের মূল নায়ক : টিপু ●   নবীগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় কলেজ ছাত্রের প্রাণহানি ●   জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর নেতৃত্বে থাকবেন ড. ইউনূস ও আলী রীয়াজ ●   রেডব্রিজ কমিউনিটি ট্রাস্ট ইউকে বিজয় দিবস উদযাপন ●   ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের নির্বাচন : সভাপতি আউয়াল, সম্পাদক আতাউর ●   কাউখালীতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন ●   দীপংকর তালুকদার এর অবৈধ সম্পদের তদন্তে নেমেছে দুদক ●   ঈশ্বরগঞ্জে বিজয় দিবস পালিত ●   সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত -১ ●   ঘোড়াঘাটে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত ●   সত্যিকার দেশপ্রেম হচ্ছে দেশকে গড়ে তোলার এক নিরন্তর সাধনা : চুয়েট ভিসি ●   রাঙামাটিতে যথাযথ মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত
রাঙামাটি, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১



CHT Media24.com অবসান হোক বৈষম্যের
রবিবার ● ১ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » স্মৃতি কথা : পর্ব-১
প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » স্মৃতি কথা : পর্ব-১
রবিবার ● ১ নভেম্বর ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

স্মৃতি কথা : পর্ব-১

ছবি : আমার প্রয়াত বাবা রোহিনী রঞ্জন বড়ুয়া।আমার বয়স তখন মাত্র সাত বছর। সাল টা ছিলো ১৯৭১ সাল তখন আমাদের সাজা গোছানো বাড়ি ছিলো। বর্তমান রাঙামাটি শহরের ভেদ ভেদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের কারখানা (যার প্রথম নাম ছিলো চেঙ্গি ভ্যেলি প্রজেক্ট) এর স্থানে।
তৎকালিন পাকিস্থান সরকারের বিরুদ্ধে বাঙলার মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধ। এখন সব স্মৃতি স্পষ্ট মনে নেই তার যেটুকু মনে আছে তা লেখার প্রয়াস মাত্র।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেছি, মনে পড়ে সেই সময়ের রাজাকারদের বর্বরতার কথা, বড়ুয়াদের চায়না বুড্ডিষ্ট ডান্ডি কার্ড দিয়ে হাজার-হাজার হিন্দুদের প্রাণ রক্ষার কথা, মুসলমানরা প্রতিবেশিদের প্রাণ রক্ষার কথা, ভারতীয় মিজোদের গুলি মেরে কুকুর খাওয়া, যোদ্ধা হিসাবে তাদের সুদক্ষ জীবন যাপনের কথা, নেপালী গুর্খাদের যুদ্ধা হিসাবে রাঙামাটিতে আগমনের কথা, চাকমা রাজা মেজর ত্রিদিব রায়ের রাজবাড়িতে শত-শত অস্ত্রের কথা, প্রতি রাত্রি চাকমা রাজাকারা সাধারন মানুষদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বাড়ি তল্লাশীর কথা এবং মনে পড়ছে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় বাঙালীদের প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি করে (বর্তমান ভেদ ভেদী আনসার ক্যাম্প ও বর্তমান রেডিও সেন্টার) এলাকায় লাশ ফেলে দেয়ার কথা।
সেই সময়ে গভর্নর হাউজে (বর্তমান সার্কিট হাউজ) পাকিস্থানী আর্মির অফিসারগণ এবং তার সামনের বিল্ডিংয়ে (বর্তমান বাংলাদেশ আর্মি অফিসার মেস) থাকতো পাকিস্থানী পক্ষের ভারতীয় মিজুরা, যেখানে পাকিস্থানীরা নারীদের ধর্ষণ করার পর রাখা হতো বিরঙ্গনা অফিস পরবর্তীতে সিও অফিস (বর্তমান রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়) , আর রাঙামাটি সরকারী কলেজে ছিলো পাকিস্থানী আর্মির ক্যাম্প সেই ক্যাম্প কমান্ডারের নাম ছিলো ক্যাপ্টন রমজান। বাবা যখন তার ব্যবসার জন্য কাটাছড়ির চাকমা জেলেদের কাছ থেকে মাছ নিতে কলেজ গেইট আসতেন আমি তখন প্রায় সময় বাবার সাথে যেতাম।
বয়সের কারণে সঠিক দিন তারিখ মনে নেই, একবার রাত ৮টার দিকে আমাদের বাড়িতে বেশ কিছু চাকমা রাজাকার গিয়ে ঘরের দরজায় লাথি মারে বলে, “গিড়ি হন্না আঘহ্ ভিধিরে ? ঝাদি ঘরত্তোন নিঘিলি আয়” (গৃহি কে ঘরের ভিতর আছো ? তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে আসো)। আমার বাবা ঘর থেকে বের হয়ে রাজাকারদের সাথে কথা বলে বিদায় করে দিল। রাজাকারা চলে যাওয়া পর আমি ঘুমিয়ে পড়ি, হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, চোখ খুলে দেখি বাবা আমাকে কোলে নিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বেশ কিছু দুরে খলিল ফকিরের বাড়ি দ্রুত চলে আসলেন, ওখানে গিয়ে দেখি ঘরের ভিতর অনেক-লোকজন আশ্রয় নিয়ে আছেন। সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কে মা-বাবা পরে আমাকে অনেক বার বলেছেন, পাকিস্থানী পাঞ্জাবী-রাজাকারের ভয়ে আমার ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে খলিল ফকিরের বাড়িতে আশ্রয় নেন (বর্তমানে টিএন্ডটি মাক্রোওয়েভ অফিস ভেদ ভেদী), মা কেবল কোলের শিশু ছোট ভাইকে নিয়ে পালিয়ে ছিলেন, পরে আমার কথা মনে পড়াতে বাবা আবার ফিরে এসে আমাকে নিয়ে যান।
পরের দিন বাবা আমাদের নিয়ে রাঙামাটি রাবার বাগানের ভিতর চিকনছড়া চলে যান, কারণ রাঙামাটি জেলার সীমান্ত এলাকায় পাকিস্থানী হানাদার পাঞ্জাবী-রাজাকারের ভয় নেই।
জঙ্গলের ভিতর চিকনছড়া গিয়ে আমরা নিরাপদে ছিলাম কিন্তু আধা সের চাউলের ঝাও খেয়ে অথবা ১টি রুটি খেয়ে দিন কাটাতে হতো। চিকনছড়া থেকে জয়নগর বড়ুয়া পাড়া তেমন দুরে নয়, অভাবের কারণে জয়নগরের মনিন্দ্র লাল বড়ুয়ার কাছে পাকিস্থানী পাঁচশত টাকা সুদে নিয়ে বাবা আমার মায়ের সাত ভরি স্বর্ণলংকার জমা রাখেন। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে টিনের একটি গোল পাউডারে কৌটায় মায়ের কাছ থেকে নিয়ে বাবা আমাকে সাথে নিয়ে জয়নগরের মনিন্দ্র লাল বড়ুয়া কাছে জমা রাখেন। সেই সুদে নেয়া টাকা দিয়ে বাবা রাঙামাটি থেকে মাছ নিয়ে রাউজান ফকিরহাটে বিক্রয় করতেন এবং ফকিরহাট থেকে বাজার করে আমাদের আনতেন এবং বাবা আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য ফকিরহাট থেকে পেরা আনতেন।
মাঝে মাঝে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী পাঠান,পাঞ্জাবী-রাজাকারদের গোলাগুলি হলে বাবা সে দিন মাছ নিতে রাঙামাটি আসতেনা আবার কখনো মাছ না নিয়ে বাবা হেটে হেটে পাহাড়ের ঘরে ফেরৎ যেতেন।
বাবা প্রায় সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাঙামাটি ও ফকিরহাট থেকে তাদের প্রয়োজনীয় বাজার করে গোপনে তাদের ক্যাম্পে পৌছে দিতেন।
একদিন বাবা খবর নিয়ে আসলেন আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখন থেকে আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। সদ্য স্বাধীন হওয়া মানুষ দেখতে কেমন মা বাবার কাছে জানতে চায়, বাবা কিছু দিন পর আমাদের মামা বাড়ি রাউজানের খৈইয়াখালি (পূর্বগুজরা) পাঠান, চিকনছড়া থেকে পায়ে হেটে জয়নগর বড়ুয়া পাড়া তার পর মদেরমাহল (বর্তমান জলিল নগর), তার পর রিক্সা দিয়ে কাচা রাস্তায় (মাঝ পথে মাজার, রিক্সা থেকে এক হাজান গজের মত পায়ে হেটে যাওয়া লাগতো) রমজান আলির হাট তার পর পায়ে হেটে জমির মাঝ দিয়ে খেত্তিপাড়া,নতুন চৌধুরীহাট তার পর মামা বাড়ি খৈইয়াখালি। পথে যাওয়ার সময় গুলির খালি খোসা নিয়ে নিয়ে হাফ প্যান্টের পকেটে রাখতাম আর মাঝে মাঝে পকেট থেকে বের করে বাঁশির মত করে ফুক দিয়ে বাজাতাম।
মায়ের বাবা দামদর বড়ুয়া দাদু নৌকায় করে লাম্বুরহাটে চাউলের ব্যবসা করতেন, মায়ের মা দিদি মা ছিলেন বার্মার রেঙ্গুনের বার্মিজ, তবে তিনি পরিস্কার ভাবে চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতেন, আমি মামা বাড়ি গেলে চুরী করে পাউডার দুধ ও সাদা ঔষধ খেতাম আর এখন বুঝি ঐ ঔষধ ছিলো এন্টাসিড, দেশ স্বাধীনের পর মামা বাড়ি গিয়ে প্রায় আমরা এক মাসের মত ছিলাম পরে বাবা গিয়ে আমাদের তিনজনকে নিয়ে আসেন।
রাউজান মদেরমাহল (বর্তমান জলিলনগর) থেকে বাস ভাড়া সেই সময়ে রাঙামাটি দুই টাকা ছিলো। রাউজান থেকে আসার সময় দেখি রানীরহাট পুল (ব্রিজ) ও মানিকছড়ি পুল (ব্রিজ) পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী পাঠান,পাঞ্জাবী-রাজাকারা পালিয়ে যাওয়ার সময় বোমা মেরে ভেঙ্গে দিয়ে । কারণ পিছন থেকে রাঙামাটি থেকে যেন মুক্তিযুদ্ধা তাদের গাড়ি নিয়ে গিয়ে ধরতে না পারে। আমাদের বাসটি যাত্রী নামিয়ে খালি গাড়ি কাঠের ওপর দিয়ে পার করে অনেক দেরীতে রাঙামাটি পৌছি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জয়নগরের মনিন্দ্র লাল বড়ুয়া কাছে পাকিস্থানী পাঁচশত টাকার বিনিময়ে জমা রাখা আমার মায়ের সাত ভরি স্বর্ণলংকার আনতে আমি আর বাবা প্রায় দশবারের অধিক গিয়ে ছিলাম, কিন্তু সুদ ব্যবসায়ী জয়নগরের মনিন্দ্র লাল বড়ুয়া তার কাছে জমা রাখা আমার মায়ের স্বর্নলংকার আর কোন দিন ফেরৎ দেয়নি।
বাবা-মা প্রায় সময়ে সুদ খোর জয়নগরের মনিন্দ্র লাল বড়ুয়াকে অভিশাপ দিতেন পরে আমার ছোট মামা হিরামন বড়ুয়া (গুরা) কাছ থেকে জানতে পরেছি অনেক কষ্ট পেয়ে মরা গেছেন জয়নগরের সেই লোভী মনিন্দ্র লাল বড়ুয়া। চলবে….
লেখক : নির্মল বড়ুয়া মিলন
মূখ্য সম্পাদক
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম।
তারিখ : ০১ নভেম্বর-২০২০ ইংরেজি।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)