বৃহস্পতিবার ● ৫ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » এএসপির ব্যতিক্রমী ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল পড়ছেন নানা বয়সী মানুষ
এএসপির ব্যতিক্রমী ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল পড়ছেন নানা বয়সী মানুষ
আমির হামজা, রাউজান :: রাস্তার পাশের সামান্য ফাঁকা জায়গায় ক্লাসের আয়োজন। শিক্ষার্থী হিসেবে জড়ো হয়েছেন আঠারোর তরুণ থেকে শুরু করে ষাট বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত নানান বয়সী মানুষ। বয়সের ভিন্নতা থাকলেও সবার মধ্যে মিল অবশ্য আছে একটা- তারা প্রত্যেকেই ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক-চালকের সহকারী। অভিনব এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান -রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। উদ্যোগ গ্রহণ, পাঠ্যসূচি প্রণয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষকতার ভূমিকাতেও তিনিই। ব্যতিক্রমী এই স্কুলে ভর্তি হবার প্রক্রিয়াও বিচিত্র। রাস্তায় ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তবেই এই স্কুলে ভর্তির সুযোগ মেলে। যানজট সৃষ্টিকারী যানবাহনের চালক ও সহকারীদেরকে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বুঝিয়ে শ্রেণিকক্ষে (!) এনে হাজির করেন। অবশ্য ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ছাত্রদেরকে একটিমাত্র ক্লাসেই অংশগ্রহণ করতে হয়। এক থেকে দেড় ঘন্টাব্যাপী পরিচালিত সেই ক্লাসে ট্রাফিক শৃঙ্খলার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাতের পাশাপাশি দেওয়া হয় সড়ক সচেতনতাবোধের প্রাথমিক পাঠ। হাতেকলমে বুঝিয়ে দেওয়া হয় ট্রাফিক আইনের অতি প্রয়োজনীয় ধারা-উপধারা। ক্লাস শেষে থাকে পরীক্ষা এবং সেখানে ভাল ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকে পুরস্কারেরও বন্দোবস্ত। স্থানীয় ব্যক্তিদের নিকট খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত মাস দুয়েক ধরেই রাঙ্গুনিয়া সার্কেল এএসপির উদ্যোগে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের যানজটবহুল বিভিন্ন মোড়, বাজার, লোকালয়জুড়ে চলছে অভিনব এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। শুধু বুঝিয়ে বেয়াড়া চালকদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা- জানতে চাইলে এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, এমন না যে আমরা শুধু বুঝাচ্ছি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গণহারে প্রায় সকল চালকের বিরুদ্ধে তো মামলা দেওয়া তো সম্ভব নয়। তাই আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের পরিপূরক ব্যবস্থা হিসেবে আইন অমান্যকারী চালকদেরকে আমরা কাউন্সেলিং (উপদেশনা প্রদান) এর মাধ্যমে তাদের আচরণ পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। এভাবে এই স্কুলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত আমরা ৫ শতাধিক চালক/সহকারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। নামে স্কুল হলেও এটি মূলত সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের একটি উদ্যোগ। ইতিবাচক এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মালিক ও চালকেরাও। এ প্রসঙ্গে রোয়াজারহাট বাজার সিএনজি অটোরিকশা মালিক-চালক সমিতির সভাপতি নুরুল আজিম মনু বলেন, আমার দীর্ঘজীবনে পুলিশ প্রশাসনের এমন সুন্দর উদ্যোগ এই প্রথম দেখলাম। একটু সময় অপচয় হলেও এই ক্লাসে যেয়ে আমাদের চালকদের অনেক উপকার হচ্ছে। এএসপি সাহেবকে ধন্যবাদ যে, তিনি আমাদের ভালর কথা চিন্তা করে জয়েন (যোগদান) করার পর থেকেই দিনরাত রাস্তায় রাস্তায় কষ্ট করে যাচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগের সুফল ভোগ করছেন সাধারণ যাত্রীরাও। আব্দুল করিম নামের বেসরকারি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, আমি প্রতিদিন চট্টগ্রাম শহর থেকে অফিসের গাড়িতে যাওয়াআসা করি। যানজটের কারণে আগে যেখানে রাস্তায় এক ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যেত, এখন ৩০/৩৫ মিনিটেই হয়ে যায়। চালকদের মধ্যেও দেখি আইন মানার প্রবণতা বেড়েছে। সবমিলিয়ে কাপ্তাই রোডের এই উন্নতি আমাদের মতো যারা নিয়মিত যাত্রী, তাদের জন্য অনেক স্বস্তির কারণ হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের অসহনীয় যানজট দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর চট্টগ্রামবাসীর মাথাব্যথার কারণ। রাস্তার ওপর যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামাসহ চালকগণ কর্তৃক ট্রাফিক আইন মেনে না চলার প্রবণতাই মূলতঃ এই যানজটের প্রধানতম কারণ। শুধু তাই নয়, এই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের বেশিরভাগ চালক ট্রাফিক আইনের প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও রাখেন না। অভাব রয়েছে সড়ক শৃঙ্খলা সম্পর্কিত সচেতনতাবোধেরও। চালকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে যানজটের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার হারও বাড়ছে দিনের পর দিন। এই ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুলের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হলে তা সড়ক শৃঙ্খলা ফেরাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ উত্তর চট্টগ্রামবাসীর।