সোমবার ● ৯ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » সফল সকাল পেতে হলে
সফল সকাল পেতে হলে
ফজলুর রহমান :: সকলের সামনে সকাল নানা সাজে নিত্য আসে। এই সকাল কখনো দু:খের বার্তাবহন করে । এই যেমন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার/ ও কি সূর্য নাকি স্বপনের চিতা/ও কি পাখির কূজন নাকি হাহাকার।”
আবার কখনো এই সকাল কোমল সুন্দর। প্রেম ও নিসর্গের কবি জীবনানন্দের ভাষায় যেমন ফুটেছে,”চারিদিকে এখন সকাল-রোদের নরম রং শিশুর গালের মতো লাল।”
এই দুই দাবির মাঝে বিচার পেতে পারি শুভমিতার গানে, “যে ভাবেই তুমি সকাল দেখো/সূর্য কিন্তু একটাই।”
এই সকালকে মনের মতো ভালোবাসা যায়। প্রয়োজন মতো কাজের কাজী করা যায়। আবার অবহলোয় ছুঁড়ে ফেলাও যায়। বেখেয়ালে মুছে ফেলাও যায়।
এই মনোভাব থেকেই নান্দনিক প্রশ্নটি তুলেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, “আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার?” আর চলতি একটি প্রবাদ আছে, ‘‘‘যে ঘুমায়, তাঁর ভাগ্যও ঘুমিয়ে থাকে৷” সুতরাং বুঝা যাচ্ছে এই সকালটা সফলতা, বিফলতার মাত্রা নির্ণায়কও।
এজন্য বিখ্যাত মনীষী ব্রেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন বলতেন, ভোরের মুখে সোনা রং থাকে। সকালে ওঠার সুফলের কথা এই উপমা দিয়ে সহজেই বুঝিয়েছেন ফ্রাঙ্কলিন। আর নিজে সকালকে কাজে লাগিয়ে হয়ে গেছেন একাধারে একজন লেখক, চিত্রশিল্পী, রাজনীতিবিদ, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী, সঙ্গীতজ্ঞ, উদ্ভাবক, রাষ্ট্রপ্রধান, কৌতুকবিদ, গণআন্দোলনকারী এবং কূটনীতিক।
দিনের শুরুটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হলেই, বাকি দিনটাও নিজের আয়ত্তে আনা সম্ভব৷আর, এটাকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন পৃথিবীর একাধিক প্রতিষ্ঠা পাওয়া মুখ৷ ঘুমের মধ্যে সময় অপচয় না করেই তাঁরা বিশ্ব সেরা৷
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বে প্রতিটি সফল মানুষ অনেক ভোরেই ঘুম থেকে ওঠেন৷ ঘুম থেকে উঠে দিনের পরবর্তী কর্মসূচীগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন৷ফলে, দিনের শুরুটাই হয় পরিকল্পিত৷
মার্কিন এক সমীক্ষায় এসেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ সফল ব্যক্তিই সকাল ছটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে হাল্কা ব্রেকফাস্ট করে নেন৷ পরে, দেখে নেন তাঁদের দিনের পরবর্তী কর্মসূচী কিকি আছে৷ আর প্রতিটি কাজই করেন ঘড়ির কাঁটা ধরে৷ দেখে নেওয়া যাক, কারা কখন ঘুম থেকে ওঠেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিয়ম করে সাড়ে ছ’টায় ঘুম থেকে ওঠেন৷ একই সময়ে উঠতেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরুন। অ্যাপেল কর্তা টিম কুক ওঠেন সাড়ে চারটে নাগাদ৷ অ্যামাজন কর্তা জেফ বোজেসও একই সাতসকাল মানেন। সেরা ধনী, মাইক্রোসফট খ্যাত বিল গেটস্ এর নিত্য সূচনা ভোর ৫টায়। ফেসবুক কর্তা জাকারবার্গ রুটিনের শুরু সকাল ৬টায়। টুইটারের জ্যাক ডরসি ভোর সাড়ে ৫টা থেকে কাজে নামেন। টাটা গ্রুপের রতন টাটা জেগে যান ভোর ৪টায়। রিলায়েন্স গোষ্ঠীর মুকেশ আম্বানির আরম্ভ হয় ভোর ৫টায়। বিরাট কোহলি সকাল ৬টায় প্রাকটিস প্যাড পরা শুরু করেন।
ফোর্বস সাময়িকী সাতসকালে দিন শুরুর কিছু সুফল চিহ্নিত করে প্রকাশ করেছে। যাঁদের ভোরে ওঠার অভ্যাস নেই, তাঁর জেনে নিতে পারেন সেই সুফল।
১। অধিক কাজের সুযোগ
সকালে উঠলে কাজকর্ম সকাল সকাল শুরু করতে পারবেন। কর্মঘণ্টা বেশি পাবেন। কাজের গতি বেড়ে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কোনো ব্যক্তি ভোরে ওঠেন, তখন অন্যদের তুলনায় তিনি বেশি সক্রিয় থাবেন, কাজে সময় নেন কম। কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে, পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অর্জনে অধিক পারদর্শী হন।
২। মানসিক সুস্থতা
সকালে ওঠার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুফল হচ্ছে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি। যখন কেউ সকালে ওঠেন, তখন কাজের তাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যায়। ইতিবাচক বার্তা দিয়ে দিন শুরু হয়। সারা দিন এই ইতিবাচক মনোভাব চলতে থাকে।
৩। ঘুম ভালো হয়
কথায় বলে, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা মানে সকাল সকাল ঘুমাতে যাওয়া। অনিয়মিতভাবে সকালে ওঠার চেয়ে এটি নিয়মের মধ্যে ফেলতে পারলে সবচেয়ে সুবিধা। এতে ঘুম ভালো হয়। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও অভ্যাস হয়ে গেলে দেহঘড়ি ঘুমের নতুন সময় ও সকালে ওঠার বিষয়টি মানিয়ে নেবে।
৪। পরীক্ষার ফল ভালো হয়
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এক গবেষণায় দেখেছেন, যারা সকাল করে ঘুম থেকে ওঠে, তারা দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো ফল করে। ঘুমের মান ভালো হওয়া ও কাজের উৎপাদনশীলতার সঙ্গেও একে যুক্ত করা যায়।
৫। জীবন সুখের হয়
সকালে উঠলে জীবন সুখের হয়। জীবনে ইতিবাচক দিক বাড়ে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের ভোরে ঘুম ভাঙে, তাঁরা বেশি সুখী হন। এই সুখ স্বল্পমেয়াদি নয়, বরং সারাটা জীবন ধরেই সুখ ছুঁয়ে যায়।
এবার একটি কাহিনী বলি এবং একইসাথে সকাল আটটার আগের ছয়টি অভ্যাস থতিয়ে দেখি, যা হয়তো জীবনকে পরিবর্তন করবে। কাহিনীটি হাল এলরড এর। ১৯৯৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর একটি গাড়ী তার গাড়ীকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনাটিতে তার শরীরের এগারোটি হাড় ভেঙ্গে যায় এবং তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। ছয় মিনিট পর পুনরায় তার হার্টবিট শুরু হয়। ছয়দিন পর্যন্ত তিনি কোমায় ছিলেন। সপ্তম দিন তার জ্ঞান ফিরে এবং তার এই অবস্থা দেখে ডাক্তার জানায় সে কখনো চলাফেরা করতে পারবেন না। কিন্তু হাল এলরড জীবনের কাছে হার মানেনি এই ঘটনার কয়েক বছর পর হাল একজন পেশাদার বক্তা, জনপ্রিয় লেখক এবং আলাট্রা মেরাথন দৌড়বিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অনেকটা মৃত্যুর পর তিনি আবার বেঁচে উঠেন এবং বেঁচে উঠার পর ডাক্তারের সকল অনুমানকে মিথ্যে প্রমানিত করে আজ তিনি এই অবস্থানে পৌঁছান। হাল বলেন, এর জন্যে সবচাইতে প্রথমে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
কোমা থেকে উঠার পর তিনি ছয়টি প্রাত্যহিক অভ্যাস করেছিলেন যা তার জীবনকে বদলে দিয়েছিলো। যেগুলো তিনি প্রতিদিন অনুশীলন করতেন। এই সব তিনি শিখেছিলেন বিভিন্ন বই পড়ে এবং অন্যসব সফল মানুষদের কাছ থেকে। হাল এলরড তার সর্বাধিক বিক্রিত বই ‘দ্য মিরাকল মর্নিং’-এ তার এই সব অভ্যাসের কথা বর্ণনা করেন। সেই বই থেকে ভোরের ছয়টি অভ্যাসের কথা তুলে ধরা হচ্ছে, যা হাল প্রতিদিন অনুশীলন করতেন। এই অভ্যাসগুলো অনুসরণ করে চাইলে সফল মানুষে পরিণত হওয়া যায়।
লেখক যখন এগুলো শুরু করেছিলেন তখন তার পনরো হাজার ডলার ধার ছিলো, নিজের বাড়িটিও বিক্রি হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। তিনি একদম স্বাস্থ্যহীন এবং বিষন্ন ছিলেন। এই ছয়টি সকালের অভ্যাস নিয়মিত শুরু করার পর দুমাসের মধ্যে তার উপার্জন দ্বিগুন হয়ে যায়। নিজের বাড়িটি বিক্রির হাত থেকে বাঁচান। কিছুদিন পরে সুস্থ্ হয়ে আলট্রা ম্যারাথন দৌড়বিদ হন এবং একজন সুখী মানুষও হন। সেই ব্যক্তিটি, যাকে ডাক্তার বলেছিলো কখনো চলতে পারবেননা। এসব এতো তাড়াতাড়ি হয়েছিলো যে হাল নিজেই অবাক হয়ে যান। তাই তিনি বইটির নাম রাখলেন ‘মিরাকল মর্নিং’, যার অর্থ দাড়ায় ‘অলৌকিক সকাল’। কারণ তাঁর কাছে এগুলো অলৌকিকই মনে হচ্ছিলো। এবার চলুন সেই সকল অভ্যাসগুলোর কথা বলি, যা অনুসরণ করতে হবে একদম রুটিন মাফিক।
প্রথম অভ্যাসটি হলো ‘নিরবতা’। লেখকের কাছে নিরবতা মানে ধ্যান অথবা প্রার্থনা। বেশিরভাগ মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাজ্যের চিন্তায় মশগুল হয়ে যান। কেউ খবরের কাগজ পড়েন আবার কেউ ফেসবুকিংয়ে ব্যস্ত হয়ে যান। কিন্তু সফল মানুষেরা এগুলো করেন না। তারা সাধারনত সকালে ঘুম থেকে উঠে নিরব থাকেন। মানে ধ্যান, ইয়োগা অথবা প্রার্থনা করেন যা তাদের মস্তিষ্ককে শিথিল করে দিনের ভালো একটা শুরু দেয় এবং মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ কর্মক্ষম করে দেয়। প্রথমে লেখকের মনে হতো মেডিটেশন বা প্রার্থনা একটি ধর্মীয় ব্যাপার মাত্র, যার সাথে সফলতার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি গবেষণা করে এবং সফল মানুষদের জীবনী পড়ে জানতে পারেন মেডিটেশন এমন একটি হাতিয়ার যা সফল মানুষদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, নিজের সাথে কথোপকথন। নিজের সাথে কথা বলা সফলতার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এটি পেশাদার দৌড়বিদ, অভিনেতা এবং সফল উদ্যোক্তারা করে থাকেন। এই কাজটি জীবনের লক্ষ্য লিখেও করা যায়। তিনটি কথা আপনি লিখতে পারেন;
১. আপনি আপনাকে কেমন দেখতে চান?
২. আপনি এই পরিবর্তনগুলো কেনো চান?
৩. এই কাজগুলো করার জন্য আপনি কি কি অঙ্গীকার করছেন?
এই কথাগুলো একটি ডায়েরিতে লিখুন এবং প্রতিদিন সকালে পড়ুন।
তৃতীয়টি হচ্ছে, নিজের কল্পনা শক্তির ব্যবহার। আপনি যে কথোপকথোনগুলো করছেন বা লিখছেন তা অর্জন করার জন্য আপনাকে সেগুলো কল্পনা করতে হবে। ধরুন, আপনি একটি পরীক্ষা দিবেন। কল্পনা করুন আপনি কেমনভাবে প্রস্তুতি নিবেন। কল্পনা করুন আপনি অনেক রাত পর্যন্ত পড়ার টেবিলে বসে বই পড়ছেন, বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন, নোট তৈরি করছেন। অথবা মনে করেন আপনি পিয়ানো বাজানো শিখবেন। আপনি কল্পনা করুন আপনি পিয়ানোর কীবোর্ডে হাত রাখছেন। আপনার প্রিয় গানটি বাজাচ্ছেন। কল্পনা হচ্ছে ছোট ছোট সিঁড়ির মতো এটি আপনাকে সাহায্য করবে সকালের অনুশীলন শেষ হবার পর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সবার প্রথমে করতে। কথপোকথোন এবং কল্পনা শক্তির ব্যবহার আপনার প্রাত্যহিক কাজ সম্পর্কে আপনার ভাবনা বদলে দেবে।
চতুর্থ অভ্যাস হচ্ছে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম। আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু আমরা বেশীরভাগ মানুষই এটিকে এড়িয়ে চলি। ব্যায়াম না করার জন্য আমাদের অনেক বাহানা থাকে তার মধ্যে সবথেকে প্রচলিত বাহানাগুলো হচ্ছে আজও অনেক দেরি হয়ে গেছে, আটটা বেজে গেলো এখন ব্যায়াম করে কি হবে, কাল থেকে শুরু করবো। এই বাহানা থেকে বের হতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। বিশ থেকে একুশদিন একটু কষ্ট করে সকাল সকাল উঠলেই এটি অভ্যাসে পরিণত হবে। সকালে ব্যায়াম করার অনেক বৈজ্ঞানিক উপকারিতা রয়েছে। ব্যায়াম করার ফলে আপনার মস্তিষ্কে বেশি পরিমান অক্সিজেন যায়, চিন্তা অনেক স্বচ্ছ বা পরিস্কার হয়, ভালো বোধ করবেন, সারাদিনের জন্য আপনার কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে। ব্যায়াম করার জন্য লেখক ব্যায়ামাগারে যেতে বলেননি। পার্কে যেতে পারেন, বাসার আশেপাশে কোনো মাঠে অথবা বাসায়ই ব্যায়াম করতে পারেন। কোনো যন্ত্রের দরকার নেই খালিহাতে ব্যায়াম যেমন: দৌড়, বুকডন এবং খালিহাতের অন্যান্য ব্যায়ামগুলো করতে পারেন।
পঞ্চম অভ্যাসটি হচ্ছে পড়াশুনা করা। পড়াশুনা ব্যাক্তিগত উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে ভালো একটি উপায়। প্রতিদিন সকালে অন্তত দশপৃষ্ঠা বই পড়ার চেষ্টা করুন, এই হিসাবে আপনি বছর শেষে তিন হাজার ছয়শত পঞ্চাশ পৃষ্ঠা পড়ে ফেলবেন যেটি প্রায় সতরো আঠারোটি বইয়ের সমান। দেখুন একটি ছোট প্রতিজ্ঞা জীবনে কতো বড় পরিবর্তন আনতে পারে!
ষষ্ঠ এবং শেষ অভ্যাসটি হলো লেখা। প্রতিদিন সকালে কয়েক মিনিট ব্যয় করুন আপনার চিন্তা এবং আবেগগুলো লিখতে। এটি থেকে আপনি প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখবেন। এটিকে ইংরেজীতে ‘মর্নিং পেইজ’ বলে। বাংলায় আমরা ‘ভোরের পত্র’ বলতে পারি। হাল এই পত্রটিকে দুই ভাগে লিখতেন প্রথম ভাগে লিখতেন ‘আজকের শিক্ষা’ অর্থাৎ এখন পর্যন্ত আমি কি কি শিখেছি আর কি কি পেয়েছি এবং দ্বিতীয় ভাগে লিখতেন নতুন পরিকল্পনা অর্থাৎ আরোও নতুন কি শিখতে হবে বা আরো কি করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি হালকে সাহায্য করেছিলো লক্ষ্যে অটুট থাকতে।
এই প্রাত্যহিক কার্যকলাপ অনুসরণ করার জন্য আপনাকে যে কাজটি সর্বপ্রথম করতে হবে তা হচ্ছে ভোরে ঘুম থেকে উঠা। এই সব নিত্যকর্ম সকাল আটটার মধ্যে শেষ করতে হবে। যেমন এই বইটির বিকল্প শিরোনাম হলো ‘সকাল আটটার আগের ছয়টি অভ্যাস যা আপনার জীবনকে পরিবর্তন করবে। যদি আপনি আপনার দিনের শুরুটি ঘড়ির অ্যলার্মের বিরতি দিতে দিতে ঝিমুনি দিয়ে শুরু করেন তাহলে এই রুটিন কাজ করবেনা। এমন করলে আপনি আরো বেশী ক্লান্ত বোধ করবেন। এটি করলে আপনি গভীরভাবে ঘুমাতেও পারবেননা। বরং আপনি নিজের অজান্তেই আপনার অবচেতন মনকে তথ্য দিতে থাকবেন যে আপনি দিনটি শুরুই করতে চান না। যদি আপনি আপনার জীবনকে হ্যা বলতে চান তাহলে অ্যলার্মের বিরতি বাটনকে না বলুন।
বইটির শেষে হাল তার পাঠকদের একটি ত্রিশ দিনের অলৌকিক সকালের প্রতিজ্ঞা করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, একজন দায়িত্বশীল পার্টনার খুঁজে নেন এবং দুজনেই একে অপরের সাথে প্রতিজ্ঞা করুন যে আপনরা দুজনই এই ত্রিশ দিনের প্রতিজ্ঞাটি পালন করবেন। দেখবেন কি হয়। আপনি তিনটি পর্যায় বুঝতে পারবেন। প্রথম দশদিন এই রুটিনটি অনেক কঠিন লাগবে। আপনাকে প্রতিদিন নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তারপরের দশদিন স্বাভাবিক লাগবে এবং শেষ দশদিন থেকে আপনার ভালোলাগা শুরু হবে। আপনি এটি সব সময় করতে চাইবেন। তাই আপনিও এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার জন্য পার্টনার খুঁজুন এবং বদলে ফেলুন আপনার জীবন।
আসুন তাহলে আমরাও স্বামী বিবেকানন্দ-এর মতো বলি, ‘‘ওঠ, জাগো, নিজে জেগে অপরকে জাগাও!’’ অথবা কবি নজরুল-এর ছন্দে চলি, “হয়নি সকাল- তাই বলে কি সকাল হবে না ক? ”, কিংবা “আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?”
লেখক : ফজলুর রহমান. কথাসাহত্যিকি, প্রাবন্ধকি এবং সহকারী রজেস্ট্রিার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বশ্বিবদ্যিালয় (চুয়টে)।