শনিবার ● ১৪ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীতের পিঠা বিক্রীর ধুম
শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীতের পিঠা বিক্রীর ধুম
হাসান আলী,পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: একটা সময় শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্রাম অঞ্চলে পিঠাপুলির উৎসব শুরু হতো। শুধুমাত্র গ্রামের বাড়িতে নয় প্রতিটি বাজারে জমজমাট হয়ে উঠেছে পিঠা বিক্রির ব্যবসা। কুয়াশা মোড়ানো শীতের হিমেল হাওয়ায় ধোঁয়া উঠা পিঠার স্বাদ না নিলে যেন তৃপ্তি মিঠতো না অনেকের। প্রতিদিন সরিষা বাটার ঝাঁজ আর চিতই পিঠা খেতে রাস্তার বিভিন্ন দোকানে ভীড় করতো ক্রেতারা। মৌসুমি এই পিঠার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল পিঠা প্রেমিকদের। ফলে শীতের শুরুতেই চিতইসহ নানা রকম পিঠার ব্যবসা জমে উঠতো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নানা রকমের শীতের পিঠা।
শীতের পিঠার মধ্যে ভাপা পিঠা একটি অন্যতম পিঠা। ভাপা পিঠা আবার হরেক রকম পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। কখনো মিষ্টি ভাপা, কখনো ঝাল ভাপা। খেজুর রস দিয়ে ভাপা পিঠা খেতে বড়ই সুস্বাদু ও মুগ্ধকর। শীত এলেই শহর ও গ্রামীণ হাটবাজারে নানা রকম পিঠা বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে ভাপা পিঠা, তেলের পিঠা ও চিতই পিঠা। এসব পিঠার সমাদর সবখানেই সমানভাবে রয়েছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে শহর ও গ্রামীণ হাট-বাজারে ফুটপাতে শীতের পিঠার ব্যবসা জমে উঠেছে।গ্রাম-শহরে শীতে পিঠা ব্যবসায়ীদের পিঠা বিক্রির হিড়িক পরেছে। ভোর থেকে সকাল এবং বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহর-গ্রামীণ বাজার ও বিভিন্ন জায়গায় চলছে শীতের পিঠা বিক্রির ধুম। শহরের অলিগলিতে রাস্তার আশপাশে পিঠাপুলির ভ্রাম্যমান দোকানও বসে।
পটুয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চলে মেয়ের জামাইয়েরে বাড়িতে তৈরি পিঠা নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। যতই শীত বাড়ে ততই যেন মানুষের পিঠা বানানোর ব্যস্থতা বেড়েই চলত। বাহারি রকমের পিঠা তৈরির উৎসবে আত্মহারা হত সর্বস্তরের মানুষ। এখন কর্মচাঞ্চল্য এই ব্যস্ত জীবনের গর্ভে পিঠা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শীতের সময়ে গ্রামাঞ্চলের প্রতি ঘরেই চিতই, দুধচিতল, পুলি, নকশি, পাটিসাপটা, ভাপা, চুসি, সীম, পাখন, তেলে ভাজা পিঠাসহ হরেক রকমের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন গৃহিণীরা। কালের বিবর্তনে বাড়িতে পিঠা তৈরির সেই উৎসবমুখর আমেজ হারিয়ে। মানুষ ফুটপাতের দোকান থেকে পিঠা কিনে নিজে খাচ্ছেন ও ছেলেমেয়েদেরও খাওয়াচ্ছেন। হতদরিদ্র মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম পন্থা হয়ে ওঠে পিঠা বিক্রি।পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের একাধিক হতদরিদ্র মানুষ পিঠা বিক্রির উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে চালাছে তাদের সংসার। তীব্র কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে মির্জাগঞ্জ উপজেলা সুবিদখালী বাজার এলাকা বিভিন্ন সড়কের পাশে,মোড়েমোড়ে বহু হতদরিদ্র মানুষ পিঠা বিক্রি করছেন। বিকেল থেকে শুরু করে অনেক রাত পর্যন্ত এই পিঠা বিক্রি চলে। এসব পিঠা খাওয়ার জন্য বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ভীড় করতে দেখা যায়। এতে এই সব বিক্রেতার রোজগারও ভালো হয়। এসব পিঠা বিক্রির কাজে পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির গৃহিণীরাও যুক্ত হচ্ছেন তাদের সঙ্গে। পৃথক পৃথক দোকান সাজিয়ে অনেকেই পিঠা বিক্রির কাজ করতে দেখা যায়।
মির্জাগঞ্জে উপজেলায় বাজার কয়েকটি পিঠার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, চিতই, ভাপা পিঠা দিয়ে সাজানো রয়েছে রাস্তার পাশে দোকানগুলো। আর তাতে ভীড় করছেন বিভিন্ন পেশার পিঠা প্রেমিকরা। চিতই পিঠার সঙ্গে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি ভর্তা (সুটকিভর্তা, সরিষা ভর্তা, মরিচের ভর্তা, ধনিয়া পাতা ভর্তা) ইত্যদি। বিক্রেতারা পিঠা গুলো বানাতে বানাতেই ক্রেতারা গরম পিঠা কিনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েই মজা করে খাচ্ছে। প্রতিটি চিতই পিঠা বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা করে।ভাপা পিঠার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, গুড়, নারকেল, সিদ্ধ চালের গুঁড়া, শুকনা মরিচ, গুড়া আধা ইত্যাদি।
পিঠা বিক্রেতা জাহাংগির জানান, আগে শীত আসলে গ্রামের মহিলারা ভোরে ঘুম থেকে উঠে পিঠা বানাতে বসত। তখন পরিবারের সবাই মিলে মিশে পরিবারের মধ্যে চলত পিঠা খাওয়ার উৎসব। কিন্তু এখন তা আর হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন যাত্রা বদলে যাচ্ছে অনেক। কালের বিবর্তনে সঙ্গে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে পিঠা পাগল মানুষ জন্য বাজারে বিক্রিকৃত পিঠার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। শীতের আগমনে দিন মজুরি ছেড়ে অনেকেই ফুটপাতে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন। পিঠা বানানোর কাজে গৃহিণীরা সাহায্য করে থাকেন। রান্না বান্নার কাজ সেরে গৃহিণীরা পিঠার চাল কুটে গুঁড়ো করে বিকেলে দোকান সাজিয়ে বসেন।তিনি আরও জানান, প্রতিদিন হাজার টাকার মত পিঠা বিক্রয় করতে পারেন তিনি। মূলত সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি হলেও তুলনামূলক সন্ধ্যার পর পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। সব মিলিয়ে ১ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।
মির্জাগঞ্জের পিঠা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর জানান, বছরের অন্য সময় অন্যান্য পেশার কাজ করলেও এই সময়টা পিঠা ব্যবসা করি। ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা বিক্রি করতে পারি। তবে লাভ লোকসান বুঝিনা আমার সংসার কোন রকম চলছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিঠার চাহিদাও বাড়ছে বলে জানান তিনি। এক সময় শীতে শুরুতে বাড়িতে গৃহিণীরা বাহারি পিঠা তৈরি করতেন। কিন্তু এখন আর নানা ঝামেলায় বাড়িতে আর পিঠা বানানো হয় না। সে কারণে বাজারেএসব দোকান থেকে ভাপা পিঠা কিনে খেয়েছেন। পরিবারের জন্য ও নিয়ে যাচ্ছি।