রবিবার ● ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » মোটরসাইকেল চালক শান্ত’র হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মাটিরাঙ্গায় বিক্ষুদ্ধ জনতার সড়ক অবরোধ : পরিস্থিতি স্বাভাবিক
মোটরসাইকেল চালক শান্ত’র হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মাটিরাঙ্গায় বিক্ষুদ্ধ জনতার সড়ক অবরোধ : পরিস্থিতি স্বাভাবিক
মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি :: (২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ১০.১০মিঃ) খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার নিখোঁজ মোটর সাইকেল চালক মো: আজিজুল হাকিম (শান্ত)”র লাশ উদ্ধারের পর বিক্ষুদ্ধ জনতা খাগড়াছড়ি- চট্টগ্রাম,খাগড়াছড়ি-ঢাকা,সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়৷
এ সময় মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ীরা সকল দোকানপাট বন্ধ করে জনতার সাথে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে রাজপথে নেমে আসে ৷
জানা যায়,১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি থেকে মাটিরাঙ্গা আসার সময় সে নিখোঁজ হয় ৷ রাত ১০টা পর্যন্ত তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন খোলা থাকলেও পরে আর তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি ৷ নিখোঁজের ৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর রবিবার ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার দিকে মাটিরাঙ্গা রিচাং ঝর্ণার সল্ট প্লান্টেশন এলাকায় তার জবাই করা লাশের সন্ধান পাওয়া যায় ৷ প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে অপহরণের দিনই তাকে হত্যা করে থাকতে পারে, হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্তরা ৷ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে ৷
এ ব্যাপারে খগেন্দ্র ত্রিপুরা নামের একজনকে বর্তমানে জিজ্ঞাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে আটক রাখা হয়েছে ৷
মাটিরাঙ্গার উপজেলা চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, ইউএনও বিএম মশিউর রহমান, মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন টিটো,ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন এবং বিক্ষুদ্ধ জনতাকে শান্ত থাকার অনুরোধ করলেও এলাকাবাসী অনুরোধ উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে ৷ বিক্ষুদ্ধ জনতা দাবী করছে যতদিন শান্ত’র হত্যাকারীদের সনাক্ত করে ফাসি দেয়া না হবে ততদিন তারা এই অবরোধ কিংবা হরতালসহ বৃহত্তর আন্দোলন চালিয়ে যাবে ৷ স্থানীয় বাঙালীরা এ ঘটনার জন্য উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের দায়ী করলেও পুলিশ বলছে তদন্ত ছাড়া এ হত্যাকান্ডে কারা জড়িত তা বলা সম্ভব নয়৷
এদিকে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলকাস আল মামুন বলেন, একের পর এক নিরীহ বাঙালীদের অপহরণ করছে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা ৷ অথচ স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন নির্বিকার রয়েছে ৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রধারী পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা অপহরণ করার পর মুক্তিপণ ছাড়া পুলিশ প্রশাসন কাউকে উদ্ধার করতে পেরেছে আজ পর্যন্ত এমন দৃষ্টান্ত একটিও নেই ৷ তিনি আরও বলেন,পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তারা সব সময় বলে,কেউ মামলা করেনি বলে তারা কিছু করতে পারছে না ৷
অথচ স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে না পারায় বাঙালীরা অপহৃত স্বজনদের প্রাণ বাঁচাতে মামলা করতে ভয় পায় ৷ এই কারণ দেখিয়ে প্রশাসনও গা ছাড়া দিয়ে থাকে৷ কিন্তু এভাবে চলতে পারে না ৷ অচিরেই অপহৃতদের উদ্ধার না করলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল প্রগতিশীল ও সচেতন নাগরিকদের ঐকবদ্ধ করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে হুশিয়ারী দেয় ৷
এ্ দিকে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং প্রশাসনের অনুকুলে আনতে উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ ও স্থানীয় সেনাবাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা সকলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল,প্রতিবাদ কর্মসুচিসহ সমাবেশে জনতার অবরোধ তুলে নেয়ার আহবান জানিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়,মোটরসাইকেল চালক সমিতির প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে ৷
এ জন্যে তারা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করতে মোটরসাইকেল চালক সমিতির একটি প্রতিনিধি দলকে উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যাওয়ার আহবান জানান ৷ আপাততঃ চলমান সড়ক অবরোধ কর্মসূচীকে স্থগিত রাখার বিষয়ে মোটরসাইকেল চালক সমিতি ও স্থানীয় সাধারন জনতার পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর আমরা পূনরায় পরবর্তী কর্মসুচী কি হবে তা সকলকে জানাবো ৷
এ সময় মাটিরাঙ্গা জোন কমান্ডার,উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা,পৌর মেয়র,সহকারী পুলিশ সুপার (রামগড় সার্কেল),ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাটিরাঙ্গা থানা,মোটরসাইকেল চালক সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক,স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ৷
বিকাল ৩টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালক শান্ত’র হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মাটিরাঙ্গায় বিক্ষুদ্ধ জনতার সড়ক অবরোধসহ অন্যান্য কর্মসুচি পালন করেছে। রাত ১০টা পর্যন্ত মাটিরাঙ্গা উপজেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম’র প্রতিনিধি অন্তর মাহামুদ জানান।