সোমবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » মুক্তিযোদ্ধা মহসিন সর্দার আর নেই
মুক্তিযোদ্ধা মহসিন সর্দার আর নেই
আলীকদম প্রতিনিধি :: (২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : সন্ধ্যা ৭.৫০মিঃ)এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অজানার দেশে পাড়ি জমালেন বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম উপজেলায় বসবাসরত আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা ৷ বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় বসবসরত বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম মহসিন সর্দার গত শুক্রবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন ৷ মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর ৷ তিনি গোপালগঞ্জ জেলায় সর্দার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন ৷ তার বাবার নাম মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মায়ের নাম মৃত মরিয়ম বেগম ৷ গতকাল বিকাল পাঁচটায় আলীকদম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করার পর একই মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়৷ পরে তাকে বাগান পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয় ৷
তার মৃতু্যতে গভির শোক প্রকাশ করেন আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-আমিন, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিনা আক্তার রোকসানা৷ মৃত মহসিন সর্দার এর শ্যালক মোঃ রফিক জানান, রাতে এশার নামাজ আদায় করে বিশ্রাম নিতে যায় ৷ ওই সময় হঠাত্ করে শ্বাস কষ্ট শুরু হলে তাকে আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তার কিছু সময় পর তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৷
এমাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম আলীকদম প্রতিনিধি হাসান মাহমুদ এর সাথে চা খেতে খেতে মুক্তিযোদ্ধা মহসিন সর্দার স্মৃতিচারণ করলেন তার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের ৷ তার স্মৃতি থেকে কয়েকটি কথা তুলে ধরা হল- “ইচ্ছা ছিল অনেক পড়াশুনা করব ৷ নিজেকে মানুষের মত মানুষ করব ৷ কিন্তু মানুষ নিজেকে কতটা করতে পেরেছি জানিনা তবে পড়াশুনা আর করা হলনা ৷ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বর্জকন্ঠের যুদ্ধের আহবানে আমি বাধন হারা হয়ে গেলাম ৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা মা, ভাই বোন সব কিছুর মায়া ত্যাগ করে ছুটে গেলাম ভারতে হরিনা ক্যাম্পে ৷ সেখান থেকে তিন মাসের প্রশিক্ষন শেষে দেশে ফিরে দুদ্ধে অংশগ্রহন করি”৷ তবে যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার কথা তিনি এভাবে বর্ণনা করলেন যে, “দীর্ঘ সাড়ে নয় মাস যুদ্ধের পর যখন আমি বাড়িতে ফিরি, কেউই জানতনা যে, আমি বাড়িতে আসছি৷ আমার হাতের বন্দুক দিয়ে একটি ব্ল্যাংক ফায়ার করেই আমি সবাইকে আমার বাড়ি ফেরার কথা জানান দিই”৷
এদিকে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, মহসিন মামা আমার সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি এবং আমার খুব আপনজন ছিলেন৷ আমার ছোটবেলা থেকে তাকে আমি একজন অত্যন্ত সত্ মানুষ ও দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ ব্যাক্তি হিসেবে দেখে আসছি ৷ মহসিন মামাদের মত লোকদের মহান ত্যেগের ফসল আজকের এই বাংলাদেশ ৷ আমি তার শোকাহত পরিবারে প্রতি সমবেদনা ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি ৷ তিনি দেশের সমন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করতে গিয়ে আলীকদম উপজেলা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধ আবুল কালামকেও গভির শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেন ৷
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার সর্দার বাড়িত জন্ম নিয়ে শৈসব কৈসর পার করলেন জন্মস্থানের মাটিতেই৷ প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি কাশিয়ানি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে মেট্রিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ বেজে উঠলো যুদ্ধের ধামামা ৷ নিজের জীবনকে উত্সর্গ করে দিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্ য৷ দীর্ঘ সাড়ে নয় মাস যুদ্ধ করে আমাদেরকে দিয়েছেন লাল সবুজের একটি পতাকা আর একটি স্বাধীন ভুখন্ডের মানচিত্র৷ “আমরা তোমাদের উত্তরসূরী ৷ এমাটির মান অক্ষুন্য রাখা আমাদের উপর তোমাদের অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব”৷
তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ৷