শনিবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » বান্দরবানে কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু
বান্দরবানে কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু
বান্দরবান প্রতিনিধি :: স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্বত্য বান্দরবানের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কঠিন চীবরদান উৎসব শুরু হয়েছে। শনিবার ২৮ নভেম্বর সকালে শহরের উজানীপাড়া রাজগুরু বিহারে ৩ দিন ব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়। এই উৎসবকে ঘিরে সকালে বিহার কমিটির ব্যানারে উজানীপাড়া, মধ্যমপাড়া, জাদীপাড়া’সহ আশপাশের এলাকার বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী-পুরুষেরা একটি শোভাযাত্রা বের করে। বোমাং সার্কেল চীফ রাজা উচপ্রু চৌধুরী নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি গুরুত্বপুর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে বিহারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে ধর্মীয় প্রাথর্ণায় অংশ নেয় বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষ।
মহাপূণ্যময় এ উৎসবে পাহাড়ের বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারীরা মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় একদিনের মধ্যে তুলা থেকে বিশেষ কায়দায় বানানো চরকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সুতা তৈরী করে। আর নতুন সুতায় রং লাগিয়ে কাপড় বুনে সেলাই বিহীন চীবর (কাপড়) তৈরি করে বৌদ্ধধর্মীয় গুরু ভিক্ষুদের পরিধানের জন্য। চব্বিশ ঘন্টায় তৈরি করা চীবর কাপড় উৎসবের পরেরদিন বিহারের ধর্মীয় গুরু ভিক্ষুদের মাঝে দানের কঠিন এ ব্রতের নামই হচ্ছে কঠিন চীবর দানোৎসব। প্রচলিত আছে গৌতম বুদ্ধের মহা পূণ্যবতী নারী বিশাখা এই কঠিন ব্রতী পালন করে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতব বুদ্ধকে চীবর দান করেছিলেন। তার-ই সূত্র ধরে প্রতিবছর বান্দরবান জেলায়ও বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ব্যাপক আয়োজনে দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব ধর্মীয়ভাবে পালন করে আসছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বী হ্লাচিং নু মারমা, লাবণী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, জীবনে একবারও যদি না ঘুমিয়ে রাত জেগে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে, নতুন সুতায় রং লাগিয়ে কাপড় বুনে চীবর তৈরি করে ভিক্ষুদের পরিধানের জন্য চীবর দান করতে পারি। তাহলে পরবর্তীতে বুদ্ধ জিনি আবির্ভাব হবেন, আগামী জনমে আমরা তারই পূন্যার্থী হবো। কঠিন এ ব্রতের নাম হচ্ছে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাটিং মারমা জানান, আগামী ৩০ নভেম্বর পিন্ড দানের মাধ্যমে বান্দরবানে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব শেষ হবে। শেষদিনে বান্দরবান কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের প্রধান ভিক্ষু (ভান্তের) নেতৃত্বে শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু খালি পায়ে লাইন ধরে পায়ে হেটে হেটে উজানীপাড়া-মধ্যমপাড়া’সহ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী অধ্যুষিত এলাকাগুলো প্রাতভ্রমণ করে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছ থেকে ছোয়াইং (খাবার), চীবর কাপড়, মোমবাতিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করবেন।