শুক্রবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » নামের মিল থাকায় ৫ মাস ধরে জেলে দিনমজুর নুরুল আমিন
নামের মিল থাকায় ৫ মাস ধরে জেলে দিনমজুর নুরুল আমিন
বান্দরবান প্রতিনিধি :: বান্দরবানে শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তি মামলার আসামী না হয়েও ৫ মাস ধরে জেল কাটছেন। তবে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত নয় ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য মামলার প্রকৃত আসামিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানাগেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, এ বছরের ২৮ এপ্রিল রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের চা-বাগান রাস্তার মাথা এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ ৩০ হাজার ইয়াবা’সহ মোহাম্মদ রশিদ প্রকাশ খোরশেদ (৩০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছিলো। জিজ্ঞাসাবাদে সে ইয়াবা ব্যবসায় নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন, মো. বেলাল হোসেন, বশির আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান জড়িত বলে তথ্য দেন। পরে পুলিশ আটক রশিদকে নিয়ে ইয়াবা উদ্ধারে গেলে দুপক্ষের গুলাগুলিতে তিন পুলিশ সদস্য আহত এবং রশিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে রামু থানায় মাদক, অস্ত্র ও হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় পুলিশ নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন’সহ কয়েকজন আসামীকে পলাতক দেখান। তবে ওই এজাহারে নুরুল আমিনের পিতার নাম অজ্ঞাত ছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উক্ত মামলায় শুধুমাত্র নামের মিল ও মামলার এজাহারে পিতার নাম অজ্ঞাত লেখা থাকায় গত ২১ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের দায়ের করা মাদক মামলার আসামি হিসেবে তাকে নুরুল আমিন’কে আটক করা হয়েছিল। তার গ্রামের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জারুলিয়াছড়ি গ্রামে। বর্তমানে আসামী না হয়েও কক্সবাজার জেলা কারাগারে কারাভোগ করছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, আটক দুই নুরুল আমিন একই গ্রামের বাসিন্দা। দুজনের পিতার নাম যথাক্রমে নুরুজ্জামান ও মনিরুজ্জামান। প্রথমে আটক নুরুল আমিন নিরপরাধ বলে পরিবার দাবী করেছে। এই বিষয়ে ডিবি পুলিশকে তিনি একটি প্রত্যয়নও দিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী স্বীকার করেন, গ্রেপ্তার হয়ে কারান্তরীণ ব্যক্তি প্রকৃত আসামী নয়। গত ৯ ডিসেম্বর রাতে প্রকৃত আসামী নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন’কে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
নিরাপরাদ নুরুল আমিনের স্ত্রী মোমেনা আক্তার বলেন, তার স্বামী কখনো মাদক কারবারে জড়িত ছিলোনা। দিনমজুরের কাজ করে তিনি সংসার চালান। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি ও কয়েকজন নিকটাত্মীয় তার স্বামীকে অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। গত ২১ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ মাদক মামলার আসামি হিসেবে তার স্বামী দিনমজুর নুরুল আমিন’কে আটক করে। ছাব্বিশ দিন হাজতবাসের পর আদালত জামিন মঞ্জুর করলেও কক্সবাজার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অপর একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ফলে প্রায় পাচঁ মাস ধরে কারাভোগ করছেন নুরুল আমিন। তবে গত ৯ ডিসেম্বর কক্সবাজার ডিবি পুলিশ মামলার প্রকৃত আসামি নুরুল আমিন’কে আটক করেছে বলে শোনেছি।
আইনজীবি শামসুল আলম জানান, আটকের ২৬ দিনের মাথায় আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু কক্সবাজার ডিবির একটি মামলায় তাকে শোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়। ডিবি পুলিশের মামলার এজাহারে প্রকৃত অপরাধী নুরুল আমিনের পিতা অজ্ঞাত দেখানো হয়েছিলো। এই কারণেই হয়তো বিনাঅপরাধে দিনমজুর নুরুল আমিন এখনো কারাগারে রয়েছেন।
তবে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, নির্ভরযোগ্য তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে নুরুল আমিন নামে এক আসামীকে আটক করা হয়েছিল। সে নিজের অপরাধের বিষয়েও স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এখানে আসামী আটকে পুলিশের কোনো ভুল নেই। তবে ডিবি কর্তৃক আটক নুরুল আমিনের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
স্থানীয় সূত্রমতে, মামলার প্রকৃত আসামী এলাকায় নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন নামে পরিচিত। রোহিঙ্গা হলেও শ্বশুর মনিরুজ্জামান ও শাশুড়ি আমিনা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি জন্মনিবন্ধন নিয়েছেন। এলাকায় সে মাদক চোরাকারবারী হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে মাদক চোরাকারবারী নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন মনে করে মিয়ানমারের কিছু উপজাতী এক বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। আইনশৃংখলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও সে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল। নানা অভিযোগের পরও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় নুরুল আমিন এতোদিন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছে।