শুক্রবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » পাবনা » পাবনায় ট্রাকচাপায় অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
পাবনায় ট্রাকচাপায় অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত
মো. নূরুল ইসলাম, পাবনা জেলা প্রতিনিধি :: পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ট্রাকচাপায় অটোরিকশার তিন আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো দুই জন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আজ ১৮ ডিসেম্বর দুপুরের পর উপজেলার রাঙ্গালিয়া লিংক রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ইমন হোসেন (১৬), এমরান হোসেন (১৮) এরা আপন দুই ভাই। তারা চরভাঙ্গুড়া গ্রামের আ: রশিদ এর ছেলে। অপরজন হলেন চরভাঙ্গুড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে ছুম্মা খাতুন (১২)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অটোবাইকে চড়ে চরভাঙ্গুড়া থেকে হাটগ্রামে দাওয়াত খাওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে টেবুনিয়া-বাঘাবাড়ি সড়কের রাঙ্গালিয়া লিংক রোডে তাদেরকে একটি দ্রুতগামী ট্রাক চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৩ জন নিহত হন।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চাটমোহরের ভার্মি কম্পোস্ট যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়
পাবনা :: পাবনার চাটমোহরে দীর্ঘ দিন যাবত উৎপাদিত হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট। চাটমোহর এলাকার মানুষ ভার্মি কম্পোস্টের গুনাগুন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ায় এ এলাকার কিছু কৃষক ইতিমধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার শুরু করেছেন। আশার কথা চাটমোহরে উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট বর্তমান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
সরেজমিন চাটমোহরের মথুরাপুর ইউনিয়নের ইচাখালী গ্রামে গেলে চোখে পরে, তিন বিঘা জমির উপর ৫ জন উদ্যোক্তা মিলে গড়ে তোলা বিশাল খামার প্রজ্ঞা এগ্রো এন্টার প্রাইজ। প্রায় শতাধিক গরু পালনের পাশাপাশি এ খামারে একটি টিনশেড ঘড়ে ২২ টি হাউজে তৈরী করা হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট। বর্তমান ১২জন শ্রমিক কাজ করছেন এ খামারে। এ খামারের অংশীদার আবুল কালাম আজাদ জানান, আমরা ২০১৫ সালে ভার্মি কম্পোস্ট প্রজেক্ট শুরু করি। বর্তমানে ১ টি শেডে ২২ টি বেডে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন করছি। খুলনা, মেহেরপুর, দিনাজপুর থেকে থাই,অষ্ট্রেলিয়ান, আর্ফ্রিকান কেঁচো সংগ্রহ করি। প্রথমে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে কেঁচো কিনি। গোবর তিন মাস পঁচিয়ে গন্ধমুক্ত করি। কেঁচোর খাদ্য হিসাবে এ গন্ধমুক্ত গোবর বেডে দেই। পাঁচ-সাত দিন পর পর গোবর উল্টে পাল্টে দিতে হয়। এর পর পরিমান মতো পানি দেই। ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিনের মধ্যে কম্পোষ্ট সার প্রস্তুত হয়ে যায়। সেই কম্পোষ্ট সার ঢেলে কেঁচো আলাদা করে ফের বেডে দিয়ে দেই। তবে সাত দিন পর পর গোবর ঠিক মত উল্টে পাল্টে দিলে পুরো বেডের সারই একসাথে তুলে নেওয়া যায়। ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদনে আমরা নিজেদের খামারের গোবর ব্যবহার করি। প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১৫৪ মণ ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন করি। স্থানীয় ভাবে খোলা ভার্মি কম্পোষ্ট ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি । ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৫ টাকা কেজি দরে ভার্মি কম্পোষ্ট বিক্রি করি। বিশেষত নার্সারী মালিকেরাই এই ভার্মি কমপোষ্টের প্রধান ক্রেতা। তারা কিনে নিজেরা ব্যবহার করেন এবং পাশাপাশি বিক্রি ও করেন।
তিনি আরো জানান, অষ্ট্রেলিয়ান কেচো একটু বেশি মোটা হওয়ায় ওজনে বেশি হয়। কেঁচো প্রাকৃতিক ভাবে শীতকালে ডিম দেয়। প্রতিটি ডিম থেকে পাঁচ ছয়টি কেঁচো হয়। পঁচিশ থেকে আঠাশ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। কম্পোষ্ট সংগ্রহের সময় এর মধ্যে কোঁচোর ডিম থাকলে সেগুলি চালনার সাহায্যে আলাদা করে অন্য কোন হাউজের নিচে কাঁচা গোবর দিয়ে তার উপর রাখা হয়। একে বারে উপরে ও কাঁচা গোবর দিয়ে পেষ্টিং করে দেয়া হয়। হাউজের আকার ভেদে এক একটি হাউজে দশ মনের মতো শোধন করা গোবর দিতে হয়। একটি হাউজ থেকে প্রতিমাসে প্রায় সাত মন ভার্মি কম্পোষ্ট পাওয়া যায় যার দাম প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। সচেতনতার অভাবে এবং ভার্মি কম্পোষ্ট এর গুনাগুন সম্পর্কে না জানায় এ এলাকার অনেক কৃষক এখনো ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেননা।
শ্রমিকেরা জানান, বেশি গরমে ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পানি স্প্রে করতে হয়। বৃষ্টির সময় হাউজে কখনো কখনো পিঁপড়া ও ডাই (বড় কালো পিঁপড়া) উঠে কেঁচোর ক্ষতি করতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হয়। এছাড়া ইদুর, চিকা, ব্যাঙ কেঁচোর বড় শত্রু।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ.মাসুম বিল্লাহ জানান, এপিজেনিক এবং এন্ড্রোজেনিক জাতের লাল কেঁচোর মাধ্যমে গরু মহিষের গোবর, সবজির উচ্ছিষ্টাংশ, আবর্জনা,লতাপাতা, কাগজ, কচুরীপানা এমনকি কলাগাছ সহযোগেও ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করা যায়। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে এবং জৈব সার হিসেবে ফসলে ও গাছে এ কম্পোস্ট ব্যবহার করা যায়। ভার্মি কম্পোস্টে গাছের প্রয়োজনীয় ১৬ টি খাদ্য উপাদান থাকায় তা ফসলের পুষ্টিমান বাড়িয়ে দেয়। এটি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে জমি পানি কম শোষণ করে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। মাটির পি এইচ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ভার্মি কম্পোস্ট মাটিতে কেঁচোর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। যেহেতু কেঁচো মাটির অনুজীবগুলোকে কর্মক্ষম করে সেহেতু ভার্মি কম্পোস্ট উদ্ভিদের জন্য উপযোগি। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে উদ্ভিদে রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব ও কমে যায়। ভার্মি কম্পোস্ট মাটির ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক গুনাগুন বৃদ্ধি করে। বর্তমান চাটমোহরের প্রায় তিন’শ জন কৃষক ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন বলেও জানান তিনি।
গীতিকার ইকবাল কবীর রনজু’র লেখা গান হতে পারে বাংলা সাহিত্যের অমূল্য নিদর্শন
পাবনা :: বর্তমান সময়ে পাবনার যে সমস্ত গীতিকার প্রায়শই গান লিখে চলছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ইকবাল কবীর রনজু। পেশায় তিনি একজন কলেজ শিক্ষক। করেন সাংবাদিকতাও। অবসর সময়ে ব্যস্ত থাকেন লেখা লেখি নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন নিয়েও তিনটি গান লিখেছেন তিনি। এ গানগুলো পরিণত হতে পারে কালজয়ী গানে। এ গানগুলো ন্যাশনাল আর্কাইভস এ সংরক্ষণের জন্য পাঠিয়েছেন তিনি।
বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে তিনি লিখেছেন এমন মধুর কথা। মুজিব মানে বাংলাদেশ মুজিব মানে অপার অশেষ/ মুজিব মানে সূতোয় গাঁথা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ/ মুজিব মানে স্বাধীনতা লাল সবুজের ভাটির দেশ/ মুজিব মানে বিশ^ বন্ধু গর্বিত এ সোনার দেশ ॥ এ কথাগুলো তার একটি গানের প্রথম চার চরণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা তার অপর একটি গানের প্রথম চার চরণ এমন-তুমি এই মাটিতেই ঘুমিয়ে আছো কিংবদন্তী পিতা/ যে মাটির সঙ্গে তোমার ছিল নিবিড় সখ্যতা/ তুমি যাওগো দেখে বুকে আগলে রেখে/ মানুষ তোমায় করছে স্মরণ কাঁদে বঙ্গমাতা/ তুমি এই মাটিতেই ঘুমিয়ে আছো পিতা ॥ শেখ মুজিবুর রহমান যে বিশে^র একজন বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব তার প্রমান মেলে ইকবাল কবীর রনজুর লেখা গানের নি¤েœাক্ত চরণগুলোতে-তুমি গান্ধিজী ম্যান্ডেলা প্রতিচ্ছবি লেনিনের/ তুমি হক ভাসানী আর প্রেরণা ক্ষুদিরামের/ তুমি মুক্তির বাতিঘর কাটালে অন্ধকার বাংলা মায়ের/ তুমি হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ আর খৃষ্টের ॥ গানগুলো সুর করেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গীত শিল্পী বিএইচ সুসান।
প্রচলিত ধারায় লেখা শুরু করলেও তার লেখার ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে ব্যতিক্রমি কিছু গান। এর জন্য প্রচুর অধ্যয়ন ও করতে হয়েছে তাকে। আধুনিক বাংলা গানে দু-একটি বাগধারা বা প্রবাদ প্রবচনের ব্যবহার পরিলক্ষিত হলেও ইকবাল কবীর রনজু তার লেখা কিছু গানে পনেরো থেকে আঠারোটি পর্যন্ত বাগধারা/প্রবাদ প্রবচনের ব্যবহার করেছেন। পুরো গানই যেন কতগুলো বাগধারা বা প্রবাদ প্রবচনের সমষ্টি। অন্তমিল, ছন্দমিলও রাখতে হয়েছে তাকে। এক একটি গানে পনেরো ষোলটি প্রবাদ প্রবচনের ব্যবহার করতে পারাটা সত্যিই অবাক ব্যাপার।
বাগধারা ব্যবহার করে লেখা তার একটি গানের প্রথম চার চরণ এমন-দুধে ভাতে আছো তুমি তোমার চাঁদের হাটে/ আমার এখন অকুল পাথার কষ্টে যে দিন কাটে/ তোমার চোখের মনি থেকে চোখের বালি হলাম/ অষ্টরম্ভা আমায় দিয়ে তুমি কাটাচ্ছ বেশ বটে ॥ বাগধারা ব্যবহার করে লেখা তার অপর একটি গানের প্রথম চার চরণ এমন-আমার কাছে তুমি ঈদের চাঁদ/ আট কপালে এই আমাকে দিলেনাতো মন/ অমৃতে অরুচী তোমার চাইছোনা মুখ তুলে/ একি আমার ললাটের লিখন ॥
প্রবাদ প্রবচন ব্যবহার করে লেখা ইকবাল কবীর রনজুর একটি গানের প্রথম চার চরণ-না বুঝে হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলো না/ গোড়া কেটে আগায় তুমি পানি ঢেলো না/ গরিবের ঘোড়া রোগ ধরেছে বলে/ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা তুমি দিওনা ॥ প্রবাদ প্রবচন ব্যবহার করে লেখা তার অপর একটি গানের প্রথম চরণ গুলো-আমার মতো বোকার ফসল যদি পোকায় খায়/ আমি কি করে করবো পাশ অগ্নি পরীক্ষায়/ আমি নাকি সরকারে খাই মসজিদে ঘুমাই/ জ্বলছি আর জ্বলবো কতো রাবণের চিতায় ॥
এ গানগুলো ছাড়াও প্রেম,বিরহ,মানবিকতা, আধ্যাত্মিক, দেশাত্মবোধক, পল্লীগীতিসহ প্রায় চার শতাধিক গান লিখেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকা ভূক্ত এই গুনী গীতিকার ইকবাল কবীর রনজু। পাবনার চাটমোহরের দোলং গ্রামে তার বসবাস। চাটমোহর উপজেলাধীন মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজের দর্শন বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
গান গুলো প্রসঙ্গে ইকবাল কবীর রনজু জানান, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার জীবন দর্শন ও মানবতাবাদ সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌছাতে তাকে নিয়ে তিনটি গান লিখেছি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও গন্থাগার অধিদপ্তরের আরকাইভসে সংরক্ষণের জন্য গানগুলো পাঠানো হলেও এখনও কোথাও থেকে কোন সাড়া পাইনি। দেশ/বিদেশের নামি দামি শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ ও নেই আমার। যারা গানগুলো শুনেছেন তারা সবাই বলছেন গানগুলো ভাল হয়েছে। এ গানগুলো ধারণ করে ও ভিডিও চিত্র ধারণ করে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করা হলে তা অমর, কালজয়ী গানেও পরিণত হতে পারে। এ গান শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন দর্শনকে আরো বেশি বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী।” পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, “বাগধারা ও প্রবাদ প্রবচন বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। বাংলা গানে দু একটি বাগধারার ব্যবহার পরিলক্ষিত হলেও আমি এক একটি গানে পনেরো থেকে বিশটি বাগধারা/প্রবাদ প্রবচন ব্যবহার করেছি। আমার বিশ্বাস বাংলা গানের ইতিহাসে অন্য কোন গীতিকার এতো অধিক সংখ্যক বাগধারা/প্রবাদ প্রবচন ব্যবহার করেন নি তাদের গানে। সে ক্ষেত্রে আমার লেখা গানগুলো হতে পারে বাংলা সাহিত্যের অমূল্য নিদর্শন।”