মঙ্গলবার ● ২৯ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » শিরোনাম » হকারমুক্ত হলো সিলেটের রাস্তাঘাট
হকারমুক্ত হলো সিলেটের রাস্তাঘাট
সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় সিলেট নগরীর ফুটপাত ও রাস্থাঘাট আপাদত হকারমুক্ত হলেও তা কতদিন স্থায়ী হয় তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা রয়েছে। কেননা অনেকই মনে করছেন অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে দিন দিন ভোগান্তি বাড়ছে নগরবাসীর। আর এই ভোগান্তি কমাতে নগরীর লালদিঘীর পাড় খালি মাঠে হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তথাপিও দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় নগরীতে হাঁটাচলার পথ কিছুটা হলেও মুক্ত হয়েছে।
গত দিন-চারেক থেকে সিলেটের রাস্তায় হকার তেমন একটা নেই। সব হকার এখন লালদিঘীর পাড় খালি মাঠে। শুধু হকারই নয়, ভ্রাম্যমাণ মাছ-পান-তরকারি বিক্রেতাও এখন সেই লালদিঘীর পাড় খালি মাঠে ঠাই নিয়েছে। ফলে এক মাঠেই মিলছে সবধরনের পণ্য। সিটি কর্পোরেশনও ক্রেতাদের সুবিধার্থে পণ্য অনুযায়ী সারিতে লাগিয়ে দিয়েছে আলাদা নামের সাইনবোর্ড। যেখানে নির্দেশনা অনুযায়ী ভেতরে প্রবেশ করলেও পেয়ে যাবেন আপনার প্রয়োজনীয় সকল পণ্য।
এর আগে সিলেট নগরীর ভ্রাম্যমাণ হকারদের স্থায়ী ঠিকানা করে দিতে গত ১৬ ডিসেম্বর বুধবার থেকে কাজ শুরু করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। সিলেট মহানগর পুলিশের সহায়তায় নগর ভবনের পেছনের (লালদিঘীর পাড়স্থ) খালি মাঠে এক হাজারের অধিক হকারকে পুনর্বাসন করা হয়। তবে মাঠে আস-যাওয়ার পর্যাপ্ত রাস্তা, খানাখন্দে ভরা লালদিঘীর খালি মাঠে যেতে অনীহা অনেক অনেক হকারের। তাছাড়া নতুন অবস্থায় ব্যবসাও মন্দা।
লালদিঘীর মাঠে অবস্থান করা সবজি ব্যবসায়ী হকার মো. আমির উদ্দিন (৪৫) বলেন, লালদিঘীর পাড় মাঠে দোকানের সারিগুলো পৃথক সাইনবোর্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে। এতে সহজেই জানা যাচ্ছে কোনো সারিতে কি ধরণের পণ্য পাওয়া যাবে। তাতে করে অযথা ঘোরাঘুরির প্রয়োজন পড়বে না।
তিনি আরো বলেন, সিসিকের পক্ষে থেকে ৩ ফুট বাই ৭ ফুটের দোকান দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন অবস্থায় এখানে ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা কম। বেচাকেনাও তেমন নাই। মাঠের অবস্থা ভালো না। কোথাও গর্ত আবার কোথাও উঁচু মাঠি। এখানে আসা-যাওয়ার রাস্তাও পর্যাপ্ত নয়। এখনও অনেকেই জানেন না এখানে আমাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এদিকে লালদিঘীর পাড় মাঠে বাজার করতে আসা রায়হান উদ্দিন বলেন, এখানে সবজি ক্রয় করতে এসেছি। লালদিঘীর পাড় মাঠে হকারদের পুনর্বাসন করায় ভালো হয়েছে। এক মাঠেই মিলছে সবধরনের পণ্য। তাতে করে সময় বেচে যাবে। বিভিন্ন পণ্যের দোকানগুলোকে সাইনবোর্ড দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার যেটা দরকার সেই সারিতে গেলেই পণ্য পেয়ে যাবেন। লালদিঘীর পাড় মাঠে হকারদের পুনর্বাসন করায় নগরীর ফুটপাতে হাঁটাচলা করা যাবে। তবে পরিকল্পিতভাবে হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে যাতে করে কয়দিন পর আবারও যাতে রাস্তায় তারা দোকান বসাতে না পারে। নগরবাসীও সচেতন হতে হবে।
কাপড়ের দোকানদার আব্দুর রহিম বলেন, সিসিকের পক্ষে থেকে ৬ ফুট বাই ৭ ফুটের দোকান দেওয়া হয়েছে। দোকানে শীতের কাপড় তুলেছি। এখনও দোকানের কাজ চলেছে। রাস্তা ও মাঠের অবস্থা ভালো হলে ক্রেতারা আসবেন বলে মনে করি। সিসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমাদের পুনর্বাসনে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। লালদিঘীর পাড় মাঠে ক্রেতারা সব ধরণের পণ্য পাওয়া যাবে। এখানে কাপড় থেকে শুরু করে মাছ, শাক-সবজি, ফলমূল, কসমেটিক সামগ্রীসহ শীতের নতুন পুরাতন কাপড় পাওয়া যাবে।
এদিকে রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগর ভবনের পেছনের মাঠে বাঁশের খুঁটি গেড়ে তাতে সুতা বেঁধে দোকানের লাইন এবং সীমানা টানা হয় এবং লটারির মাধ্যমে হকারদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত জায়গায় অনেকেই দোকান বানিয়েছেন। আবার অনেকেই দোকান বানাচ্ছেন। তবে দোকানিদের দাবি আরও প্রচারণার। অনেকেই এই বাজার সম্বন্ধে জানে না, তাদেরকে জানাতে হবে। আর সিটি কর্পোরেশনকেই এই উদ্যোগ নিতে হবে।
নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম বন্দর-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক ও ফুটপাত সম্প্রতি সম্প্রসারণ ও সংস্কার করেছে সিটি কর্পোরেশন। তবে সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার আগে এই সড়কের বেশিরভাগ অংশ ও ফুটপাত দখলে নেয় হকাররা। এছাড়াও পুরো বন্দরবাজারের সব সড়কই ছিল হকারদের দখলে। সিটি কর্তৃপক্ষ হকার উচ্ছেদে নামলেই হকাররা আন্দোলন শুরু করেন।
এমন বাস্তবতায় নগরীর প্রাণকেন্দ্রকে হকারমুক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগে নিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও এসএমপি কর্তৃপক্ষ। নগর ভবনের পেছনের খালি মাঠে এক হাজারের অধিক হকারকে পুনর্বাসনের জন্য বুধবার থেকে জায়গা ভাগ করা শুরু হয়। হকারদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার আওতায় এনে সিটি কর্পোরেশন থেকে লাইসেন্সও প্রদান করা হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে নগর ভবনের পেছনের খালি মাঠে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১ হাজার ৭০ জনের তালিকা করা হয়েছে বলে এসএমপি সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী নুর আজিজুর রহমান বলেন, নগরীর প্রাণকেন্দ্রের সড়কগুলোকে হকারমুক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগে নিয়েছে সিসিক। এরই ধারাবাহিকতায় হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সিসিক। তাতে সহযোগিতা করছে এসএমপি কর্তৃপক্ষ। হকারদের পুনর্বাসনে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো যত সম্ভব তাড়াতাড়ি সমাধান করা হবে।