শনিবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মোংলায় বিএনপির মেয়রসহ ১৩ কাউন্সিলর প্রার্থীর ভোট বর্জন
মোংলায় বিএনপির মেয়রসহ ১৩ কাউন্সিলর প্রার্থীর ভোট বর্জন
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ মোট ১৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
কেন্দ্র দখল, ভোটারদের বাধা, এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট শুরুর মাত্র দুই ঘণ্টার মাথায় ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ ১৩ কাউন্সিলর প্রার্থী। আজ শনিবার সকাল ১০টায় পৌর শহরের মাদ্রাসা রোডস্থ বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জুলফিকার আলী নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সময় মেয়রের সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত সকল কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
জুলফিকার আলী অভিযোগ করে বলেন, ভোট শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটি কেন্দ্রে দখল করে নেয় আওয়ামী সমর্থকরা। তারা ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দেখিয়ে দিতে এবং সাধারণ ভোটারদের বাধা প্রদান করে।’ প্রতিটি কেন্দ্রে তার এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী দাবি করেন, তিনি প্রশাসনের সহযোগীতা চেয়েও পাননি। ভোটের আগের দিন রাতভর তার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা ও মারধর করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হোসেন ও আলাউদ্দিন বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি ভালো থাকলেও তাদেরকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। জোর করে তাদের ভোট নেওয়া হয়েছে।
অপর কাউন্সিলর প্রার্থী মো. খোরশেদ আলম বলেন, র্যাব-পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থী এমরান হোসেন বলেন, ভোটের অনিয়ম তুলে ধরায় প্রেসক্লাব সভাপতিসহ মিডিয়ার অনেক ভাইকেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
প্রার্থীদের ভোট বর্জনের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা কিংবা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই প্রতিটি গ্রাম হবে শহর : এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন
বাগেরহাট :: বাগেরহাট-৪ মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা দিবে সেই হবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। গ্রামের প্রতিটি মানুষ বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সুফল ভোগ করছে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের ডেউয়াতলায় বাজারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য পরিদর্শন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, স্থানীয়ভাবে গ্রæপিং সৃষ্টি করে পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। অন্যের জমিতে জোরপূর্বক ঘের করা যাবেনা। জমি যার ঘের তার।
মরহুম সাবেক ইউপি সদস্য মোশররফ হোসেন এর সহধর্মীনি বিউটি মোশাররফ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন মৃধা, সাবেক ইউনিয়ন সভাপতি নুরুল ইসলাম মৃধা, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন মাসুম, যুবলীগ নেতা খান মিজানুর রহমান, হাসিবুর রহমান খান সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সংসদ সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর নামে আওয়ামীলীগ নেতা তপন মন্ডল কর্তৃক দানকৃত ৭ শতক জমির উপর বিশ্রামাগার নির্মানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্যের পাশেই হবে এ বিশ্রামাগার।
উপকূলবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে সুন্দরবনে ৮৮টি পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের সুন্দরবনের বাঘ ও মায়াবী হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় মিঠাপানির চাহিদা মেটাতে অবশেষে খনন ও পুনঃখনন করা হচ্ছে ৮৮টি পুকুর। এসব পুকুর বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি সুন্দরবনে থাকা বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বনজীবী ও পর্যটকদের উপকূলবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাবে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়ানে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননে ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ ভাগ। দিনে ২ বার সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া লবণাক্ত স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার।
সংরক্ষিত এই বনের ৩টি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা।
সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রয়েছে। এছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে বাঘ ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর, কিং কোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। ইতিধ্যেই সুন্দরবন থেকে হারিয়ে গেছে ১ প্রজাতির বন্য মহিষ, ২ প্রজাতির হরিণ, ২ প্রজাতির গন্ডার ও ১ প্রজাতির মিঠা পানির কুমির।
গোটা সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জর ১৮টি রাজস্ব অফিস, ৫৬টি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমিও।
সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এই জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।
এছাড়া সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের এইজল ভাগে ছোট বড় ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খাল রয়েছে।
৮৮টি পুকুরের মধ্যে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা রেঞ্জের দুবলায় দুটি ও বগীতে নতুন করে তিনটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। এই রেঞ্জের ২৪টি পুকুর পুনঃখননের মধ্যে কচিখালী অভয়ারণ্যে চারটি, কটকা অভয়ারণ্যে চারটি, দুবলায় এলাকায় তিনটি, শরণখোলা রেঞ্জ সদরে দুটি ও দাশেরভারানীতে দুটি।
এছাড়া একটি করে পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে ডুমুরিয়া, চরখালী, তেরাবেকা, চান্দেশ্বর, শাপলা, ভোলা, শেলারচর, কোকিলমুনি ও সুপতিতে। চাঁপাই রেঞ্জে পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে ২৬টি। এর মধ্যে রয়েছে ধানসাগরে তিনটি, গুলিশাখালীতে তিনটি ও আমুরবুনিয়ায় দুটি।
একটি করে পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে চাঁদপাই, ঢাংমারী, লাউডোপ, জোংড়া, ঘাগড়ামারী, নাংলী, হরিণটানা, কলমতেজী, তাম্বুলবুনিয়া, জিউধরা, বরইতলা, কাটাখালী, শুয়ারমারা, মরাপশুর, বৈদ্যমারী, আন্ধারমানিক, হারবাড়িয়া, নন্দবালা ও চরাপুটিয়ায়।
এছাড়া পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগে একটি নতুন পুকুর খনন ও ৩৪টি পুকুর পুনঃখনন এবং ৩০টি পুকুরের পাকা ঘাট নির্মাণ করা হবে। এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনের প্রাণ হচ্ছে গাছপালা ও বন্যপ্রাণী। সুন্দরবনের মধ্যে থাকা পুকুরগুলো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীগুলো সুপেয় পানি সংকটের মধ্যে ছিল। এই অবস্থায় বন বিভাগ সুন্দরবনের বাঘ ও মায়াবী হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে অবশেষে ৪টি নতুন পুকুর খনন ও ৮৪ পুকুর পুনঃখনন করাসহ ৭০টি পুকুরে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ঘাট।
তিনি আরও জানান, বন্যপ্রাণীর আধিক্য রয়েছে এমন এলাকাগুলোতে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননে ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ফলে বন্যপ্রাণীগুলো দীর্ঘদিনের সুপেয় মিঠা পানির চাহিদা মেটাবে।