রবিবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে নেপথ্যে গডফাদার থেমে নেই বাঘ-হরিণ শিকার
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে নেপথ্যে গডফাদার থেমে নেই বাঘ-হরিণ শিকার
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবনে ভালো নেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবি চিত্রল হরিণ। এই দুইটি বন্যপ্রাণি চোরা শিকারী ও পাচারকারীদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণ শিকার। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সুন্দরবন থেকে শিকার করা ১টি বাঘের চামড়া, ১৯টি হরিণের চামড়া, ১৬ কেজি হরিণের মাংসসহ ৮ জন চোরা শিকারী ও বন্যপ্রাণির চামড়া পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে সুন্দরবন বিভাগ, র্যার ও পুলিশ সদস্যরা।
বর্তমানে সার্বক্ষনিক সুন্দরবন পাহারায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্রেট্রোলিং চালিয়েও ঠেকানো যাচ্ছেনা বাঘ, হরিণ শিকারী, বন্যপ্রাণির চামড়া ও মাংস পাচার। নেপথ্যে গডফাদার থাকায় চোরা শিকারী ও বন্যপ্রাণির চামড়া পাচারকারী সিন্ডিকেটকে থামানো যাচ্ছেনা বলে অভিমত সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা পরিবেশবাদীদের।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দবন বিভাগ ও র্যার- ৮ সদস্যরা গত ১৯ জানুয়ারী রাত ৮টার দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে ক্রেতা সেজে একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘের চামড়াসহ মো. গাউস ফকির (৪০) নামে পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার বাঘের চামড়া পাচারকারী বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের রশিদ ফকিরের ছেলে। বেশ কয়েক মাস আগে এই বাঘটিকে সুন্দরবন থেকে চোরা শিকারীরা হত্যা করে লবণ দিয়ে পলিথিনের বস্তায় ভরে রাখে। উদ্ধার হওয়া ৮ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা ও ৩ ফুট ১ ইঞ্চি চওড়া পূর্ণ বয়স্ক বাঘের চামড়াটি সে শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের অহিদুল নামে এক চোরা শিকারীর কাছ থেকে পাচারের জন্য কিনে রেখেছিল বলে জানায়। বন আইনে গ্রেফতার বাঘের চামড়া পাচারকারী গাউস ফকির বর্তমানে বাগেরহাট কারাগারে আটক থাকলেও এখনো আটক হয়নি বাঘ হত্যাকারী চোর শিকারী অহিদুল।
একইভাবে ২২ জানুয়ারী বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ এলাকা থেকে শিকার করে আনা ১৯টি হরিণের চামড়াসহ দুই চোরা শিকারী ও পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। ওইদিন দিবাগত রাত পোনে ২টার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বাস ষ্ট্যান্ডের কাছ থেকে সুন্দরবনের চোরা শিকারী ও বন্যপ্রানী পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য মো. ইলিয়াস হাওলাদার (৩৫) ও মো. মনিরুল ইসলাম শেখকে (৪৫) গ্রেফতার করে। এসময়ে তাদের গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে মনিরের বাসার দোতালা ঘরের কাঠের পাটাতনের উপর হতে দুটি ব্যাগে রাখা ১৯টি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়।
ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে এসব চামড়া পাচারের উদ্যেশে মজুদ করেছিল। গ্রেপ্তারকৃত সুন্দরবনের চোরা শিকারী ও বন্যপ্রানী পাচারকারী মো. ইলিয়াস হাওলাদার শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের মো. মতিন হাওলাদারের ছেলে ও মো. মনিরুল ইসলাম শেখ শরণখোলা উপজেলার বাস ষ্ট্যান্ডের এলাকায় বর্তমানে বসবাস করলেও সে বাগেরহাট সদরের ভদ্রপাড়া গ্রামের মো. মোশারেফ শেখের ছেলে। বন আইনে গ্রেপ্তার এদ্জুনও বাগেরহাট কারাগারে আটক রয়েছে।
গত ২৫ জানুযারী দিবাগত রাতে খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালী এলাকা থেকে সুন্দরবন থেকে শিকার করে আনা ১১ কেজি হরিণের মাংসসহ ২ শিকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরআগে রবিবার গভীর রাতে এই উপজেলার রামনগর গ্রামের ধোপাদী গেটের কাছ থেকে সাড়ে ৪ কেজি হরিণের মাংসসহ ৩ চোরা শিকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত এই ৫ চোরা শিকারীরা হলেন, খুলনার খানজাহান আলী থানার আটরা-পালপাড়া এলাকার খান খোলজার আহম্মদের ছেলে খান মুজিবুল সুলতান (৩৩), এই থানার মসিয়ালী এলাকার আয়নাল ফকিরের ছেলে মো. টিটু হোসেন (২৪), চট্টগ্রামের মিরসরাইরের বরাইয়া গ্রামের মুন্সি মোস্তফার ছেলে রুহুল আমনি (৫৬), রাঙ্গামাটির নানিয়াচরের ইসলামপুর গ্রামের আলী আকবর হাওলাদারের ছেলে আ. সোবহান (৬৫) ও খুলনার দাকোপ উপজেলার রামনগর গ্রামের জিতেন্দ্র নাথ রায়ের ছেলে কুমারেশ রায় (৫৫)। বন আইনে গ্রেপ্তার এপাঁচজনও খুলনা কারাগারে আটক রয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে গত ২০১৯ সালের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে বর্তমানে বাঘ রয়েছে মাত্র ১১৪ টি। আর হরিণ রয়েছে এক থেকে দেড় লাখ। ২০০১ সাল থেকে এপর্যন্ত বন বিভাগের হিসেবে ৫৪টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে মাত্র ১৫টি। লোকালয়ে ঢুকে পড়া ১৪টি বাঘকে পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে ও বাকী ২৬ বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারীরা। অধিক মুনাফার আশায় হরিনের মাংসসহ চামড়া, বাঘের অঙ্গ-প্রতঙ্গ, চামড়া, হাড়, দাত,নখ পাচার এখন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। আর এটি দেশ ও দেশের বাইরে চীন-লাওস-থাইল্যান্ড সীমান্তে বন্যপ্রানী ও চামড়াসহ অঙ্গ-প্রতঙ্গের আন্ত:র্জাতিক চোরাই বাজার ‘গোল্ডেন ট্রাংগল’এ চলে যায় চোরকারবারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বনদস্যু মুক্ত ঘোষণার পর বাঘ ও হরিণ নিধন কমে এসেছে বলে বনবিভাগ দাবি করলেও মাত্র এক সপ্তাহে ১টি বাঘের চামড়া, ১৯টি হরিণের চামড়া, ১৬ কেজি হরিণের মাংসসহ ৮ জন চোরাশিকারী ও বন্যপ্রাণির চামড়া পাচারকারীকে গ্রেফতারে উঠে এসেছে সুন্দরবনের উদ্বেগজনক চিত্র।
সুন্দরবন নিয়ে গবেষনা করা প্রতিষ্ঠান ‘স্যাভ দা সুন্দরবন ভাইন্ডেশনের চেয়ারপাসন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, বন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আধুনিক জলযান সংটক, দুর্বল বন আইনসহ সঠিক বন ব্যবস্থাপনার অভাব, মামলা পরিচালনায় অদক্ষতার অভাবে বাঘ, হরিণ শিকারী, বন্যপ্রাণির চামড়াসহ মাংস পাচারকারী সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী গডফাদারদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হবার কারণে সুন্দরবনে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বন্যপ্রানী হত্যা। সুন্দরবনে চোরা শিকারি পাশাপাশি বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণেও হুমকির মুখে রয়েছে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণি। এ অবস্থায় চলতে থাকলে হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণি।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসর্ম্পপন করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ব কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে। ইতিমধ্যেই বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণির প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের আয়তনের ২৩ ভাগ থেকে ৫১ ভাগ বন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বন্যপ্রাণির অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণি হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বর্তমানে সার্বক্ষণিক সুন্দরবন পাহারায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্রেট্রোলিং চালানো হচ্ছে। সুন্দরবনের চোরা শিকারী ও বন্যপ্রাণির চামড়া পাচারকারী সিন্ডিকেট বা তাদের পিছনে থাকা গডফাদারাও আমাদের নজরদারীর মধ্যে রয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছেনা। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ তৎপর রয়েছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।
মোংলা-খুলনা রেললাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ হবে :নূরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রী
বাগেরহাট :: বাগেরহাটে মোংলা-খুলনা রেললাইন নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন । যেহেতেু এটি দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রকল্প তাই দ্রুত এই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের।
শনিবার দুপুরে মোংলা-খুলনা রেললাইন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
নূরুল ইসলাম বলেন, এই রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দর দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো মোংলা বন্দর ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে। এখন মোংলা বন্দর দিয়ে ট্রাকে পণ পরিবহন করতে হচ্ছে। আর রেললাইন সংযোগ হওয়ার পর তখন রেলে পণ্য পরিবহন হবে। এতে খরচ ও সময় দুটোই কম হবে।
মন্ত্রী বলেন, এ বছরের জুন মাসে এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সেটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ৭০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, কিছু মাটির কাজ বাকি আছে, সেটি এই শুকনো মৌসুমে শেষ করে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন রেললাইন নির্মাণে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকনে’র প্রকল্প ম্যানেজার অজিত কুমার, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা ও মোংলার ইউএনও কমলেশ মজুমদারসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
স্কুল ছাত্রী অপহরন ঘটনায় অভিযোগ হলেও মামলা নেয়নি পুলিশ
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের মোংলায় এক স্কুল ছাত্রীকে ভারতে পাচারে ব্যার্থ হয়ে তাকে ঢাকায় নেয়ার পথে গাড়ীতে ফেলে পালিয়ে যায় সংঘবদ্ধ পাচারকারীরা। জান্নাতের প্রতিবেশি ময়না ও জাহানারা তাকে পাচার করতে চেয়ে ব্যার্থ হয় বলে অভিযোগ করে জান্নাত ও তার বাবা। জান্নাত মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের বৌদ্যমারী গ্রামের দিন মজুর জালাল ব্যাপারীর মেয়ে এবং স্থানীয় ছবেদ খাাঁন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী।
পাচারকারীদের হাত থেকে ঘটনার তিনদিন পর ওই স্কুল ছাত্রীকে এক ফুফাতো ভাই নাইম’র সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে মোংলায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় প্রতিবেশি লাল মিয়া ব্যাপারীর মেয়ে ময়না বেগম ও আজিত মৃধার মেয়ে জাহানারা বেগমের বিরুদ্ধে গত ২৫ জানুয়ারী থানায় অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে এখন পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। অভিযোগ নেওয়ার ব্যাপারেও পুলিশ গড়িমশি করেন বলেও দাবি করেন ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা জালাল ব্যাপারী।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে মোংলা থানার সেকেন্ড অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযোগটি মামলা হওয়ার মত ঘটনা না বিধায় আমলে নেওয়া হয়নি। তবে ভিকটিম ও বাদী পক্ষের অভিযোগ, মামলা নেওয়া হবে বলে পুলিশ তাকে বার বার আশ্বস্ত করছে।
থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগ সুত্র ও স্কুল ছাত্রী জান্নাতের বাবা জালাল ব্যাপরী বলেন, ঘটনার দিন গত ১৩ জানুয়ারী বিকেলে ফরেষ্ট অফিস সংলগ্ন পাশ্ববর্তী একটি পুকুরে পানি আনতে গিয়ে তার মেয়ে আর বাসায় আসেনি। পরে আত্বীয়ের বাড়ীসহ অনেক খোঁজাখুঁজির পর মেয়েকে না পাওয়া গেলে পরদিন ১৪ জানুয়ারী মোংলা থানায় সাধারণ ডাইরী করেন জালাল ব্যাপারী। এরপরে তিনি লোকমাধ্যমে জানতে পারেন প্রতিবেশি ময়না ও জাহানারা তার মেয়েকে অপহরন করে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে যায়।
১৫ জানুয়ারী ভোরে অপহৃত স্কুল ছাত্রী জান্নাত খানম পাচারের খবর জানতে পেরে কৌশলে তার ফুফাতো ভাই নাঈমকে মোবাইলে ফোন করলে ঢাকার নবীনগরের দিগন্ত বাস কাউন্টার থেকে তাকে উদ্ধার করে। এসময় পাচারকারী ময়না ও জাহানারাসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে জান্নাতের চাচা ও ফুফাতো ভাইরা তাকে ঢাকা থেকে মোংলায় নিয়ে আসে।
পরে স্কুল ছাত্রী জান্নাতের কাছে ঘটনাটির বিস্তারিত শুনে ময়না ও জাহানারাকে অভিযুক্ত করে গত ১৬ জানুয়ারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্কুল ছাত্রী জান্নাতের বাবা জালাল ব্যাপারী।
তবে ঘটনার এতদিন পার হলেও রহস্যজনক কারনে এখন পর্যন্ত অভিযোগটি আমলে নেয়নি পুলিশ। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মোংলা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, এ ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
শিশু ধর্ষণ বাগেরহাটের মামলায় শরিয়তপুরে যুবক আটক
বগেরহাট :: বাগেরহাটে সাত বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণ মামলায় এনামুল শেখ (২২) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) পিবিআই বাগেরহাটের সদস্যরা শরিয়তপুর জেলার নলিয়া থানার ডগরি এলাকা থেকে এনামুলকে গ্রেপ্তার করে। নির্যাতনের শিকার মেয়েটির মা গত ২১ জানুয়ারি রাতে বাগেরহাট মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলার পর থেকেই এনামুল পলাতক ছিল। এনামুল বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের মূলঘর গ্রামের মুদি দোকানদার মালেক শেখের ছেলে
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি মেয়েকে একা বাড়ি রেখে ছোট সম্তানকে নিয়ে মা বাগেরহাট শহরে চিকিৎসকের কাছে যান। শিশুটির বাবাও মানুষের বাড়িতে কামলা দিতে যায়। এই সুযোগে এনামুল মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পরে বাড়িতে আসলে শিশুটি তার মাকে বিষয়টি জানায়। এনামের বড় ভাই জাকির শেখকে বিষয়টি জানালে তিনি বিচার করার আশ্বাস দিয়ে আজকাল বলে ঘুরাতে থাকেন। পরে কোন বিচার না পেয়ে মেয়েটির মা মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, এর আগে ২০১৩ সালে ৬ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের মামলায়ও সাজা ভোগ করেছিল এনামুল। পিবিআই বাগেরহাটের ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে এনামুলকে গ্রেপ্তার করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
বাগেরহাটে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে কৃষকের মুত্যু এলাকায় শোকের ছায়া
বাগেরহাট :: বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি এলাকায় ধানের ক্ষেতে পানি দেওয়ার সময় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে অসিত কুমার দাশ (৫০) নামের একজন কৃষকের করুন মুত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাখালগাছি ইউনিয়নের সুনগর গ্রামে এঘটনা ঘটে। তিনি উক্ত গ্রামের মৃতঃ অধির কুমার দাশ এর পুত্র।
পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সকালে তিনি ধানের ক্ষেতে পানি দেওয়ার সময় অসাবধানতা বসত বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এসময় বাড়ির লোকজন তাকে মুমুর্য অবস্থায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এঘটনায় সমগ্র এলাকায় শোকের ছায়া নেমে।
চিতলমারীতে খননকৃত ক্যানেল গিলে খাচ্ছে পাঁকা সড়ক ডালপালা দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের চিতলমারীর খননকৃত হক ক্যানেল গিলে খাচ্ছে নালুয়া-বড়গুনী পাঁকা সড়ক। এখানে ভাঙ্গনরোধে রাস্তার উপর মাটি দিয়ে পথ অবরুদ্ধ’র অভিযোগ উঠেছে। ফলে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানচলাচলসহ কমপক্ষে ২০ গ্রামের মানুষের যাতায়েত বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি কতিপয় বালু ব্যবসায়ী ও খাল খননে অনিয়মের কারণে এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাটির ভাঙ্গনকবলিত বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা দিয়ে ঠেকানোর বৃথা চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি রক্ষার জন্য টেকসই মজবুত পাইলিংয়ের দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৬/১ প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চিতলমারী সদর বাজারের ত্রি-মোহনা থেকে (বড়গুনি) মধুমতি নদী পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার হক ক্যানেলের পুনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে।
ওই ক্যানেলের পাড় ঘেষা এলজিইডি’র আওতাধীন নালুয়া গ্রোথ সেন্টার থেকে বড়গুনি বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পাঁকা সড়ক রয়েছে। খননের সাথে সাথে ওই রাস্তার বিভিন্ন স্থান কার্পেটিংসহ পাঁকা সড়ক ক্যানেল গর্ভে বিলীন হচ্ছে। এখানে ভাঙ্গনরোধে রাস্তার উপর মাটি দিয়ে পথ অবরুদ্ধ করার ফলে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচলসহ কমপক্ষে ২০ গ্রামের মানুষের যাতায়েত বন্ধ রয়েছে।
ঘটনাস্থল ঘোলা গ্রামের আনিচুর রহমান নান্টু, লিটন শেখ, শাহীন শেখ, তারেক শেখ, নাজিম শেখ, ছাব্বির মোল্লা, মোঃ সাইফুল কবির, দলুয়াগুনি গ্রামের বুলবুল শিকদার, মোঃ আলামিন খান, বড়গুনী গ্রামের মোঃ কামরুজ্জামান ও মোঃ মহসিন আলী বলেন, কতিপয় অসাধু বালু ব্যবসায়ী এই ক্যালেন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছে। তাই ক্যানেল পুনঃখননের সাথে সাথে পাঁকা সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড়বড় ধরনের ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। ফলে অবৈধ ভাবে বালু বিক্রি ও খননে অনিয়মের কারণে এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এখানে ভাঙ্গনরোধে রাস্তার উপর মাটি দিয়ে ১০ দিন ধরে পথ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাই এ সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানচলাচলসহ কমপক্ষে ২০ গ্রামের মানুষের যাতায়েত বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ রাস্তাটির ভাঙ্গনকবলিত বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা দিয়ে ঠেকানোর বৃথা চেষ্টা করছেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি রক্ষার জন্য টেকসই মজবুত পাইলিংয়ের দাবি জানিয়েছেন।
বড়বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ সরদার বলেন, এই রাস্তা দিয়ে ইট বোঝাই ভারি ট্রাক চলাচল করে। খননের সাথে রাস্তার বিভিন্ন জায়গা ক্যানেল গিলে খাচ্ছে। রাস্তা রক্ষার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাটি ফেলে সাময়িক ভাবে সড়ক বন্ধ রেখেছে। তাদের সাথে আলোচনা করে ভাল ভাবে পাইলিংয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মোঃ শামিম আহসান জেভি’র স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ শামিম আহসান বলেন, রাস্তা ঠেকানোর জন্য কিছুটা পানি রেখে খাল খনন করা হচ্ছে। মূলত বালু উত্তোলনের জন্য ওই রাস্তার ভেঙ্গে যাচ্ছে। পাইলিং আমার সিডিউলে নেই। তারপরও জনস্বার্থে পাইলিং করে দিচ্ছি।
চিতলমারী এলজিইডি’র প্রকৌশলী মোঃ জাকারিয়া ইসলাম বলেন, সড়কটির ঢাল কেটে ফেলায় রাস্তা ভেঙ্গে ক্যানেলে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। এছাড়া মাসিক সমন্বয় সভায়ও উপাস্থাপন করা হয়েছে।
তবে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ রাকিব হোসেন মুঠোফোনে বলেন, পানি ভর্তি খালে খননের কোন নিয়ম নেই। আমি এখনই এসও সাহেবকে পাঠাচ্ছি। রাস্তা বন্ধ করলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।