রবিবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » হরিণাকুন্ডুতে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম বিজয়ী
হরিণাকুন্ডুতে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম বিজয়ী
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ :: ১৩৮ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভায় মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সহিদুজ্জামান সেলিম। তিনি মোবাইল প্রতীকে নিয়ে পেয়েছেন ৮৩৪২ ভোট। অন্যদিকে হরিণাকুন্ডু পৌরসভায় জয়ী হয়েছেণ নৌকার প্রার্থী ফারুক হোসেন। এদিকে ১৯৮৩ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর কোটচাঁদপুরে এবারই প্রথম আওয়ামীলীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী এখানে মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে সালাহউদ্দীন বুলবুল সিডল পেয়েছেন ৭১১৯ ভোট। আর আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী নৌকা প্রতীকে শাহাজাহান আলী পেয়েছেন ২০৩৮ ভোট। পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৪৯৩। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৪৮৫ জন এবং মহিলা ভোটার ১৪ হাজার আটজন। হরিনাকুন্ডু নৌকার প্রার্থী ফারুক হোসেন পেয়েছেন ৭ হাজার ৩’ শ ৪৭ ভোট। তার নিকটতম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম টিপু মল্লিক জগ প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৯’শ ১৩ ভোট। পৌরসভায় মোট ভোটার ১৭ হাজার ৭৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ আটহাজার ৩৯২ জন এবং মহিলা আটহাজার ৬৮৩ জন। নির্বাচন সুষ্ঠ শান্তিপূর্ণ করতে দুই পৌর এলাকায় ২৩ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি, ৪৬৫ জন পুলিশ এবং ২০৭ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। হরিণাকুন্ডুতে নির্বাচনী সহিংসতায় জোড়াপুকুর কেন্দ্রে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ও ভুয়া ভোট দিতে দেখা গেছে। বালিকা বিদ্যালয়, লালন শাহ কলেজ ও চটকাবাড়িয়া কেন্দ্রে কেন্দ্রে সবচে বেশি জাল ভোট দেওয়া হয় বলে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী টিপু অভিযোগ করেন। অবশ্য কেন্দ্রে অবৈধ ভাবে প্রবেশের অভিযোগ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজু আহম্মেদ নামে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ককে ৬ মাসের কারাদন্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের দন্ড দেন। বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ কিশোরীকে জাল ভোট দেওয়ার সময় আটক করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কালীগঞ্জে মন্দির কমিটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্মগুরু পরিচয় দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জামাল ইউনিয়নের গুটিয়ানি গ্রামে সোলার প্লান্ট (সেচ প্রকল্প) ঘরের ভিতরে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, ঝিনাইদহের সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইব্রাহিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর এক ছাত্রী মামা বাড়ি থেকে ফেরার পথে একই গ্রামের মৃত অশ্বিন বিশ্বাসের ছেলে যুগল (৩৮) রাস্তার ধারে মাদ্রাসার নিকট থেকে ছাত্রীকে জোর পূর্বক মাঠের ভিতর নিয়ে যায়। এরপর সোলার প্লান্টের ঘরের মধ্যে নিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে লম্পট শ্রী যুগল কুমার ওই ছাত্রীকে সেচ পাম্পে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। লোক লজ্জার ভয়ে ঐ স্কুল ছাত্রী ঘরের ভিতরে থাকা ঘাস মারা কীটনাশক সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। স্থানীয়রা ও পরিবারের সহায়তার তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করে। যুগল এই সেচ পাম্পের কেয়ার টেকার এবং গুটিয়ানী কালী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছে। যুগলের বিরুদ্ধে মন্দিরের অর্থ আত্মসাৎ, একাধীক নারী কেলেংকারিসহ নানা অভিযোগ করেন। কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, এঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা হয়েছে। আসামীকে গ্রফতারের চেষ্টা চলছে।
হরিণাকুন্ডু পৌরসভা নির্বাচনে যুবলীগ নেতার ৬ মাসের কারাদন্ড, জাল ভোটের দায়ে দুই কিশোরীর মুচলেকা আদায়
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু পৌরসভা নির্বাচনে চটকাবাড়িয়া ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রবেশ ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে রাজু আহমেদ নামে এক যুবলীগ কর্মীকে ৬ মাসের কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুর জামান এই আদেশ দেন। যুবলীগ নেতা রাজু ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে। হরিনাকুন্ডু থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা খবরের সত্যতা স্বীকার করেন। এদিকে হরিনাকুন্ডু সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় অন্তরা খাতুন ও শাপলা খাতুন কে পুলিশ আটক করে। পরে তাদের মুচলেকা দিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। শাপলা পাইলট স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী তার পিতার নাম গোলাম বারী। অন্যদিকে অন্তরা খাতুন চটকাবাড়িয়া গ্রামের হাসেম আলীর মেয়ে। ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার খবরের সত্যতা স্বীকার করেন।
হরিণাকু-ুতে নৌকার এজেন্টকে কুপিয়ে জখমের পর কুষ্টিয়া হাসপাতালে রেফার্ড, গ্রেপ্তার কাউন্সিলর প্রার্থী
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু পৌরসভা নির্বাচনে বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে অরাজকতা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া জাল ভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকালে হরিনাকুন্ডুর জোড়াপুকুর মান্দারতলা ভোটকেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট সাগর হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ এক কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি মান্দারতলা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। আহত সাগরের মা রূপসী বেগম ও স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন অভিযোগ করেন কাউন্সিলর প্রার্থী সিদ্দিক মাস্টারের পক্ষে ভোট করার কারণে সাগর কে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত সাগরকে প্রথমে হরিনাকুন্ডু ও পরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কোন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলছে। তবে পৌর এলাকার শুড়া ফতেপুর, লালন শাহ অনার্স কলেজ, প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও শহরের প্রাণকেন্দ্রে হরিনাকুন্ডু সরকারি বালিকা বিদ্যালয় বহিরাগতদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদেরকে ভোট কেন্দ্রের ভিতর প্রভাব বিস্তার করতে দেখা গেছে। এই বহিরাগতদের প্রভাব বিস্তার ও আনাগোনার প্রতিবাদ করার কারণে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী ও ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ বিজিবি আনসার ও ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। ভোটকেন্দ্রের বাইরের পরিবেশটা সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ দেখা গেলেও প্রতিটি কেন্দ্রে বহিরাগত অপরিচিত লোকদের প্রভাব বিস্তারের চিত্র ফুটে ওঠে।
স্বামীর মৃত্যুর ৪ দিন পরে না ফেরার দেশে স্ত্রী
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের প্রবীন শিক্ষানুরাগী স্বামী আনোয়ারুল ইসলাম মন্টুর মৃত্যুর ৪ দিন পরে স্ত্রী আজিমুন্নেছা (৫৫)ও মারা গেলেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। স্বামী জটিল নিউমোনিয়ায় এবং তার স্ত্রী দুরারোগ্য কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা দু’জনেই বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার কল্যাণপুর ইবনেসিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের মধ্যে স্বামী আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু (৭৪) গত ২৪ জানুয়ারী মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬ টায় মারা যান। তখনও তার স্ত্রী ওই হাসপাতালে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষনে ছিলেন। অবশেষে ৩০ জানুয়ারী শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় স্বামীর মৃত্যুর ৪ দিন পর ১৮ দিন আইসিইউতে থেকে স্ত্রী আজিমুন্নেছাও (৫৫) মারা গেলেন। মরহুমের পরিবার মুঠোফোনে আজিমুন্নেসার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মরহুম আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কাবিলপুর গ্রামের মৃত মোখলেস মিয়ার বড়পুত্র। তিনি কালীগঞ্জের প্রবীন উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। চাকুরী থেকে অবসরে যাওয়ার পর একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক হিসেবে নিজ এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের ধারক ও বাহক ছিলেন। মরহুম আনোয়ারুল ইসলাম মন্টুর ভাইপো মোস্তাফিজুর রহমান শাহেদ জানান, তার চাচা আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু ও চাচী আজিমুন্নেসা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হলে তাদেরকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা দু’জনেই সেখানে বিগত ৩ সপ্তাহের অধিক সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের মধ্যে তার চাচা আগে ২৪ জানুয়ারী মারা যান। আর ৪ দিন পর মারা গেলেন তার চাচীও। তবে তাদের উভয়ইয়ের কোভিড ১৯’র রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল বলে নিশ্চিত করেন তিনি। মরহুম আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু স্থানীয় কোলাবাজার হাইস্কুল থেকে এস এস সি পাশের পর ঝিনাইদহ কেসি কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স এম ডিগ্রি লাভ করে সরকারি বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে উচ্চতর ডিগ্রী শেষ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি বেশ কিছুদিন স্থানীয় কোলাবাজার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়নবিদের পদে যোগ দেন। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে ৯ বছর আগে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এরপর জন্মস্থানে ফিরে নিজ গ্রামে বাবার নামে মোকলেস আনোয়ার কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পারিবারিক জীবনে এ দম্পতির কোন সন্তানাদি নেই। এছাড়াও তিনি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কল্যাণেকাজ করেছেন। এই প্রবীণ শিক্ষানুরাগীর জন্মস্থান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়েছে। আর স্ত্রী নিজের করে যাওয়া ওচিয়ত মোতাবেক মরহুমার বাবার বাড়ি নওগাঁতে দাফনের জন্য ঢাকা থেকে শনিবার দুপুরে রওয়া দেয়া হয়েছে। এদিকে স্বামী - স্ত্রীর দু’জনের মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।