শনিবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহতের ঘটনায় মামলা : ভারতে পালাতে গিয়ে চালক গ্রেফতার
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহতের ঘটনায় মামলা : ভারতে পালাতে গিয়ে চালক গ্রেফতার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাকের চালক রনি গাজী (২৮) কে গ্রেফতার করেছে হাইওয়ে পুলিশ। শুক্রবার রাতে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে তাকে আটক করা হয়। এছাড়াও কালীগঞ্জ ট্রাক টার্মিনাল থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। আটককৃত ট্রাক চালক রনি যশোরের শার্শা উপজেলার সনাতনকাটি গ্রামের মশিয়ার রহমান গাজীর ছেলে। বারবাজার হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মেজবাহ উদ্দিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে বেনাপোল সামান্ত এলাকায় অভিযান চালায় তারা। এসময় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় রনি গাজীকে আটক করা হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কালীগঞ্জ থানায় হাইওয়ে পুলিশের ওসি শেখ মেজবাহ উদ্দিন বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে যশোর থেকে ছেড়ে আসা মাগুরাগামী জে কে পরিবহণের একটি বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন ও পরে আরও ৩ জন মারা যায়। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল ট্রাকের চালক।
ঝিনাইদহে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় ভয়াবহ উৎপাদন বিপর্যয়ের আশংকা : নির্বিকার প্রশাসন
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করতে ভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে আবাদি জমির পুষ্টি উপাদান কমে কৃষিপণ্যের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ঝিনাইদহ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ অঞ্চলে তিন ফসলি আবাদি জমি রয়েছে। এসব জমিতে ধান, পাট, পেঁয়াজ, গম, ভুট্টা, সরিষা, মরিচ, বেগুন, ডালসহ বিভিন্ন জাতের কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে সরকারি নিয়ম অমান্য করে এসব আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরি করছেন ইটভাটার মালিকেরা। ফসল উৎপাদনের জন্য শতকরা ৫ ভাগ যে জৈব উপাদান দরকার, তা সাধারণত মাটির ওপর থেকে ৮ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা মাটির উপরিভাগের এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত কেটে নিচ্ছেন। এতে কেঁচোসহ উপকারী পোকামাকড় নষ্ট হচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলায় ১২৯টি ইটভাটা রয়েছে। অনুমতি না থাকায় কিছুদিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তর ১৮ টি ইটভাটা গুড়িয়ে দিলেও সেগুলো বিশেষ রফার মাধমে পুনরায় চালু করা হয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে জেলায় মাত্র ৭টি ইটভাটার পুরোপুরি কাগজপত্র আছে। সরকারি বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ সাড়ে চার বিঘা অকৃষি জমিতে একটি ইটভাটা নির্মাণের নিয়ম থাকলেও ঝিনাইদহের ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। পৌরসভার মধ্যেও ইটভাটা স্থাপনের নজীর রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে ইটভাটা গুলোতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। সবচে বেশি ক্ষতি করছে পাকা রাস্তার। এলজিইডি, জেলা পরিষদ এবং ত্রান ও পুনর্বাসন বিভাগের কোটি কোটি টাকার রাস্তা ভারি গাড়ি চলাচল করে নষ্ট করছে। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ১৯৫২ সালের বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশন এ্যক্টের ৩ ধারা মতে একটি পরিপত্র জারী করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগের (উন্নয়ন-২) উপ-সচিব জেসমিন পারভিন। গ্রামাঞ্চলে এলজিইডির রাস্তা রক্ষায় এই নির্দেশনা জারি করা হয়। ওই পরিপত্র জারির পর থেকে রাস্তার ধারে বা যে কোন স্থানে সরকারের পুর্বানুমতি ব্যতিত কেও পুকুর, কুপ, জলাশয়, সেচনালা খনন করতে পারবে না। জারিকৃত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যদি কেও এমন ভাবে পুকুর বা সেচ নালা খনন করে যার ফলে ভুমি, সড়ক বা পথের প্রতিবন্ধকতা বা ক্ষতি সাধন করে তবে তা ১৫ দিনে মধ্যে স্থানীয় জেলা প্রশাসক অপসারণ, খনন বা পুনঃখনন বন্ধ বা ভরাট করার আদেশ দিতে পারেন। এই আদেশ পালনে ব্যার্থ হলে বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশন এ্যক্টের ১২ ধারা মোতাবেক দুই বছরের জেল, অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ওই পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, পুকুর খনন করলে নিজ জমির ১০ ফুট অভ্যন্তরে জলাশয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সরকারী রাস্তার কিনারা থেকে ১০ ফুট দুরত্বে ও ৪৫ ডিগ্রি ঢালের পাড় রেখে পুকুর বা জলাশয় খনন করতে হবে। দন্ডবিধির ১৮৬০ এর ধারা ৪৩১ মোতাবেক সরকারী রাস্তার ক্ষতি সাধন ফৌজদারী দন্ডনীয় অপরাধ। এই আইনে ৫ বছরের কারাদন্ড, জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। ফলে সরকারী রাস্তার ক্ষতি সাধন হয় এমন কাজ করা যাবে না। কিন্তু ঝিনাইদহে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই রাস্তার ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তাদের মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে ভাটা মালিকরা জমির মাটি কেটে গ্রামীন সড়ক দিয়ে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘেœ। অথচ ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তাদের কোন সরকারী রাস্তা বা জমির ক্ষতি সাধন হচ্ছে কিনা তা জানানোর জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন ইটভাটা মালিক জানান, প্রতিটি ভাটায় বছরে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ ইট তৈরি হয়। প্রতি হাজার ইট তৈরি করতে প্রায় ৮৮ ঘনফুট মাটি প্রয়োজন। সেই হিসাবে একটি ইটভাটায় বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ঘনফুট মাটি দরকার হচ্ছে। মালিকেরা এক হাজার ঘনফুট মাটি মাত্র ৫০০-৭০০ টাকায় কৃষকের জমি থেকে কেনেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক্টর, নসিমন, নাটাহাম্বারে মাটি পরিবহন করা হয়। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। মাটি পরিবহনে মানা হয়না কোন নিয়ম কানুন। পাকা রাস্তায় মাটি পড়ে তা পথচারীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। আর বারোটা বাজায় কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সরকারী রাস্তার। ঝিনাইদহ ৬ উপজেলায় এমন এক’শ কোটি টাকার গ্রামীন পাকা রাস্তা এই মৌসুমে ধ্বংস করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপ। শৈলকুপার বড়–লিয়া গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘টাকার লোভে জমির মাটি বিক্রি করি। কিন্তু মাটিকাটা জমিতে ফসলের এতো বড় ক্ষতি হয়, তা জানতাম না। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা নিয়ে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আক্রাম হোসেন বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় পুষ্টি উপাদান কমে গিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কৃষি বিভাগ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হবে। এছাড়াও এ বিষয়ে জনসচেতনতা মূলক প্রচারনার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে“।
মেয়াদোত্তীর্র্ণ ট্যাক্স টোকেন আর ফিটনেস গাড়ি নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ঝিনাইদহ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সালাহ উদ্দিন
ঝিনাইদহ :: বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদ যাচাই-বাছাই, মামলা ও আটক সহ জেলার নানাবিধ দায়িত্ব যে কর্মকর্তার উপর আর তিনি নিজেই ব্যবহার করেন মেয়াদোত্তীর্র্ণ ট্যাক্স টোকেন আর ফিটনেস সম্বলিত গাড়ি। এ অভিযোগ ঝিনাইদহ ট্রাফিক বিভাগের প্রধান ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি এমন নিয়ম বহির্ভূত কাজ করায় শহর জুড়েই চলছে তোলপাড়, জনতার মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ ও নিন্দা। জানা গেছে, ঝিনাইদহ ট্রাফিক বিভাগের প্রধান ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সালাহ উদ্দিন বেশ কয়েকবছর ধরে মেরুন কালারের একটি প্রাইভেটকার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বিআরটিএ সনদে তার ব্যবহৃত গাড়িটির মালিকানা রয়েছে ইছাহক আলী খান পান্না নামে। ইছাহক আলীর ঠিকানা রয়েছে ঢাকার সোবহানবাগ সরকারি আবাসিক এলাকায়। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-১৮২০। তাছাড়া গাড়িটির ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখে আর ফিটনেস মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে। অথচ ট্যাক্স টোকেন আর আর ফিটনেস মেয়াদ শেষ হওয়া গাড়ি নিয়ে শহর জুড়ে তিনি দিব্যি বাগিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রকাশ্যে ঝিনাইদহ শহরে এমন একটি গাড়ি চালিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলা ট্রাফিক পুলিশের একজন শীর্ষকর্মকর্তা। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিরুপ মন্তব্য। এদিকে গাড়িটির ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলার বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে অনলাইনে এ তথ্য প্রদান করেন। কিন্তু বিস্তারিত তথ্যের জন্য বিআরটিএ ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়। মন্তবিটি তিনি লেখেন ওই গাড়ির রেজিস্ট্রশন পেপারে নিজের সাক্ষরের উপর। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সালাহ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আপনি কী বলবেন আমি জানি। আপনি অফিস আসেন আমি আপনার সঙ্গে সামনাসামনি বসে কথা বলবো। আমি মিশনে গিয়েছিলাম ৪৬ লাখ টাকা পেয়েছি, তাই কয়েকলাখ টাকার গাড়ি ব্যবহার করতেই পারি। উচ্চস্বরে এমন কথা বলে লাইন কেটে দেন। দুটি হাত বদল করে এই গাড়িটি তিনি কোন একটি কোর্ট থেকে নিলামে নিয়েছিলেন বলেও সাংবাদিকদের জানান। তবে গাড়িটি কোর্টের নিলামে কেনার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তিনি। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের জন্য কোনো সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নেই। ইচ্ছে করলে যে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিজ উদ্যোগে গাড়ি ব্যবহার করতে পারে। তবে আইন সবার জন্যই সমান। কেউ যদি বৈধ কাগজপত্রবিহীন গাড়ি ব্যবহার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার অপরাধে মামলার সুযোগ আছে আর এই ধরনের অপরাধী সাধারণ মানুষ হোক আর ট্রাফিক ইন্সপেক্টরই হোক। বিআরটিএ ঝিনাইদহ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) এস এম মাহফুজুর রহমান জানান, আদালত থেকে নিলামের মাধ্যমে যে কেউ মোটরযান ক্রয় করতে পারে। সেসময় ওই গাড়িটির সড়কের চলাচলের মত ফিটনেস নাও থাকতে পারে। তাই সেই যানটি পরবর্তিতে সড়কে চালাতে হলে অবশ্যই ‘বিআরটিএ’ থেকে ফিটনেস সনদ নিতে হবে। এই ফিটনেস সনদ পরবর্তিতে বিআরটিএ এর নিজস্ব অনলাইনে লিপিবদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া অন্য কোনো সুযোগ নেই।
অবৈধভাবে মহেশপুর সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় নারী-শিশুসহ ৬ জন আটক
ঝিনাইদহ :: অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে আটক করেছে বিজিবি। শনিবার ভোররাতে মহেশপুর উপজেলার একাশিপাড়া গ্রামের মাঠ থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো-যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের ইলিয়াছ শেখের ছেলে আসাদুজ্জামান (১৬), মৃত আবুল শেখের ছেলে সাগর শেখ (৩২), তার স্ত্রী জোসনা বেগম (২৫) ছেলে হাসান শেখ (৪), নওগার আত্রাই উপজেলার পৌসাত্ততা গ্রামের মৃত খাজাউদ্দিন প্রামানিকের ছেলে সাহাদত আলী (২৪) ও তার স্ত্রী ফামেতা জাহান শিউলী (১৯)। বিজিবি ৫৮ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান জানান, গোপন সংবাদের তারা জানতে পারে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে কয়েকজন বাংলাদেশী ভারতে যাচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে ওই ৬ জন ও সহযোগিতা করার জন্য আর ৩ জনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মহেশপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
কালীগঞ্জে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ বাবার স্বপ্ন ট্রাকের চাপায় পিষ্ট
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে ৫ জনই যশোর এমএম কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের। কলেজে পরীক্ষা শেষে তারা বাড়ি ফিরছিল। তারা হলেন- কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের রনজিত দাসের ছেলে সনাতন দাশ (২৫), চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে রেশমা (২৬), কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিনদিয়া গ্রামের হারুন অর রশিদ সোহাগ (২৫), কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান (২৪) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নাথকুন্ডু গ্রামের ইউনুস আলী (২৬)। নিহত প্রত্যেকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শিক্ষা জীবনের শেষ পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাস দুর্ঘটনায় প্রান গেল তাদের। কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের সনাতন দাশের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকে মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর বাবা-মা। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছিলেন বাবা রনজিৎ দাস। বাবা রনজিৎ দাস বলেন, খুব কষ্ট করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। খেয়ে না খেয়ে তার খরচ দিচ্ছিলাম। একদিন সে চাকরি করে অভাব ঘুচাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের নিহত মোস্তাফিজুর রহমানের ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের বড় আশা ছিল ভাইকে নিয়ে। বড় আশা করে তাকে লেখাপড়া শিখানো হয়েছে। চালকের অসচেতনতায় বাস দুর্ঘটনায় প্রান গেল তার। আমার পরিবারের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। নিহতের দুলাভাই আলমগীর কবির বলেন, পরিবার ও সরকার এত টাকা খরচ করে তাদের লেখাপড়া শিখিয়েছে। গাছটি লালন পালন করে মাত্র ফুল ফুটেছে। সে থেকে ফল পাওয়ার আশা ছিল প্রত্যেকের। সেই ফুল অকালে ঝরে গেল। এ দায় ভার কার। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকায় যশোর থেকে মাগুরাগামী জেকে পরিবহনের একটি বাস বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার উপর আড়াআড়ি হয়ে উল্টে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন ও পরে ৩ জন মারা যান।
কালীগঞ্জ-যশোর মহাসড়কে সময় রক্ষার নামেই ওভারস্পিডে গাড়ি চালান চালকরা ‘সময় আইন’ মানতে বাড়ছে দুর্ঘটনা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বারোবাজারে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ বাস সিন্ডিকেটের নিজেদের তৈরি তথাকথিত ‘সময় আইন’। সময় রক্ষার নামেই ওভারস্পিডে গাড়ি চালান চালকরা। আর তাতেই দুর্ঘটনা। যাতে বলি হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। চলতি বছরে এ আইনের ফাঁদে জীবন হারিয়েছেন অন্তত ২৫জন। কেবল সময় আইন’ নয়, অবৈধ যানবাহন, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য ও সড়ক দখলের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। অবশ্য এ নিয়ে প্রমাসনের প্রশাসনের পক্ষে নেই তেমন কোন তৎপরতা। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের অদূরে এক ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনায় ১২ জন প্রান হারান। এ সময় আহত হয় কমপক্ষে আরো ২৫ জন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, দুইজন নারী ও একজন শিশু ছিল। এ ছাড়া এদের মধ্যে ৬ জন ছিল কলেজ শিক্ষার্থী। যারা যশোর থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশে বাসে উঠেছিল। পথিমধ্যে বারোবাজার তেল পাম্পের কাছে পৌছালে চালক নিয়ন্ত্রন হারায় এবং বাসটি উল্টে রাস্তার উপর আড়াঅড়ি হয়ে যায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী ট্রাক রাস্তার উপর পড়ে থাকা বাসের মাঝামাঝি স্বজোরে আঘাত করে। এতে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক শামীমুল ইসলাম জানান, বাসটির বেপরোয়া গতির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।এর আগে ১৩ জানুয়ারি একই সড়কের ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ট্রাক ও ইঞ্জিন চালিত নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ ইমারত শ্রমিক নিহত হয়। এ সময় আহত হয় আরো চারজন। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একই সড়কের উপজেলার মদনডাঙ্গা বাজারের শ্রীরামপুর বাসস্ট্যান্ডে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২ ফেব্রুযারি ঝিনাইদহ-কুস্টিয়া সড়কের শৈলকুপা এলাকার বড়দাহ এলাকায় দ্রুতগতির একটি বাসের চাপায় আরিফ শেখ নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়। গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বর বারোবাজার এলাকায় দ্রুতগতির কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় ইকবাল হোসেন নামের এক মোটর সাইকেল যাত্রী নিহত হয়। এভাবে এই সড়কে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহত হচ্ছে নিহত ও কম নয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা গুলোর সাথে সারাদেশের যোগাযোগের প্রদান সড়ক খুলনা-যশোর-ঝিনাইদহ-কুস্টিয়া সড়কটি। এ সড়কে প্রধান যাত্রীবাহী বাস হলো রুপসা ও গড়াই পরিবহন। প্রতিদিন কুষ্টিয়া থেকে ৩৬টি গড়াই পরিবহন খুলনা এবং খুলনা থেকে ৪৩টি রুপসা পরিবহনের বাস কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রুপসা পরিবহন ৯ মিনিট এবং গড়াই পরিবহন ১০ মিনিট পরপর একটি করে গাড়ি ছাড়ে। এসব গাড়ির একটি স্টপেজ থেকে অপর একটি স্টপেজে পৌছানোর জন্য বাস সিন্ডিকেট থেকে তৈরি করে দেয়া হয়েছে নির্ধারিত সময়। প্রতি স্টপেজে যাত্রী উঠানো নামানোর কাজ শেষ হলেই বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যাত্রী নামানোর পরও চালকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে নির্ধারিত সময় পরের স্টপেজে পৌছানো অনেক সময় দুরুহ হয়ে পড়ে। এজন্য চালকরা সময়মত পৌছাতে বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে থাকেন। ফলে ব্যস্ত সড়কে প্রায় ঘটে দুর্ঘটনা। এ সড়কের চলাচলকারী বাসের মালিক ও শ্রমিকরা জানান, খুলনা থেকে কুষ্টিয়া হয়ে আবার খুলনা ফিরে যেতে একটি পরিবহনকে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এসব চাঁদা আদায় করে জেলা উপজেলায় গজিয়ে উঠা মালিক, শ্রমিকদের সংগঠন। এ ছাড়া প্রশাসনের নামেও চাঁদা আদায় করে নানা ব্যক্তি ও সংগঠন। এ চাঁদার টাকা পরিশোধ করতেই বাধ্য হয়ে তারা বাড়তি রোজগারের জন্য বিভিন্ন স্টপেজে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করেন। এরপর নির্ধারিত সময়ে গন্তব্য স্থানেপৌঁছাতে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে বাস চালাতে হয়। এদিকে রুপসা পরিবহনের চালক রবিউল ইসলাম জানান, যশোর থেকে কালীগঞ্জ পৌছাতে ৩৫ মিনিট সময় বেধে দেওয়া। আর কালীগঞ্জ থেকে ঝিনাইদহে পৌঁছাতে ২৫ মিনিট। নির্ধারিত সময়ে না পৌছাতে পারলে রয়েছে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা। এদিকে যাত্রী নেওয়ার জন্য স্টপেজে কিছু সময় নষ্ট হলে রাস্তায় চলার সময় গতি বাড়িয়ে তা মেকআপ করতে হয়বলে যোগ করেন এই চালক। তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় প্রায়ই দেখা যায় ইজিবাইক, মোটরচালিত রিক্সা-ভ্যান ও সাধারণ মানুষ অসচেতনভাবে রাস্তার উপর চলে আসে। আর তাদের জীবন রক্ষা করতে গিয়েই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া যানবাহনের পরিমাণ বাড়লেও সড়ক গুলো সেই অনুসারে প্রমস্ত হয়নি। পাশাপাশি সড়কের উপর বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রাখা এবং গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। এতেও দুর্ঘটনা ঘটে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মটর মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ ফরিদ উদ্দীন জানান, দুর্ঘটনারোধে সড়কে চলাচলকারী গাড়ির গতি স্থানীয় সড়কে ৪৫ এবং মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার করতে হবে। এটা বাস্তবায় করতে সরকারের গভর্নর সিলের ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তায় অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। ঝিনাইদহ জেলা বাস মালিক সমিতির বর্তমানে কোন কমিটি নেই। তবে এ সমিতির সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু জানান, সড়কে যাত্রীবাহী বাসগুলো ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে। অনেক সময় অবৈধ থ্রি হুইলার, ইজিবাইক, আলমসাধু ও নসিমনগুলো অসচেতন ভাবে গাড়ির সামনে চলে আসে। যখন বাস চালকদের কিছুই করার থাকে না। ফলে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি। দুর্ঘটনারোধে সরকারের উচিত মালিক শ্রমিকদের নিয়ে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া সরু সড়কে প্রশস্ত করণের দাবি করেন তিনি। তবে সময় নিয়ন্ত্রনের বিষয়ে তিনি কোন কথা বলেননি। ঝিনাইদহ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ সালাহউদ্দীন জানান, সড়কে চালকদের বেপরোয়া চলাচলই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। চালকদের নিয়তি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা ও সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ক্যাম্পেইন করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, ট্রাফিক বিভাগ দুর্ঘটনারোধে মহাসড়ক থেকে অবৈধ থ্রি হুইলার, ইজিবাইক ও স্থানীয় তৈরি শ্যালোচালিত গাড়িবন্ধ এবং এসব উৎপাদনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ না পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। তারপরও দুর্ঘটনা ঘটছে। আর সেটা একমাত্র বেপরোয়া গতির কারণেই।