শুক্রবার ● ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বাবা বিএনপি নেতা-ছেলে যুবলীগ নেতা
বাবা বিএনপি নেতা-ছেলে যুবলীগ নেতা
সিরাজগঞ্জ :: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক সাইদুর রহমান লাবলু। আর তার ছেলে জাহিদ হাসান রাজু হাটিকুমরুল ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজু ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতির পদ পাওয়ায় আওয়ামী পরিবারে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনুপ্রবেশকারী রাজুর বিরুদ্ধে জেলা যুবলীগের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছে স্থানীয়রা।
জানাগেছে,সাইদুর রহমান লাবলু ২০০৯ সালে সলঙ্গা থানা বিএনপিতে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান।লাবলু জামায়াত বিএনপি নাশকতা মদত দাতা এবং আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী ও আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের মাষ্টার মাইন্ড ছিল।
২০১২ সালে গনমাধ্যম কর্মীরা যখন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে তার গ্রামে যান তখন সাইদুর রহমান লাবলুর নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা করা হয়। ছিনিয়ে নেয় ক্যামেরা। লাবলুর বিরুদ্ধে তখন সলঙ্গা থানায় অভিযোগও করা হয়েছিল।
এদিকে বিএনপি নেতার ছেলেকে ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িক্ত পালনে তার বিরুদ্ধে বহু নেতাদের সাথে ছবি তুলে নানা সুযোগ সুবিধা ভোগ ও দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে সব ছবি ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
নিজের প্রয়োজনে সাপ ও খোলস পাল্টায় মানুষ আর বৈকি! রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে দলবদল দেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। নীতি-আদর্শের কথা ভুলে ফায়দা লুটতে অতীতে অনেকেই যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলে। শুধু আওয়ামী যুবলীগের কমিটিতে নয়; তার ইতিহাস ও রয়েছে ভুরি ভুরি।
এক দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার এই প্রক্রিয়া দৃশ্যমান একটু বেশি হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় নিজ দল ছেড়ে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেওয়া হচ্ছে তাকে আর দলবদল বলা যায় না। বলা যায়, অনুপ্রবেশ। যদিও বিএনপি ও জামায়াত- শিবির ছেড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ শুরু হয় ২০০৯ সালে।
২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘জামায়াত-শিবির ও বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে নয়।’ কিন্তু তার পরও অনুপ্রবেশ যেনো থেমে নেই। নানা প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবির-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের পর অনেকে পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছেন। জাহিদ হাসান রাজুর বেলায় ব্যতিক্রম হয়নি!
স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকরা এসব দেখে বলছেন, ‘অনুবেশকারীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নয় বরং অনেকেই এখন গা বাঁচাতে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে। যারা সুযোগ বুঝে রং পাল্টাতে পারে।
তারা আরো বলেন, লাবলু বিএনপি নেতা অথচ তার ছেলে রাজু অনুপ্রবেশকারী যদি যুবলীগের নেতৃত্বে উঠে আসে -তাহলে আমাদের মত মাঠপর্যায়ের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বে”। এছাড়াও অনেক নেতাকর্মী তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেন এবং নিজেদের রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামীলীগের নেতারা তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেন-”বিরোধী দলে থাকাকালীন যাদের অত্যাচারে ঘরে থাকতে পারি নি, তাদের সন্তানেরা আজ আওয়ামী যুবলীগের মত সংগঠনের পদ-পদবী দখল করে নিচ্ছে। এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছি আমরা। ”
এবিষয়ে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, রাজুর বাবা একজন বিএনপির একনিষ্ট নেতা। তার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা হওয়ার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এমন অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের দলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক বলেন, রাজুর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হবে। তবে কোন প্রকার জামায়াত -বিএনপির নেতা কর্মীর পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী যুবলীগের কোন পদে থাকতে পারে না। আমরা প্রতিটি কমিটির নেতাদের নির্দেশ দিয়েছি এমন থাকলে দ্রুত তাদের বহিস্কার করতে।
জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল বলেন, আমার বিষয়টা জানা নেই তবে এমন কোন তথ্য প্রমান পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।