মঙ্গলবার ● ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ভারতে কৃষক আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তারে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার উদ্বেগ প্রকাশ
ভারতে কৃষক আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তারে আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার উদ্বেগ প্রকাশ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১ : আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া ভারতে চলমান কৃষক বিক্ষোভ ও দিল্লিতে সহিংসতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা ৮ সাংবাদিক এবং তরুণ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী দিশা রবিকে কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে একটি প্রতিবাদ “টুলকিট” তৈরি ও বিতরণ করার অভিযোগে গ্রেপ্তারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার ও মামলার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার জননিরাপত্তা বজায় রাখার নামে দিল্লির সীমান্তবর্তী কয়েকটি বিক্ষোভ স্থানে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। হরিয়ানা রাজ্য সরকারও রাজ্যের বেশিরভাগ স্থানে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করে।এটি ভারতের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক পরিসরের ( civic space) উদ্বেগজনক চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
আজ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে, আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেছেন: ভারত সরকার সাম্প্রতিক কৃষক বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইন্টারনেট এবং যোগাযোগের অন্যান্য ধরণের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ও নির্বিচার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার, মামলা, হয়রানি এবং চরিত্রহরণ করার মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারি কণ্ঠকে রোধ করার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, ভিন্নমত, প্রতিবাদ ও আন্দোলন দমনে সাম্প্রতিককালে ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন, মানহানি আইনসহ বিভিন্ন আইনের অপব্যবহার বেড়ে চলেছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, মামলা, হয়রানি, যোগাযোগ বন্ধে ইন্টারনেট শাটডাউন মৌলিক মানবাধিকারের প্রত্যক্ষ লঙ্ঘন এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) অধীনে মত প্রকাশ ও প্রতিবাদ করার অধিকার রক্ষায় ভারত সরকারের যে বাধ্যবাধকতা তার সাথে সাংঘর্ষিক। ভারত সরকারকে যেকোন আন্দোলন ও প্রতিবাদের সময় প্রতিটি পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান মেনে নিতে হবে।
গত চার মাস ধরে চলে আসা কৃষক আন্দোলন গত মাসে গতি লাভ করে যখন দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করার জন্য কৃষকরা রাস্তা, মহাসড়ক এবং ফুটপাত অবরোধ করে। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে হাজার হাজার কৃষক দিল্লির উপকণ্ঠে বিক্ষোভ করছেন, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পাস হওয়া তিনটি কৃষি সম্পর্কিত আইন আইন প্রত্যাহারের দাবি করে। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস, ২৬শে জানুয়ারী পর্যন্ত কৃষক আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল। যখন বিক্ষোভকারীরা দিল্লিতে প্রবেশের জন্য পুলিশের বাঁধা ডিঙ্গানোর চেষ্টা করে তখন পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার আন্দোলনকারীদের বাঁধা দেয়। এছাড়া সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। দিল্লিতে প্রবেশে বাঁধা দেওয়ার জন্য সরকার নয়াদিল্লির সীমানায় কংক্রিট স্ল্যাব এবং লোহার ব্যারিকেডস লাগিয়েছে।
২৬ শে জানুয়ারি ভারতে কৃষক আন্দোলন ও দিল্লিতে সহিংসতা নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য ৮ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব মতে দিল্লি পুলিশ ২৬ শে জানুয়ারির সহিংসতার ঘটনা নিয়ে ৪৪ টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে এবং ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ কমপক্ষে ৩৭ জন কৃষক নেতার বিরুদ্ধে দাঙ্গা, হত্যার চেষ্টা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করেছে। ফৌজদারি মামলায় নামধারী বেশিরভাগ কৃষক নেতা বিগত বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিজেপি সরকারের সাথে কৃষি আইন নিয়ে আলোচনায় জড়িত ছিলেন। তারা নিজেদের যেকোন সহিংসতা ও অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। অধিকন্তু, ২০ বছর বয়সী জলবায়ু কর্মী মিসেস রবিও রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই ধরণের গ্রেপ্তার, মামলা এবং আন্দোলনকারীদের চরিত্র হরণের প্রয়াস ভারতে বাকস্বাধীনতা, তথ্যের অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উদ্বেগজনক অবস্থা প্রকাশ করছে।
আর্টিকেল নাইনটিন প্রতিবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য গ্রেপ্তার হওয়া অধিকারকর্মী, সাংবাদিকসহ সবার মুক্তি দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। সরকারকে অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হয়রানি, অসম্মান এবং গ্রেপ্তার বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানে আসা উচিত।