শনিবার ● ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » করোনা মহামারিতে হাঁস পালনে ভাগ্য ফিরিয়েছে অনোক কুমার পাল
করোনা মহামারিতে হাঁস পালনে ভাগ্য ফিরিয়েছে অনোক কুমার পাল
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: করোনা মহামারিতে ব্যবসায় ধ্বস নামায় বিকল্প আয়ের আশায় হাস পালন শুরু করেন বেকারি ব্যবসায়ী অনোক কুমার পাল। মাত্র দুই লক্ষ টাকার পূজিতে ৮ মাস না যেতেই মাসিক আয় পৌছেছে অর্ধলক্ষ টাকায়। এভাবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে খামার থেকে অনোকের মাসিক আয় ৬০ থেকে ৭০ হাজারে পৌছাবে ।
অনোক কুমার পাল বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের একজন বেকারির ব্যবসায়ী। যিনি বছর পাঁচেক আগে রং মিস্ত্রির কাজ ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন বেকারির ব্যবসা।চানাচুর, বিস্কিট, চিড়া, বুট, ছোলাসহ বিভিন্ন খাবার পন্য তৈরি ও সরবরাহ করে ভালই চলছিল তার।কিন্তু করোনা মহামারিতে এবছর জুন মাসের দিকে ব্যবসা একদম শুন্যের কোঠায় চলে আসে। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে অনোকের।চিন্তায় পড়ে যান, খুজতে থাকেন বিকল্প আয়ের পথ। ইউটিউবে বিভিন্ন হাসের খামারের ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নেন খামার করার।বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন।সিদ্ধান্ত নেন নিজের সখের মৎস্য ঘেরেই হাস পালন শুরু করবেন।নিজের জামানো টাকা দিয়ে ঘেরের পাশে হাঁসের জন্য গোলপাতার ছাউনিতে কাঠের শেড তৈরি করেন।বাগেরহাট আঞ্চলিক হাস প্রজনন খামার থেকে ২০ টাকা দরে এক হাজার ৫০টি হাঁসের বাচ্চা নিয়ে শুরু করেন হাসের খামার। অন্তর-অয়ন হাস খামার নামে শুরু করেন স্বপ্ন যাত্রা।মাত্র ৩ মাস ২৬ দিনে হাস থেকে ডিম পায় অনোক কুমার পাল।কিন্তু বাধঁ সাধে খামারে থাকা পুরুষ হাস।এক হাজার ৫০ পিস হাসের মধ্যে প্রায় ৫‘শ হাস পুরুষ হয়ে যায়। ৪০ হাজার টাকা লোকসানে পুরুষ হাসগুলোকে বিক্রি করে দেন তিনি।তবে লোকসান পুষিয়ে নিতে প্রাণপন চেষ্টা করে যান অনোক।সফলতাও পেয়ে যান অনোক। খামার থেকে এখন প্রতিদিন ৪‘শ থেকে সাড়ে চারশ ডিম সংগ্রহ করেন অনোক।খাবারের দাম ও একজন কর্মচারীর বেতনসহ সব খরচ দিয়ে প্রতিমাসে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার লাকা লাভ করেন তিনি।হাস খামারের আয়ে খুশি অনোক।
অনোক বলেন, ‘মাত্র ৩৩ শতাংশ জমির উপর আমার মৎস্য ঘের ও হাঁসের খামার। বাচ্চা উঠানোর মাত্র তিন মাস ২৬ দিনে আমার খামারে হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করে। এটা ছিল আমার জন্য খুবই আনন্দের। বর্তমানে খামার থেকে ভালই আয় হচ্ছে।শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও আঞ্চলিক হাস খামারের লোকজন আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই আয় ৬০ থেকে ৭০ হাজারে পৌছাবে আশা করি। এভাবে মাস ছয়েক চলতে পারলে আর একটি খামার করার ইচ্ছা রয়েছে আমার’।
বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, ‘অনোক একজন ভাল খামারি। তিনি খামার করার আগে আমার কাছে এসেছেন। আমি তাকে সব ধরণের কারিগরি পরামর্শ দিয়েছি। তাকে একজন সফল হাঁস খামারি বলা যায়’।
তিনি আরও বলেণ, হাসপালন খুবই লাভ জনক। হাঁসের মর্টালিটি হার খুবই কম। রোগ ব্যাধিও কম। তাই নিয়ম মেনে হাঁস পালন করতে পারলে খুব সহজে স্বচ্ছলতা আনা যায় বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।