রবিবার ● ২৮ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সূর্যমুখী চাষে ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছেনকৃষকেরা
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সূর্যমুখী চাষে ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছেনকৃষকেরা
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট প্রতিনিধি :: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাটসহ ১০ জেলায়এ বছরসূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা। কৃষকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সরেজমিনে সুজামের সূর্যমুখী ফুল বাগান ঘুরে দেখা যায়, অপরূপ সৌন্দর্যে সেজেছে হবিবুর রহমানএর সূর্যমুখী বাগান। এ যেন এক ফুলের রাজ্য, এখানে এসে ভ্রমণ পিপাসুদেরও মন আনন্দে ভরে ওঠে। সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে মনোরম পরিবেশে শোভা পাচ্ছে হলুদ রঙের সূর্যমুখী। দূর থেকে যে কারো মন কেড়ে নেবে অপরূপ দৃশ্যটি। সূর্যমুখীর বাগানে দর্শনার্থীদের পদচারণা বেড়েছে বলে জানান কৃষকহবিবুর রহমান। মাঠে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ। সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সূর্যমুখী ফুল সারা বছর চাষ করা যায়। তবে অগ্রহায়ন মাসের মধ্য থেকে চাষ করলে এর ভাল ফলন পাওয়া যায়। সুজামের বাগানে ইন্ডিয়ান প্যাসিফিক হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুল রোপন করা হয়েছে। ফুলের ব্যাস ২১.৩ সেন্টিমিটার। উচ্চতা ৯০ সেন্টিমিটার থেকে ১১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত । ফুলের দানা ১৩০০ শ এবং ফলন একর প্রতি ৩৫ থেকে ৩৬ মণ।
সূর্যমুখীর বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। সমভূমি এলাকায় শীত ও বসন্তকালে, উঁচু লালমাটি এলাকায়, বর্ষাকালে ও সমুদ্রক‚লবর্তী এলাকায় শীতকালীন শস্য হিসাবে চাষ করা হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে।
সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই তেল অন্যান্য ভোজ্য তেল থেকে ভাল এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ উপকারী। এতে কোলেস্টরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে। এর বীজ হাস মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার মোরেলগঞ্জ ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের ফুল চাষি কৃষক হবিবুর রহমানএর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রথমবারের মতো জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন। সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন হবিবুর রহমানসহ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রোণোদনার মাধ্যমে হবিবুর রহমান এ বছর ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে। অন্য ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে বেশি আয় হয় জানিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন কৃষকহবিবুর রহমান। ইতিমধ্যেই সূর্যমুখী গাছে ফুল এসেছে। আর এই সূর্যমুখী ফুল দেখতে দর্শনার্থীদের পদচারণা বেড়েছে ঐ এলাকায়। তারা ফুল তোলে সেজন্য পাহারা দিতে হয়। যেন কেউ ফুল তুলতে না পারে। হবিবুর রহমান আরও জানান, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় সেজন্য সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ মাত্র ৫ হাজার টাকা হবে। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি বিঘাতে খরচ বাদ দিয়ে ১৩থেকে ১৮ হাজার টাকা লাভ হওয়ার সম্ভবনা। যা অন্য কোন ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করছেন ভালো আয় হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ সিফাত-আল-মারুফ বলেন, সূর্যমুখী ফুল আমাদের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় তেমন চাষ হয়না তবে এবার উপজেলার প্রত্যান্ত ইউনিয়নে অল্প অল্প করে ৬০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে ৭ মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তৈল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। এই তেল সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০টাকা। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যদি সফল হওয়া যায় তা হলে আগামীতে সূর্যমুখী ফুল চাষ বেড়ে যাবে।বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রত্যান্ত পল্লী গ্রামভাইজোড়া রাস্তার সাথে সূর্যমুখী ফুলের মৌ মৌ ঘ্রান। জমিতে সবুজ পাতার মধ্যে হলুদ ফুল উঁকি দিচ্ছে, বাতাসে দোলছে। সূর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত দর্শনার্থী ভীর করছে নিভৃত পল্লী ভাইজোড়া গ্রামে। সূর্যমুখী ফুল দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাইজোড়া রাস্তার পাশে কৃষক হবিবুর রহমানের জমিতে দৌল খাচ্ছে ফুল। ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। চারিদিকে হলুদ ফুল আর সবুজের অপরুপ দৃশ্য। এ সৌন্দর্য দেখতে আশপাশের অনেকেই ভীড় জমাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার প্রমাণ রাখতে ফুলের সাথে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলছেন।
কৃষক হবিবুর রহমানএর জানান, সহকারী কৃষি কর্মকর্তার দেওয়া পরামর্শ ও সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো তিনি ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে। ভাল ফলন পাওয়ার আশা করছেন।
সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসাইন জানান, সূর্যমুখী ফুল থেকে পাখির খাবারের পাশাপাশি কোলেস্টেরল মুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পাম অয়েল ও সয়াবিনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে মানুষ। চলতি বছরে কৃষক হবিবুর রহমান সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার ও আন্ত-পরিচর্যার জন্য উপকরণ ও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। সূর্যমুখী চাষে কৃষকরা আরো আগ্রহী হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মোরেলগঞ্জের পৌরসভার থেকে আশা দর্শনার্থী শেখ রিফাতুল ইসলাম জনি জানান, সূর্যমুখী ফুল চাষ এখন দেখতেই পাওয়া যায়না। এখানে চাষ করেছে জানতে পেড়ে দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে এই ফুলের বাগানে এসে।
খুলনা পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র শেখ রাহাতুল ইসলাম জয় জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেড়ে আমরা তিন বন্ধু এখানে সূর্যমুখী ফুল দেখতে এসেছি। ফুলের মৌ মৌ ঘ্রান মৌমাছির ভো ভো শব্দ আর ফুলের সৌন্দর্যে খুব ভালো লাগছে। সূর্যমুখী ফুল যেন হাসি মুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে।