বুধবার ● ৩১ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » পশ্চিমের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষ
পশ্চিমের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষ
মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:: দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় শুধুই বোরো ক্ষেত। মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত কৃষকের বুক জুড়িয়ে দিচ্ছে। কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পশ্চিমের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। আগাম চাষ করা ধান ক্ষেত গুলোতে শীষ বের হতে শুরু করেছে। বাকি ক্ষেত গুলো থোড় অবস্থায় রয়েছে। মাস খানেকের মধ্যে আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হবে বলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবার যশোর জেলায় এক লাখ ৫৭ হাজার ৪৩৫ হেক্টরে, ঝিনাইদহ জেলায় ৮০ হাজার ২৮৪ হেক্টরে, মাগুরা জেলায় ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টরে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৫ হাজার ৭৪০ হেক্টরে, মেহেরপুর জেলায় ১৯ হাজার ১০০ হেক্টরে ও কুষ্টিয়া জেলায় ৩৫ হাজার ১৩৬ হেক্টরে বোরো চাষ হয়েছে। এ ৬ জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮০ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। ধানের দাম বেশি হওয়ায় চাষিরা বোরো চাষে ঝুঁকেছে। এখন পর্যন্ত বোরো ক্ষেতের অবস্থা ভাল বলে চাষিরা জানায়। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ বেশি লাগছে। এতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বোড়াই গ্রামের কৃষক আফন উদ্দীন জানান, তিনি এবার আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। ধান থোর অবস্থায় আছে। তাদের এলাকায় বোরোর অবস্থা ভাল। মেহেরপুর সদর উপজেলার তেরঘরিয়া গ্রামের চাষি জিয়াউর রহমান জানান, সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। মাঝে হালকা পোকার আক্রমণ হয়েছিল। ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছে। ফসলের অবস্থা ভাল। বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ খরচ বেশি লাগছে। সেচ যন্ত্রের মালিকরা বিঘা প্রতি সেচ দিতে সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ জাহেদুল আমিন জানান, এবার পশ্চিমের জেলা গুলোতে বোরো ধানের অবস্থা ভাল। আগাম চাষকৃত ধানে শীষ বের হয়েছে। এক মাসের মধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হবে।
ঝিনাইদহের গত তিন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৮
ঝিনাইদহ :: গত তিন মাসে ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৮ জন। এ সময় আহত হন শাতাধীক মানুষ। রাস্তায় এই মৃত্যুর মিছিল কোন ভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। বরং দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে যাচ্ছে যেন রাস্তায় চলাচল মানেই এখন অনিশ্চিত যাত্রা। রাস্তাঘাটে বৈধ অবৈধ যানবাহনের আধিক্যে চলাচল করা ঝুকিপুর্ন হয়ে উঠেছে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ওভারটেকিং ও ইজিবাই ঘুরানোর ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা লেগেই আছে। বিশেষ করে মহাসড়কে অবৈধ নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, লাটাহাম্বার, মাটি টানা ট্রক্টর ও ইজিবাইকের দাপটে বাস, ট্রাক, বাইসাইকেল ও মটরসাইকেল চলাচল খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এমনও নজীর রয়েছে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকাও এখন অনিরাপদ। যদিও অসর্তকতার পাশাপাশি সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রন করতে না পারা, অদক্ষতা সর্বপরি বেপরোয়া গতির কারণে সড়কে অহরহ দৃর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। হাসপাতাল ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ঝিনাইদহে মারা গেছেন ৩৮ জন। এরমধ্যে কালীগঞ্জের বারোবাজারে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এমএ ক্লাসের ৬ ছাত্রসহ মারা গেছেন ১৯ জন। এছাড়া মহেশপুরে ১ জন, শৈলকুপায় ৯ জন, হরিণাকুন্ডুতে ৩ জন, কোটাচাঁদপুরে ১ জন ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি বছরের প্রথম দুর্ঘটনায় অবৈধ আলমসাধু গাড়ির চাপায় মৃত্যু ঘটে মহেশপুরের পুরন্দরপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের। একই বছরের ১৩ জানুয়ারি শৈলকুপার মদনডাঙ্গায় অবৈধ আলমসাধুর সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘষে ৬ জন নির্মান শ্রমিক নিহত হন। ১৮ জানুয়ারী হরিণাকুন্ডুর তেলটুপি গ্রামে অবৈধ মাটি টানার গাড়িতে চাপা পড়ে মারা যান রবিউল ইসলাম। একই দিন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আনসার অফিসের সামনে ট্রাক চাপায় নিহত হন ফাতেমা খাতুন নামে এক হোটেল শ্রমিক। ১৯ জানুয়ারি হরিণাকুন্ডুর বল্টুর মোড়ে মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন নয়ন লস্কার। ২২ জানুয়ারি হামদহ এলাকার ঘোষপাড়ায় ট্রাক চাপায় নিহত হন রিপ্তি বেগম। ২৯ জানুয়ারি সদর উপজেলার মধুপুরে ট্রাক চাপায় নিহত হন ইমন আহম্মেদ রবিণ। ২ ফেব্রয়ারি শৈলকুপার বড়দা গ্রামে বাস চাপায় নিহত হন আরিফ শেখ। ৫ ফেব্রয়ারি কালীগঞ্জ কৃষি অফিসের সামনে দুই মটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘষে থানা পাড়ার বাসিন্দা আরফান আহম্মেদ রাকিব নামে এক কলেক ছাত্র নিহত হন। ১০ ফেব্রয়ারি কালীগঞ্জের বারোবাজারে বেপরোয়া দ্রুতগামি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উল্টে গেলে মাস্টার্সের ৬ শিক্ষার্থীসহ ১২ জন নিহত হন। ১৭ ফেব্রয়ারি হরিণাকুন্ডুর কাপাশহাটিয়া বটতলায় মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় রাহুল হোসেন রাতুল নিহত হন। ২৫ ফেব্রয়ারি কালীগঞ্জের পাতবিলা নামক স্থানে দুই মটরসাইকেল ও বাসের সংঘর্ষে সৌভিক বিশ্বাস, সোহেল হোসেন ও আকরাম হোসেন নিহত হন। একই দিন সদর উপজেলার সুতি গ্রামে শিশু চন্দন দাস ইজিবাইক চাপায় নিহত হয়। ২৮ ফেব্রয়ারি সদরের গোয়ালপাড়া বাজারে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে টুলু শেখ মটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হন। পহেলা মার্চ কালীগঞ্জের নরেন্দ্রপুর গ্রামে লাটাহাম্বার চালানো শিখতে গিয়ে জুলহাস নিহত হন। ১৩ মার্চ কালীগঞ্জের মেক্সি সুপার মার্কেটের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় হাসিবুর রহমান নামে এক মটরসাইকেল চাল নিহত হন। ২৭ মার্চ শৈলকুপার কাঁচেরকোল গ্রামে মটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ব্র্যাকের অডিট অফিসার জিল্লুর রহমান নিহত হন। একই দিন শৈলকুপার লাঙ্গলবাঁধ বাজারে ট্রাক চাপায় সাইফুল ইসলাম লাল মন্ডল, কালীগঞ্জের কেয়াবাগানে ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় ট্রাকচাপায় শিশু আবু হুরাইরা ও কোটচাঁদপুরের চৌগাছা সড়কে মটরসাইকেলের ধাক্কায় হাফেজ ইকতিয়ার নিহত হন। ঝিনাইদহের এসব দুর্ঘটনা নিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ঝিনাইদহ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান জানান, সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকায় কর্মক্ষম ব্যক্তি ও তরুণদের সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশের সড়ক মহাসড়কে যে পরিমান জানমালের ক্ষতি হয় তা অন্য কোন উন্নত রাষ্ট্রে কল্পনা করা যায়না। তিনি বলেন, সড়ক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ও অসচেতনার কারণে ঝিনাইদহে প্রতিনিয়ত মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে। এটা রোধ করতে হলে সচেতনা ও নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সড়ক মহাসড়কে নিয়মিত অভিযোন জোরদার করে অবৈধ যান নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোন চাপ বা সুপারিশ অগ্রাহ্য করতে হবে। ঝিনাইদহ ট্রাফিক পরিদর্শক সালাহউদ্দীন জানান, সড়ক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘনার অন্যতম কারণ হচ্ছে নছিমন, করিমন ও ইজিবাইকসহ অবৈধ যানবাহন। নছিমন করিমন তৈরী হয় কুষ্টিয়ায়। আমাদের এখন উৎপত্তিস্থল বন্ধ করতে হবে। এটা না করতে পারলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। তিনি বলেন স্পিডগান বা গতি সনাক্তকারী যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা গড়াই ও রুপসা পরিবহনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছি। তারা এখন ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার স্পিডে গাড়ি চালায়। তিনি বলেন মহাসড়কে অবৈধ যান বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। ঝিনাইদহ ট্রাফিক বিভাগ সাধ্যমতো চেষ্টা করছে সড়কে শৃংখলা ফেরাতে।
শৈলকুপার লাঙ্গলবাঁধবাজারে জিকে খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
ঝিনাইদহ :: বুধবার সারা দিন ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ বাজার এলাকার বাস ষ্টান্ডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের দুই পাশে অবস্থিত প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। সহকারী কমিশনার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিনাতুল ইসলাম ও পার্থ প্রথীম শীল এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কাজের দায়িত্ব পালন করেন। এ ব্যাপারে ভুক্ত ভোগী মনাকুমার কুন্ডু জানান পানিউন্নয়ন বোডের জায়গা মাপ সঠিক নয় বলে অভিযোগ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝিনাইদহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম জহরুল হক জানান, প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশের ন্যায় এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গাতে যে সব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সব উচ্ছেদ করা হবে।
টাঙ্গাইল কালচারাল অফিসার হত্যার প্রতিবাদে ঝিনাইদহে মানববন্ধন
ঝিনাইদহ :: টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার খন্দকার রেদওয়ানা ইসলামের হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বুধবার সকালে ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমীর সামনে এ কর্মসূচীর আয়োজন করে জেলা কালচারাল অফিস। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে কালচারাল অফিসের কর্মচারী, প্রশিক্ষক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। কর্মসূচীতে একাত্বতা ঘোষনা করেন এসময় বক্তব্য রাখেন, ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর এডহক কমিটির সদস্য অশোক ধর, একরামুল হক লিকু, সদর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, জেলা কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিনসহ অন্যান্যরা। এসময় বক্তারা বলেন, দেশীয় সাংস্কৃতির চর্চা, লালন ও বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মেধাবীরা এদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে ভালবেসে এই চাকুরীতে আসেন। মেধাবী এই সন্তান খন্দকার রেদওয়ানা ইসলামমে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সাথে জড়িতদের দ্রুত শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে দেশের শিল্প সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখতে এই কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ও চাকুরীর সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালের একটি ভিআইপি কক্ষ থেকে টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার খন্দকার রেদওয়ানা ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।