বৃহস্পতিবার ● ১ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু ১ হাজার ৪০০ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রা
সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু ১ হাজার ৪০০ কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রা
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: সুন্দরবন মধু আহরণ মৌসুম প্রতি বছরের মতো বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল)শুরু ১ হাজার ৪০০ কুইন্টাল আহরণের নিয়ে শুরু হচ্ছে মধু আহরণ মৌসুম। এ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এ বছরও মৌয়ালদের অনুমোদন দেয়া শুরু করেছে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ।
এরই মধ্যে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে সুন্দরবনে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের প্রায় পাঁচ হাজার মৌয়াল। বনে যাওয়ার পাস পারমিটের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম। এ জন্য বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জের স্টেশন অফিসগুলোতে ওই দিন থেকেই পাস-পারমিট দেয়া শুরু হবে।
এ বছর ১ হাজার ৪০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০ কুইন্টাল মধু এবং ৩০০ কুইন্টাল মোম। ওই বছর আহরণ করা হয়েছিল ১ হাজার ২২০ কুইন্টাল মধু ও ৩৬৬ কুইন্টাল মোম।
মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ফুলের মধু আসে। এর পর আসে গারণ ফুলের। শেষে আসে কেওড়া ও ছইলা ফুলের মধু। এই তিন প্রজাতির মধুর মধ্যে সবচেয়ে দামী হচ্ছে খলিশার মধু।
কিন্তু এ বছর এ অঞ্চলে কোনো বৃষ্টি হয়নি। আর বৃষ্টি না হওয়ায় ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়, তাই মধু কম জমে। তাই এ বছর মধু কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
মধু আহরণে নৌকা নিয়ে মধু আহরণে যাচ্ছেন মৌয়ালরা। ছবি: সংগৃহীত
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার মৌয়াল আব্দুল জলিল তালুকদার বলেন, পারমিট নিয়ে বনে যাব। আমার নৌকায় ১২জন সহযোগী আছেন। মৌসুমের তিন মাসে মধু আহরণ করতে গিয়ে প্রত্যেক মৌয়ালের খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এবার বৃষ্টি নেই। তাই মধু কেমন হবে তা বলা যাচ্ছে না।’
শরণখোলার খুড়িয়াখালী গ্রামের মধু ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ জানান, তিনি এ বছর তিনটি নৌকায় দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় বেশি বিনিয়োগের সাহস পাননি তিনি।
একই উপজেলার মৌয়াল সোবাহান হাওলাদার জানান, তার নৌকায় ১০ জন মৌয়াল আছেন। মৌসুমের প্রথম দিনেই তারা পাস নিয়ে বনে যাবেন। তারা গহীন বন থেকে মধু সংগ্রহ করবেন। গত বছর ২৫ হাজার টাকা মণ দরে মধু বিক্রি করেছেন তিনি।
খুলনা পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র শেখ রাহাতুল ইসলাম জয় জানান, মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাগেরহাটের কতশত মৌয়ালের প্রাণ গেছে তাদের খোঁজ নেয় না কেউ। দেয় না প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা। এই সুন্দরবন উপকূলে রয়েছে এমন শতশত বাঘবিধবা যাদের স্বামীরা গেছে বাঘের পেটে। তারা এখনও অন্য মৌয়ালদের কথা চিন্তা করে। যারা বাঘ বিধবা হয়নি সেসব নারীরা এতিম না হওয়া সন্তানরা চোখের পানিতে বিদায় দেয় মৌয়ালদের মধু সংগ্রহে যাওয়ার সময়।
বুড়িগোয়ালিনীর এনামুল ইসলাম বলেন, মধু সংগ্রহ করে মৌয়ালরা কিন্তু লাভ পায় মধ্যস্বত্বভোগীরা তাই মৌয়াল পরিবারদের দাবি তাদের এলাকায় যদি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কুরিয়ার বা ডাক ব্যবস্থা থাকতো তাহলে তারা উপকৃত হতো।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনে মধু আহরণের জন্য বন বিভাগের পক্ষে থেকে মৌয়ালদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-সংরক্ষিত অভয়ারণ্য থেকে মধু আহরণ করা যাবে না এবং কোনো মৌয়াল নিষিদ্ধ বনাঞ্চলে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তার পারমিট বাতিল করা হবে। এ ছাড়া মৌয়ালরা মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুণ্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবেন না। এগুলোসহ ৯টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মৌয়ালদের।’
তিনি আরও জানান, এবার বৃষ্টি না হওয়ায় মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকবে কি না তা আগে বলা যাচ্ছে না।
মোরেলগঞ্জে ইমা পরিবহন ইজিবাইক সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ইমা পরিবহন ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ইজিবাইকের যাত্রী রুস্তুম আলী শিকদার(৬৫) নিহত ও তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম(৬০) ও ইজিবাইক চালক রানা শেখ(৩০) গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ৯টার দিকে সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহা সড়কের দৈবজ্ঞহাটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রুস্তুম আলী শিকদারের বাড়ি চিংড়াখালী ইউনিয়নের নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে। আজ সকালে তিনি বাগেরহাট থেকে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ইজিবাইকে বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোরেলগঞ্জ থেকে যশোরগামী ইমা পরিবহনের সাথে সংঘর্ষ হয়।
মোরেলগঞ্জ থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌছে নিহতের লাশ হেফাজতে নিয়েছে। আহত অপর দুজনকে আশংকাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাসটি আটক করা হয়েছে। চালক পালিয়ে গেছে।
মোরেলগঞ্জে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট মানুষ কলসি হাতে দূর-দূরান্তে ছুটছে মানুষ
বাগেরহাট :: সিডর ও আইলা ক্ষতিগ্রস্থ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র এখন খাবার পানির জন্য হাহাকার ও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই দেখা দেয় এ সংকট।
উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন সহ পৌর এলাকায় খাবার পানির এ সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানিয় জলের জন্য সর্বত্র হাহাকার বিরাজ করছে। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নলকূপে আর্সেনিক,অকেজো নলকূপ ,পিএসএফ এর কারনে এ সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ সরকারি নলকূপ ও পিএসএফ অকেজো। পাশাপশি বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্মিত শত শত নলকূপও অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
মোরেলগঞ্জ পৌর সদরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসী বিশুদ্ধ পানির অভাবে অভাবনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। উপজেলার ৩০৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশতে কোন টিউবওয়েল নেই। আর যেগুলোতে আছে তাও অকেজো অবস্থায় রয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশ ও তত্ত্বাবধায়নের অভাবে এসব নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। শত শত নলকূপের যন্ত্রাংশ ইতোপূর্বে চুরি হয়ে গেছে। একটি চোরাকারবারী চক্র এসব নলকূপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রাতের আঁধারে চুরি করে বিক্রি করছে।
উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,মোরেলগঞ্জ , জিউধরা, নিশানবাড়ীয়া, খাউলিয়া,বলইবুনিয়া সহ অধিকাংশ ইউনিয়নে এ মৌসুমে পানিতে অতিরিক্ত লবনাক্তার কারণে পুকুরের পানি পান করতে পারছে না এলাকাবাসী।
অপরদিকে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাবার কারনে প্রতিটি গ্রামের বাসিন্দারা দূর দূরন্ত থেকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে, নৌকায় চড়ে খাবার পানি সংগ্রহ করছে। অনেক খোলা পুকুর খাল ও নদী নালার পানি পান করছে। সদর ইউনিয়ন ও পৌরবাসীকে খাবার পানির জন্য একমাত্র পুরাতন থানার পুকুরের পানির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
তাও বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে গেছে এ পুকুরের পানি এখন তলানিতে। সকাল থেকে রাতভর এ পুকুর থেকে সমান ভাবে পানি নেয়া হয়। এছাড়াও পৌর সদরের কুঠিবাড়ি,এসএম কলেজ পুকুর থেকে ময়লাযুক্ত পানি হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ,পেটের পীড়া সহ নানান রোগে ভুগছে শিশু সহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন।
বিশুদ্ধ পানির অভাবে মোরেলগঞ্জ সদর হাসপাতালের রোগীদের সংখ্যাও কমনয়। হাসপাতালের একমাত্র পুকুরটি শুকিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এর পাশে থাকা পিএসএফ ব্যবহার না করার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে। নিরুপায় রোগীদের ভরসা নদীর পানি। নদীর পানি পান করে তারা আরো রোগাগ্রস্থ হচ্ছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের সরকারিভাবে ৭০টি ও বেসরকারিভাবে ১৬ শ’ পানীয় জলের পুকুর রয়েছে। পিএসএফ রয়েছে প্রায় ১ হাজার। এর মধ্যে ১’শ টি চালু রয়েছে।
অকেজো রয়েছে ৪ শতাধিক। ১০টি গভীর নলকূপের মধ্যে জিউধরা ইউনিয়নে একটি চালু রয়েছে। রেইন ওয়াটার হার্বেষ্টিং প¬ান্ট রয়েছে ১’শ টি । সদর ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামে চালু রয়েছে একটি রিংওয়েল (পাত কুয়া)। স্যালো টিউবয়েল রয়েছে ৩ হাজার ৬ শ’ ৭০ টি। জরিপ অনুযায়ী স্যালো টিউবয়েল অকেজো রয়েছে ২ হাজার। পঞ্চকরণ ইউনিয়নে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কথা থাকলেও তার কোন হদিস নাই।
উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আরো জানান, ১৬ ইউনিয়নে আর্সেনিক জরিপে ২০০৩ সালের আর্সিনিক জরিপ অনুযায়ী উপজেলা সব ইউনিয়নে কম বেশী আর্সেনিক চিহিৃত টিউবওয়েল রয়েছে। তবে বনগ্রাম ,হোগলাবুনিয়া, হোগলাপাশা ইউনিয়নের আর্সেনিক চিহিৃত টিউবওয়েল রয়েছে সবচেয়ে বেশি ও ভয়ানক আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে এ ইউনিয়নটি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তরের হিসাবের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। প্রায়ই হিসাবই কাগুজে কলমে। উপজেলা ইউনিয়ন গুলোতে মাইলের পর মাইল হাটলেও দু’একটি ছাড়া কোন সচল টিউবওয়েল দেখা যাবেনা। পৌর সদরের চিত্র একই। যেসব টিউবওয়েল সচল রয়েছে থালা-বাসন ধোঁয়া ছাড়া পানের অযোগ্য।
তবে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কামাল হোসেন মুফতি জানান, বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডাইরিয়া, আমাশয়, টাইফেয়ডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।