বৃহস্পতিবার ● ১ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » বিশ্বনাথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মা-মেয়ের দাফন সম্পন্ন
বিশ্বনাথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মা-মেয়ের দাফন সম্পন্ন
স্টাফ রিপোর্টোর :: সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে গতকাল বুধবার (৩১ মার্চ) বিকেলে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত বিশ্বনাথ পৌর শহরের চানশিকাপন গ্রামের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চেরাগ আলীর স্ত্রী রাহেলা বেগম (৫০) ও মেয়ে কামরুন নেছা শিপা (২০) নিহত হন। এঘটনায় পূর্ব চানশিরকাপন গ্রামের ডাক্তার বাড়িসহ পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতদের স্বজনদের আর্তনাদ আর আজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনেরা।
আজ বৃহস্পতিবার ১ এপ্রিল সকাল ১০টায় পূর্ব চাঁনশিকাপন জামে মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহে নিহতদের জানাযারা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে শায়িত হন রাহেলা বেগম ও তার মেয়ে কামরুন নেছা শিপা।
আত্মীয়ের বিয়েতে অংশগ্রহন করতে বুধবার বিকেলে বিশ্বনাথ থেকে সিএনজি অটোরিকশা যোগে দক্ষিণসুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের রুস্তুমপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন রাহেলা বেগম (৫০) ও তার মেয়ে কামরুন নেছা শিপা (২০)। তাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের সামনে পৌছামাত্র পিছন দিক থেকে আসা একটি হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস বাস সজোরে ধাক্কা দেয় তাদের অটোরিকশাকে। এসময় ঘটনাস্থলেই মারা যান শিপার মা রাহেলা বেগম ও অটোরিকশা চালক শামীম মিয়া এবং গুরুত্বর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মারা যান কামরুন নেছা শিপা।
বিশ্বনাথে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে মায়ের পর ছেলের মৃত্যু
বিশ্বনাথ :: গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে মায়ের মৃত্যুর পর আজ ছেলেও মৃত্যুবরণ করেছেন। নিহতের নাম ময়নুল আলী। তিনি আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন।
উল্লেখ্য, ২২ মার্চ বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামের দরিদ্র ওয়ারিছ আলীর রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে স্ত্রী দিলারা বেগম, ছেলে ময়নুল ইসলাম ও ফয়ছল আহমদ অগ্নিদগ্ধ হন।
২৬ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন দিলারা বেগম। আজ বৃহস্পতিবার দিলারা বেগমের ছেলে ময়নুল ইসলাম বেলা ২টায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
বিশ্বনাথে আগ্রহ কমেছে টিকায়, ফেরত ১০ হাজার ডোজ
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় করোনাভাইরাসের টিকা প্রথম দিকে দিনে শতাধিক লোক নিলেও, বর্তমানে এ সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এ কারণে টিকার মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে অন্যত্র ব্যবহারে জন্যে ১০ হাজার ৫শ ডোজ টিকা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ফেতর পাঠিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স-এর টিকাদান কেন্দ্রে ১৩শ ৫৫ ভায়েল টিকা নিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ভয় ও জড়তা কাটিয়ে টিকা নিতে আগ্রহী হন সাধারণ মানুষ।
প্রতিদিন বাড়ে টিকা গ্রহীতাদের উপস্থিতি। কিন্তু হুট করেই আগ্রহ কমে আসায় টিকা নিতে এ পর্যন্ত রেজিষ্ট্রেশন করেছেন মাত্র ৪ হাজার ১শত ৩৭জন।
২৯ মার্চ সর্বশেষ টিকা গ্রহণ করেছেন ১৯জন নারী-পুরুষ। এ নিয়ে টিকা গ্রহীতাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮শ ২১জন, ব্যবহার হয়েছে মাত্র ২শ ৮৮ ভায়েল টিকা। টিকা নিতে অনীহা থাকায় ১ হাজার ৫০ ভায়েল (১০ হাজার ৫শ ডোজ) টিকা হাসপাতালে সংরক্ষিত ছিল।
এসব টিকার মেয়াদ আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত রয়েছে। ফলে মেয়াদ শেষের আগেই টিকাগুলো অন্যত্র ব্যবহারের জন্য ১০ মার্চ ৮ হাজার ভায়েল এবং ২৪ মার্চ আরও ২শত ৫০ ভায়েল ভ্যাকসিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুর রহমান মুসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেয়াদ উর্ত্তীণের পূর্বে অন্যত্র ব্যবহারের জন্যে এগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তবে টিকার কোন সংকট নেই আমাদের। এখনো ১৭০ ডোজ টিকা সংরক্ষিত রয়েছে। আগ্রহীরা এই টিকা নিতে পারবেন। ‘
বিশ্বনাথে ডাক্তার বাড়িতে শোকের মাতম স্ত্রীর খবর জানলেও মেয়ের মৃত্যুর খবর জানেন না পিতা
বিশ্বনাথ : সিলেটের বিশ্বনাথ পৌর এলাকার পশ্চিম চান্দশিরকাপন গ্রামের ডাক্তার বাড়িতে বিরাজ করছে শোকের মাতম। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে বুধবার (৩১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় পশ্চিম চানসিকাপন গ্রামের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চেরাগ আলীর স্ত্রী-কন্যার মৃত্যুতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বুধবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত স্ত্রীর মৃত্যুর খবর জানলেও অতি আদরের ছোট মেয়ের মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না হতভাগা পিতা ডাঃ চেরাগ আলী। আর তাই বার বার অত্নীয়-স্বজনদের কাছ জানতে চাচ্ছেন হাসপাতালে কেমন আছে তার আদরের ছোট মেয়েটি।
মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চেরাগ আলীর স্ত্রী রাহেলা বেগম (৫০) ও তাদের ছোট মেয়ে কামরুন নেছা শিপা (২০)’র মর্মান্তিক এই দূর্ঘটনার খবর মুহুর্তেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে চাঁনশিকাপন গ্রামসহ পুরো পৌর শহরে। দূর্ঘটনার পরই ডাঃ চেরাগ আলী জানতে পারেন তার স্ত্রী রাহেলা বেগম মারা গেছে আর ছোট মেয়ে কামরুন নেছা শিপা মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কিন্ত তাকে এখনও জানানো হয়নি যে, তার আদরের মেয়ে শিপাও চিরদিনের জন্য চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
বুধবার রাত ৯টায় হাসপাতাল থেকে নিহত মা ও মেয়ের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। বসতঘরের একটি কক্ষের বসে ডাঃ চেরাগ আলী কান্না আর আহাজারি করছেন আর ব্যাকুল হয়ে বার বার সবার কাছে চানতে চাইছেন তার মেয়ে শিপা এখন কেমন আছে, সুস্থ আছে তো?। অথচ পাশের কক্ষেই রাখা হয়েছে শিপা ও তার মা রাহেলা বেগমের মরদেহ। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্খায় চেরাগ আলীকে এখনও তার মেয়ের মৃত্যুর সংবাদটি জানাতে পারছেন না স্বজনেরা। খবর পেয়ে বাড়িতে আসা লোকজন বাকরুদ্ধ।
নিহতদের পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন উপস্থিত সকলেই। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে শিপা ছিলেন সবার ছোট। তার বড় বোন ডাঃ মেহেরুন নেছা রিপা ঢাকা বার্ডেম হাসপাতালের সহকারী সার্জন, বড় ভাই ডাঃ আবুল কালাম আজাদ মেডিসিন এফসিপিএস শেষ বর্ষে পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের সন্ধানী ডিজিটাল ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন এবং আরেক ভাই আবুল খয়ের সাজাদ এলএলবি সম্পন্ন করে সিলেট জজ কোর্টে প্রেকটিস করছেন। শিপারও স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা করে বোন ও ভাইদের মতো প্রতিষ্ঠিত হবে। সে এবার সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ভাই ও বোনদের মধ্যে সবার ছোট হওয়ায় শিপা ছিলো সকলের আদরের। আর তাইতো তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনেরা।
নিহতের চাচাতো ভাই ও বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, খালাতো বোনের বিয়েতে অংশগ্রহন করতে বুধবার বিকেলে মায়ের সঙ্গে দক্ষিণসুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের রুস্তুমপুর গ্রামে খালার বাড়িতে যাচ্ছিলেন শিপা। তাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের সামনে পৌছামাত্র পিছন দিক থেকে আসা একটি হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস বাস সজোরে ধাক্কা দেয় তাদের অটোরিকশাকে। এসময় ঘটনাস্থলেই মারা যান শিপার মা রাহেলা বেগম ও অটোরিকশা চালক শামীম মিয়া এবং গুরুত্বর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মারা যান কামরুন নেছা শিপা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চাঁনশিকাপন জামে মসজিদে নিহতদের জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রাহেলা বেগম ও তার মেয়ে কামরুন নেছা শিপার দাফন সম্পন্ন করা হবে।