সোমবার ● ৫ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » কালবৈশাখী ঝড়ে গাইবান্ধায় ১০ জনের মৃত্যু
কালবৈশাখী ঝড়ে গাইবান্ধায় ১০ জনের মৃত্যু
সাইফুল মিলন, ষ্টাফ রিপোর্টার :: গাইবান্ধায় কালবৈশাখী ঝড়ে ৫ উপজেলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয় অন্তত ৬০ জন। এছাড়া প্রায় ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
গতকাল রবিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে বৃষ্টিহীন ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলা লন্ডভন্ড হয়।
এসব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়াসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। এখনও অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাস্তার উপর গাছ পড়ে থাকায় যানবাহন চলাচলও সাময়িক ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন জানান, ঝড়ে গাইবান্ধা সদরে চারজন, পলাশবাড়ীতে তিনজন, ফুলছড়িতে দুইজন এবং সুন্দরগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
নিহতরা হলেন, গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের হরিণসিংগা গ্রামের হিরু মিয়ার ছেলে মুনির (৫), একই ইউনিয়নের আরিফ খান বাসুদেবপুর গ্রামের রিজু মিয়ার স্ত্রী আর্জিনা বেগম (২৮), বাদিয়াখালী ইউনিয়নের রিফাইতপুর সরকারেরতারি গ্রামের খগেন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী জোৎস্না রানী (৫৫) ও মালিবাড়ী ইউনিয়নের ঢনঢনিপাড়া গামের মিঠু মিয়ার স্ত্রী সাহারা বেগম (৪১),
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের বাকেরপাড়া গ্রামের ইউনুছ আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম (৫০), একই ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আবদুল গোফ্ফার (৪২), মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের আবদুল কাদের মিয়ার স্ত্রী মমতা বেগম (৬৪),
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত হলদিয়া গ্রামের সোলায়মান আলীর স্ত্রী ময়না বেগম (৪৬),
ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি গ্রামের বিশু মিয়ার স্ত্রী শিমুলি বেগম (২৮) এবং এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের ডাকাতিয়ার চর গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে হাফিজ উদ্দিন (৬৫)।
গতকাল রবিবার বিকেল ৩টার দিকে পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের ডাকেরপাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম বাড়ি উঠানে সাংসারিক কাজ করছিলেন। হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের এক পর্যায়ে একটি গাছ উপড়ে পড়লে তাতে চাপা পড়ে জাহানারা ঘটনাস্থলে মারা যান।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আবদুল গোফ্ফার মোস্তফাপুর বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে একটি গাছ তার ওপর উপড়ে পড়ে। এতে তিনি চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান বলে জানানো হয়েছে বলেন পলাশবাড়ীর থানার অফিসার ইনজার্জ(ওসি) মাসুদার রহমান।
মালিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আজম জানান, গাইবান্ধা সদরের ঢনঢনি পাড়ার সাহারা বেগম ঝড় শুরু হলে খড়ি কুড়াইতে বাড়ির উঠানে যান। এ সময় গাছের ডাল তার মাথায় ভেঙে পড়লে তিনি মারা যান।
ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান গাছ চাপায় এক নারী নিহত খবর জানিয়ে বলেন, বেলা সোয়া ৩টার দিকে কিশামত হলদিয়া গ্রামের ময়না বেগম বাড়ির আঙিনায় কাজ করছিলেন। এ সময় বাড়ির একটি গাছ ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে মারা যান ময়না।
ফুলছড়ি থানার ওসি কাওছার আলী জানান, বেলা পৌনে ৪টার দিকে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি গ্রামের বিশু মিয়ার স্ত্রী শিমুলি বেগম একইভাবে বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় গাছ চাপায় মারা যান।
এদিকে, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ইদ্রিশ আলী জানান, ঝড়ে শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। গাইবান্ধা জেলার অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা জরিপ করে দেখা হচ্ছে।