বুধবার ● ৭ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে হাজার হাজার নলকূপে উঠছে না পানি
ঝিনাইদহে হাজার হাজার নলকূপে উঠছে না পানি
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে হাজার হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। পানি নেই নলকূপেও। ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জেলার ছয় উপজেলায় লক্ষাধীক নলকূপে বর্তমানে এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে।এরমধ্যে জেলার শুধুমাত্র শৈলকূপা উপজেলাতেই ৩০ হাজার নলকূপ প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এছাড়া জেলা সদর, কালীগঞ্জ ও মহেশপুর, শৈলকুপাসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ নলকূপেই পানি উঠছে না। কিছু কিছু জায়গাতে পানি মিললেও চলতি মাসের শুরুতে একেবারেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে অনেক নলকূপ। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ক্রমেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এদিকে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ্য পানি উত্তোলন করে ইরিধানের জমিতে সেচ দেওয়া এবং গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে জেলার নলকূপগুলোর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ অঞ্চলে দির্ঘদিন বৃষ্টি নেই। এছাড়া প্রতি শুষ্ক মৌসুমে জেলার শৈলকুপায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের সেচ খালগুলিতে পানি দিয়ে থাকে কিন্তু এবার কোনো পানি না দেওয়ায় বেশি বিপাকে পড়েছেন এ উপজেলার কৃষকরা। এমন অবস্থায় তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির। ফলে গৃহস্থালীর কাজে যেমন অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে তেমনি গরু-ছাগল বা গৃহপালিত পশু-পাখির বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছেন তারা জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিলে শুষ্ক মৌসুমে পানির এমন সংকট হত না। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে রয়েছে ছয় উপজেলা। জেলার ভেতর দিয়ে নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, গড়াইসহ বেশকিছু নদনদী প্রবাহিত হচ্ছে। তবে একমাত্র গড়াই বাদে সবই এখন মৃত। এসব নদ-নদীর বুকে হচ্ছে ফসলের চাষ। এমন অবস্থায় ইরিধানের সেচকাজ করতে অনেকে মোটর বা শ্যালো মেশিন পাঁচ থেকে দশ ফুট মাটি খুড়ে সেচকাজ করছেন। অনুসন্ধান ও তথ্য নিয়ে জানা গেছে, জেলার মধ্যে শৈলকূপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫শ নলকূপ। যার ভেতরে এই মুহূর্তে ৩০ হাজার নলকূপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে ২ লক্ষাধীক মানুষের জীবনযাত্রা এখন প্রায় অচল। জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের শৈলকূপা উপজেলার কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই উপজেলাতে ৩৭ হাজার ৫শ নলকূপ রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি নলকূপ মাত্র ১৫শ। বাকি সব ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত। কালীগঞ্জ উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানান, উপজেলার বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানির সংকট শুরু হয়েছে। তাদের অফিসপাড়ায় চারটি নলকূপই প্রায় অকেজো। সরেজমিনে শৈলকুপার মনোহরপুর, বিজুলিয়া, হিতামপুর, পৌরসভার হাবিবপুর, কবিরপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সমস্ত অগভীর নলকূপ অকেজো। গত মাসেও কিছু নলকূপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি এপ্রিলে এসে একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে। মনোহরপুর গ্রামের গৃহবধূ সাগরী, কৃষক মোকন মিয়া, বিজুলিয়া গ্রামের কৃষক ভুন্ডলে মিয়াসহ অনেকে জানান, গত কয়েকমাস ধরেই তাদের নলকূপে পানি অল্প উঠছিল। কিন্তু সম্প্রতি কোনো পানিই উঠছে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে নলকূপের নিচে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে ইঞ্জিন চালিত জলমোটর বা সাবমার্সিবল পাম্প বা এ জাতীয় মোটর স্থাপন করে নলকূপের পানি সচল রাখছে। জেলার টিউবওয়েল ব্যবসায়ী মমিনুর রহমান জানান, তাদের শ্রমিকরা গ্রামাঞ্চলে নলকূপ বসিয়ে থাকে। সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির লেয়ার বা স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পানির লেয়ার মিলছে। তবুও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না বলে এই ব্যবসায়ী জানান। এমন পরিস্থিতিতে কৃষিকাজে পরিকল্পিত সেচ কার্যক্রম চালানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সচেতন মহলের অনেকেই। মাঠে সেচকাজে ব্যাপকহারে সেচপাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পনির অতিরিক্ত ব্যবহার করায় সংকট বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। সুপেয় পনির সংকটে জনস্বাস্থ্য প্রসঙ্গে শৈলকুপা হাসপাতালের ডাক্তার রাশেদ আল মামুন জানান, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করতে পারলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায়। বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটেরপিড়াসহ নানা অসুখে পড়ে। জনস্বাস্থ্য অধিদফতর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা তাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ৩২ হাজার নলকূপ স্থাপন করা আছে। আর এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। তিনি জানান, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলে তারা জানিয়েছেন যাতে ডিজাইনমাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাস হয়। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে।