শনিবার ● ১০ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় আওয়ামীলীগ নেতার বাড়ী থেকে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার
গাইবান্ধায় আওয়ামীলীগ নেতার বাড়ী থেকে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার
সাইফুল মিলন, ষ্টাফ রিপোর্টার :: গাইবান্ধায় জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার বাড়ি থেকে হাসান আলী নামে একজন জুতা ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুদ রানাকে আটক করা হয়েছে।
ধারের টাকা না পেয়ে টানা এক মাস ওই ব্যবসায়ীকে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন হাসান আলীর পরিবারের সদস্যরা। হাসান আলীর স্ত্রী বিথী বেগমের অভিযোগের পর ব্যবসায়ী হাসানকে উদ্ধার করলেও আবারো মাসুদ রানার জিম্মায় দেয় পুলিশ। তবে থানা থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হয়নি পুলিশ।
আজ ১০ এপ্রিল শনিবার সকালে গাইবান্ধা সদরের বল্লমঝাড় ইউনিয়নের নারায়নপুর এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় শহরের জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীর ঝুলন্ত মরদেহ।
এদিকে হাসান আলীর ভায়রা একেএম মামুনুর রশিদ কল্লোল জানান, শনিবার ভোরে হাসান আলীর মোবাইল থেকে স্বজনদের কাছে পাঠানো ক্ষুদে বার্তা দেন। ক্ষুদে বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো- মাসুদ রানা আমার উপর অনেক নির্যাতন ও ভয় দেখানোর কারনে, আমি এ পথ বেছে নেই। আরো দায়ী বাবু মিয়া ও রোমান হক। কারন তারা, আমার দোকান কেড়ে নেয়, আমাকে সর্বশান্ত করে। মাসুদ রানা আমাকে ৫ মার্চ ২০২১ তারিখে তার বাসায় বন্দি করে। আমার পরিবারের কেহ দায়ী না। সে আমার ওয়াইফকে নানান ভাবে হুমকি ও ফাঁসানোর চেষ্টা চালাইছে ও থানাতে মিথ্যা অভিযোগ করছে, দোষ করলে আমি করছি, আমার পরিবাররের কেহ না। সে আমাকে থানাতে ভয় দেখায় ও সাদা কাগজে মিথ্যা কথা লিখিয়ে থানাতে জমা দিছে, আমার দেনা আমার, আর কেউ না। সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এটা করছে। ইতি হাসান আলী, ৬.৪.২১।
এদিকে হাসান আলীর স্ত্রী বিথী বেগম ও শ্যালিকা শাহেদা বেগম অভিযোগ করেন, গত ৫ মার্চ হাসান আলীকে আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানা তার নিজ বাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান। হাসানের স্ত্রী বিথী বেগম থানায় অভিযোগ করলে ৭ মার্চ পুলিশ হাসানকে মাসুদ রানার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে থানায় আনে। সেখানে পুলিশ ও মাসুদ রানা তাদের কাছে হাসানের পাওনা পাঁচ লাখ টাকা দাবী করে। দেড় লাখ টাকা দিতে চাইলে তারা হাসানকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করে এবং বিথীর কাছে লিখিত চায়। পরে বিথি ও তার বোন বাড়িতে চলে যায়। এরপর পুলিশ হাসানকে পরিবারের জিম্মায় না দিয়ে আবারো মাসুদ রানার জিম্মায় দেয় বলে অভিযোগ করেন হাসান আলীর স্ত্রী বিথী, ভায়রা একেএম মামুনুর রশিদ কল্লোল ও শ্যালীকা সাহেদা বেগম।
আটকের আগে আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদ রানা বলেন, থানায় গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরামর্শে হাসান আলীর কাছে থানায় লিখিত নিয়ে হাসানকে আবারো নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। এসময় মাসুদ রানা একটি লিখিত অঙ্গিকারের কাগজ দেখান।
ওই অঙ্গিকারে লেখা..
অঙ্গিকার নামা, আমি মো. হাসান আলী, পিতা মৃত হযরত আলী, মাতা মৃত সুফিয়া খাতুন, সাং গোরস্থান পাড়া, আমি আমার স্ত্রী বিথী বেগম, আমরা উভয়ে মাসুদ রানা ভাইয়ের কাছ থেকে নগদ টাকা ১৯ লাখ ৩৬ হাজার গ্রহন করি। বর্তমানে স্ত্রীর হাতে টাকা থাকতে সে বিভিন্ন তালবাহানা করে। আমি নিরুপায় হয়ে সজ্ঞানে, সুস্থ্য মস্তিষ্কে মাসুদ রানা ভাইয়ের কাছে চলিয়া গেলাম, আমার কোন কিছু হলে মাসুদ ভাই দায়ী থাকিবে না। আমার স্ত্রী মোছা. বিথী বেগম ও তার ভাই বোন দায়ী থাকবে। ইহা আমার অঙ্গিকার। হাসান আলী, ১৩.৩.২০২১।
এদিকে ঘটনাস্থল মাসুদ রানার বাড়িতে সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সাথে এসব ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তারা রাজি হননি।
অন্যদিকে শনিবার দুপুরে আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদ রানাকে তার বাড়ি থেকে হ্যান্ডকাপ ছাড়া আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় হামলা চালায় স্থানীয় জনতা। পরে হ্যান্ডকাপ ও হেলমেট পরিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এব্যাপারে শনিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।