বৃহস্পতিবার ● ১৫ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » করোনায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সাবেক মহাপরিচালকসহ দুই জনের মৃত্যু
করোনায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সাবেক মহাপরিচালকসহ দুই জনের মৃত্যু
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল বুধবার হাওয়াতুন নেছা (৫৭) নামে এক নারী ও প্রফেসর আব্দুল লতিফ (৭৭) নামে এক শিক্ষাবিদের মৃত্যু হয়েছে। হাওয়াতুন নেছা হরিণাকুন্ডু উপজেলার হামিরাটি চাঁদপুর গ্রামের আনসার আলী কটার স্ত্রী। ৬ দিন আগে হাওয়াতুন নেছার স্বামী আনসার আলী করোনায় মারা যান। এদিকে প্রাথমিক ও গনশিক্ষা বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর আব্দুল লতিফ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের মান্দিয়া গ্রামের শামুছুদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে। প্রফেসর আব্দুল লতিফ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ খান এ তথ্য জানান। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে এই নিয়ে ঝিনাইদহে স্বামী-স্ত্রী ও মা মেয়েসহ ১০ জনের মৃত্যু হলো। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিট সুত্রে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে হাওয়াতুন নেছা সদর হাসপাতালে মঙ্গলবার ভর্তি হন। বুধবার ভোর ৫টার তিনি মারা যান। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লাশ দাফন কমিটির সদস্য মাওঃ শাহিনুর রহমানের নেতৃত্বে হাওয়াতুন নেছার মৃতদেহ বুধবার দুপুরে হামিরহাটি গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ খান জানান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাথিমিক ও গনশিক্ষা বিভাগের ডিজি আব্দুল লতিফ করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ মার্চ ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল ৭টার দিকে তিনি মারা যান। বাদ মাগরিব প্রফেসর আব্দুল লতিফের মৃতদেহ মান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে। উল্লেখ্য করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক পবহাটী গ্রামের আফরোজা বেগম, একই গ্রামের লিলি বেগম, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নের যদুড়িয়া গ্রামের রিনা বেগম, হামিরহাটী চাঁদপুরের আনসার আলী মন্ডল কটা, কালীগঞ্জের আইনজীবী আশরাফুজ্জামান, কালীগঞ্জের বেজপাড়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী রহিমা খাতুন ও তার মেয়ে সালমা আক্তার মুন্নি এবং শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের দরবার আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফাউন্ডেশনের লাশ দাফন কমিটি করোনা আক্রান্ত ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ৭৪ জনের লাশ দাফন করেছে।
মটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গৃহবধুর মৃত্যু
ঝিনাইদহ :: লকডাউনের এই ৮ দিন সময় কাটাতে পিতার বাড়িতে স্বামীর কর্মস্থল থেকে ফিরছিলেন খাদিজা বেগম নামে এক গৃহবধু। কিন্তু তার আর পিতা মাতার কাছে ফেরা হলো না। মঙ্গলবার রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী মোড়ে মটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে মারা যান খাদিজা। নিহত খাদিজা চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নুতনপাড়ার বাসিন্দা। রাতে তার ভাই আব্বাস উদ্দীনের সঙ্গে যশোর থেকে ফিরছিলেন। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম জানান, খাদিজা স্বামী আবুল কাসেমের সঙ্গে নরসিংদি জেলায় থাকতেন। লকডাউন শুরুর আগের রাতে তিনি বিভিন্ন পরিবহন যোগে যশোরে এসে পৌছান। রাতে তাকে আনতে যান ভাই আব্বাস উদ্দীন। মটরসাইকেল যোগে দ্রুত বাড়ি ফেরার সময় গতিরোধক দেখতে পাননি চালক আব্বাস। ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের সাধুহাটী মোড়ে স্পিডব্রেকার পার হওয়ার সময় পেছনে বসে থাকা বোন খাদিজা ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মারা যান।
বিষ প্রয়োগে তিন লক্ষ টাকার মাছ নিধন
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার পল্লীতে দুর্বৃত্তদের বিষ প্রয়োগে একটি পুকুরে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মাছ নিধন করা হয়েছে। বুধবার ভোরে জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৮নং ওয়ার্ডের পলেনপুর গ্রামে কাপাশাটিয়া বাউড়ে এঘটনা ঘটে। জানা গেছে হরিণাকুন্ডু উপজেলার পলেনপুর গ্রামের মোঃ শাসছদ্দিন মন্ডলের ছেলে মিলন (৪৫), কাপাশাটিয়া বাউড়ে ১৮০শতক জমির উপর লিজ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করে আসছে। তিনি গত কয়েক মাস আগে তিন লক্ষ টাকা ব্যয়ে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, মৃগেল, শৈইলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা তৈরী করেছেন। মাছগুলো আর কিছুদিন পরেই বিভিন্ন মৎস্য চাষিদের নিকট বিক্রয় করার কথা ছিলো। তবে এর আগেই বুধবার ভোরে কে বা কারা পুকুরে বিষ প্রয়োগ করেছে। ফলে পুকুরের সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে। পুকুর মালিক মিলন হোসেন জানান, আমি এই পুকুরটি নিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। হঠাৎ করে কে বা কারা আমার পুকুরে রাতের আঁধারে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার দাবি করছি। জেলা মৎস্য অফিস জানান, বিষয়টি উাপজেলা মৎস্য কর্র্মতার নিকট জানানো হয়েছে। পুকুর পরিদর্শন করে মৎস্য চাষিকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি। হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, মৎম্য চাষিকে থানায় একটি আভিযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে আমাদের বরবার একটি আবেদন করে রাখতে বলেছি। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কোটচাঁদপুর পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাচ্ছেন বকেয়া বেতন
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে মেয়রের দ্বায়িত্বভার গ্রহনের দুই মাসে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩০ থেকে ৪৪ মাসের বকেয় বেতন ভাতা পরিশোধ শুরু করেছেন। এলপিআর এ যাওয়া কর্মচারীর বন্ধ ভাতা চালু করেছেন। শুরু করেছেন অবহেলিত রাস্তা ও ড্রেনেজ উন্নয়নের কাজ। এমন সাহসী উদ্যোগ নিয়ে পৌরবাসির সেবা শুরু করেছেন চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে থাকা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ভোটে জয়ী হয়ে দ্বায়িত্বভার গ্রহন করেন সেলিম। এর আগে বিগত পাঁচ বছর মেয়র হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে জিরে। মেয়র জাহিদুল ইসলাম জিরে দ্বায়িত্বভার গ্রহনের পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন ভাতা অনিয়মিত হয়ে যায়। এভাবে চলতে চলতে ২৫ থেকে ৪০ মাসের বেতন ভাতা বকেয়া থেকে যায়। ফলে মানবেতর জীবন কাটাতে থাকে পৌরসভার ৬৫ জন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোটি কোটি টাকা বেতন ভাতা বাকি রেখে নির্বাচন করেন সাবেক মেয়র জাহিদুল ইসলাম জিরে। ফলে ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে ভরাডুবি হয় জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে জিরের। তার সময়ে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার নাগরিক সেবার মান ভেঙ্গে পড়ে। রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। বেশির ভাগ পাড়া মহল্লায় পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল। রাতে অধিকাংশ সড়কে বাতি জ¦লত না। তারপরও নাগরিকরা নিয়মিতই ট্যাক্স দিয়েছেন। ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এক সময়ের ছোট কলকাতা খ্যাত এ পৌরসভায় স্থায়ী ৩৩ জন ও অস্থায়ী ৩২ জন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে। এদের প্রতিমাসে বেতন ভাতা বাবদ ব্যয় হয় ১৩ লক্ষাধীক টাকার মত। কিন্তু প্রতিমাসে এর থেকে বেশি বা সমপরিমাণ আয় করলেও প্রাচীন এ পৌরসভাটির এত টাকা বাকি নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোটচাদপুর পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের মাসিক আয় ১৫ লক্ষাধীন টাকা, সাথে সরকারী অনুদান আসে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ প্রতিমাসে লাগে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। এমন অবস্থায় আমাদের বেতন বকেয়া থাকার কথা নয়। কিন্তু মেয়র সাহেব এমন কেন করতেন তা বোধগম্য নয়। ইতোপূর্বের কোন মেয়রের সময় এত খারাপ পরিবেশ হয়নি বলেও যোগ করেন তিনি। এ নিয়ে সাবেক মেয়র জাহিদুল ইসলাম কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বকেয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এরকম বেতন ভাতা বাকি দেশের প্রায় সব পৌরসভায় রয়েছে। ফান্ড থাকা সত্তেও এমন পরিবেশ কেন জানতে চাইলে স্বশরীরে এসে লিখিত দিয়ে তথ্য নিয়ে যান বলে ফোন কেটে দেন তিনি। মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম জানান, প্রথম শ্রেণির নাগরিকসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। এ লক্ষ্যে পৌরবাসির সহযোগীতা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে পৌরসভার মধ্যে দুইটি রাস্তা ও কয়েকটি ড্রেনেজের উন্নয়ন কাজ শুরু করেছি। এ ছাড়া আমি আধুনিক সুযোগ সুবিধা রেখে পৌর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনায় রয়েছে। ইতোমধ্যে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ শুরু করেছি।
ট্রাকের তাবুর নিচে পালিয়ে সাতক্ষীরা যাওয়ার পথে ঝিনাইদহে ৪৩ যাত্রী আটক
ঝিনাইদহ :: ১৪ এপ্রিল সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের প্রথম দিনে ঝিনাইদহে সর্বাত্মক লকডাউন পালিত হয়েছে। লকডাউন কার্যকরে কঠোর ভূমিকা পালন করছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোষ্ট, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেছে। সকাল থেকে শহরের পোস্ট অফিস মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা, আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড ও চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। রাস্তায় চলাচলকারীদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমান আদালতের নেতৃত্ব দিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা। এদিকে কঠোর লকডাউনের মাঝেও পণ্যবাহী ট্রাকে তাবুর মধ্যে লুকিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেলে ভ্রাম্যমান আদালতে ধরা পড়ে। জানা যায় সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সাতক্ষীরা গামী একটি পন্যবাহী ট্রাকের তাবুর নিচে পাওয়া যায় ৪৩ জন যাত্রীকে। প্রত্যেকের নিকট ২২০০ টাকা চুক্তিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এই ট্রাকের চালককে জেল জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং যাত্রীদেও গন্তব্যে পৌছানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলা হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাদপুর ও মহেশপুর উপজেলাতেও উপজেলা, নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ভূমি, থানার ওসির সমন্বয়ে পরিচালিত টিম করোনা সংক্রমন রোধে সর্বত্মক লকডাউন পালনে জরিমান সহ কার্যকরি ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।