শনিবার ● ১৭ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » বিশ্বনাথে মহিলা নিহতের মামলায় আটক-৫
বিশ্বনাথে মহিলা নিহতের মামলায় আটক-৫
মো. আবুল কাশেম, স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও গ্রামে বাড়ির রাস্তা নিয়ে বিরোধের জের ধরে বুধবার (১৪ এপ্রিল) প্রতিপক্ষের হামলায় রাবিয়া বেগম (৬০) নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ছেলে ইমাম উদ্দিন (৩০) বাদী হয়ে ১২জনকে এজাহারনামীয় অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- ১৪।
এদিকে, ঘটনার পরই বুধবার রাতে অভিযুক্ত ৩ মহিলাসহ ৫জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- মির্জাগাঁও গ্রামের হাদির উদ্দিনের স্ত্রী সোনামালা বেগম (৩৫), মৃত শরিফ উদ্দিনের স্ত্রী নজবুন নেছা (৬০), আব্দুল করিমের স্ত্রী কুলসুমা বেগম (২২), এবং সিলেট সদর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের মৃত আকামত আলীর পুত্র শামছুল ইসলাম (৫৪) ও তার পুত্র ফুল মিয়া (৩২)। আটককৃতদেরকে বৃহস্পতিবার সকালে ৫৪ ধারায় আটক গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।তাদের মধ্যে সোনামালা বেগম, নজবুন নেছা ও কুলসুমা বেগম দায়েরকৃত ওই মামলার এজাহারনামীয় অভিযুক্ত বলে জানিয়েছেন বিশ্বনাথ থানার এসআই গোপেশ দাশ।
প্রসঙ্গত, লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও গ্রামের মৃত আছিমিন আলীর পুত্র হাফিজ আলী গংদের সাথে বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল রাবিয়া বেগম পক্ষের। বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে হাফিজ আলী ও মারুফ আলী পক্ষ রাবিয়া বেগম পক্ষের বাড়ির রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরী করে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাইলে এতে প্রতিবাদ করেন রাবিয়া বেগম। তখন হাফিজ আলী ও মারুফ আলী গংদের হামলায় মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন রাবিয়া বেগম। এসময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হামলায় আহত হন একই গ্রামের ফখর উদ্দিনের স্ত্রী ছকিনা বেগমও। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় রাবিয়া বেগমকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টায় তিনি মারা যান। ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাবিয়া বেগমের জানাযার নামাজ শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিশ্বনাথে মুক্তিযোদ্ধা সমাজচ্যুতের ঘটনায় মামলা
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে জামায়াত বিএনপির অনুসারীরা মিলে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (১৪ এপ্রিল) রাতে ৭জনকে আসামী করে থানায় এ মামলা দায়ের করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলী (মামলা নং ১৩)। মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বনাথ পৌর এলাকার শ্রীধরপুর গ্রামের মৃত জাকির মামনের ছেলে।
অভিযুক্তরা হলেন, একই গ্রামের মৃত মতছিন খানের ছেলে সোলেমান খান বাবুল (৫৩), মৃত মন্তাজ আলী ছেলে আমিরুল ইসলাম খছরু (৪৩), মৃত রুস্তুম খানের পুত্র ও যুবদল নেতা আজমল খান (৪৩), মৃত আছাব খানের পুত্র আজাদ খান (৫৫), মৃত মুহিবুর রহমান খানের পুত্র আহমদ খান (৬৫), মৃত আনোয়ার খানের পুত্র জামাত নেতা দিলদার খান (৪০), মৃত মুহিব খানের পুত্র মুজিবুর রহমান খান (৫৫)।
জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ পারিবারিক বিরোধের জের ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলী ও তাঁর পরিবারকে সম্পূর্ণ অনৈতিক ও জোর পূর্বকভাবে সমাজচ্যুত করার এমন অভিযোগে এনে রোববার সকালে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এ মুক্তিযোদ্ধা। এরই প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের থানায় হাজির হয়ে কারন দর্শানোর নোটিশ জারি করে থানা পুলিশ। গত সোমবার সকালে এসআই দেবাশীষ শর্মার নেতৃত্বে একদল পুলিশ সরেজমিন পৌর এলাকার শ্রীধরপুর গ্রামে গিয়ে অভিযুক্তদের নোটিশ জারি করেন। এরআগে বিষয়টি নিস্পত্তির লক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে যান। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি নিস্পত্তির সম্মতি দিলেও অভিযুক্তরা আপোষ মানেননি। পরে এ ঘটনায় মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীর বাড়ি বিশ্বনাথ পৌর এলাকার শ্রীধরপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মৃত জাকির মামন। মুক্তিযোদ্ধার নং-০১৯১০০০৫০৫৭, লাল মুক্তিবার্তা নং- ৫০১০৯০০৫৭, বেসামরিক গেজেট নং-১৪০৬ ও ভারতীয় অগ্রাধিকার তালিকা নং-০৫০১০৮০।
তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মুদির বাংলাদেশ সফর ঠেকাতে হেফাজতের তান্ডব দেখিয়া বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত মনে করে তাড়াহুড়ো করে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ পরিবারকে জোর পূর্বকভাবে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। প্রায় ৬ বছর যাবৎ শ্রীধরপুর জামে মসজিদের কার্যকরি কমিটির সদস্য রয়েছেন। গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাত অনুমান ১০ ঘটিকার সময় উক্ত মসজিদ কার্যকরি কমিটির সভাপতি আজাদ খান মুক্তিযোদ্ধাকে ফোনের মাধ্যমে মসজিদ কমিটি ও পঞ্চায়েত থেকে সমাজচ্যুত বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েতের কয়েকজন মুরব্বির কাছে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা কিছুই জানেনা বলে জানান। তিনি দাবি করেন, প্রায় ৭০টি পরিবার নিয়ে শ্রীধরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত। এই ৭০ পরিবারের মধ্যে উক্ত জামাত বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাকে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক হওয়ায় তারা এ ষড়যন্ত্র করেছে।
তাঁর অভিযোগ, ওই গ্রামের আরও বেশ কয়েকটি আওয়ামী লীগ পরিবারকেও সমাজচ্যুত করা হয়েছে।
সোমবার মসজিদের মোতাওয়াল্লি আজাদ খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা মেয়ের জামাইয়ের একটি বিরোধের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা ইন্তাজ আলীকে জানালে তিনি কোন সদোত্তর না দেয়ায় তাকে পঞ্চায়েত থেকে বাদ দেয়া হয়।
অপরদিকে, মুক্তিযোদ্ধাকে সমাজচ্যুত করার ঘটনায় উপজেলাজুড়ে সামালোচনার ঝড় বইছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদ, নিন্দার ঝড় উঠেছে। মঙ্গলবার এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ ও রামপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এছাড়াও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জাননো হয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই জয়ন্ত সরকার বলেন, মামলা হয়েছে। তদন্তানুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।