সোমবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » নওগাঁ » করোনার ক্রান্তিকালে ভালো নেই মৃৎশিল্পীরা
করোনার ক্রান্তিকালে ভালো নেই মৃৎশিল্পীরা
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: বিশ্বব্যাপী করোনার তান্ডব কোনোভাবেই থামছে না। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা। ফলে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রভাবে ভালো নেই নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মৃৎশিল্পের কারিগররা।
আত্রাই উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী দাঁড়িয়ে থাকা ভবানীপুর পালপাড়া যেন শিল্পীর তুলিতে আকাঁ একটি স্বর্ণালী ছবি। এ উপজেলার ভবানীপুর, রাইপুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কুটিরের নয়নাভিরাম মৃৎ শিল্পীদের বাসস্থান। যা সহজেই যে কারোর মনকে পুলকিত করে। আর এ করোনার প্রভাবে মৃৎশিল্প’র ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা পাল বংশের লোকদের টিকে থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে।
এক সময় এ গ্রামগুলিতে মৃৎশিল্প’র জৌলুস ছিল। এ শিল্পে জড়িয়ে ছিল এখানের শতাধিক পরিবার। হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার কষ্টে-শিষ্টে তাদের পূর্ব-পুরুষদের এ পেশা ধরে রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারনে সম্পুর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গেছে এ মাটির কাজ। তাই এই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই হতাশা হয়ে পড়েছে।
এক সময় উপজেলার এসব গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার পরিবারও প্রত্যক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। পালরা খোলা, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুলসহ ছোট-ছোট খেলনা ইত্যাদি সব জিনিসপত্র তৈরি করত। এখানকার তৈরি মৃৎশিল্পের অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি থাকলেও এখন শুধুমাত্র দধির পাত্র ও পিঠার খোলা তৈরি করে কোন রকমের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ অঞ্চলে খোলা পাত্রের কদর বেশী রয়েছে।
একটি খোলা তৈরিতে মাটি ও পোড়ানো বাবদ প্রায় ৫ টাকা খরচ হলেও তা বাজারে বিক্রি হয় ১০ টাকা। এর মধ্যেই রয়েছে শ্রম ও মাল বহনের খরচ। ফলে লাভের মুখ তারা দেখে না। অথচ ঐ একটি খোলা এক হাত ঘুরে বাজারে খুচরা ক্রেতা কিনছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ফলে সহজেই অনুমেয় মূল মুনাফা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের হাতে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মৃৎশিল্পীরা এ পেশার প্রতি হতাশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান প্রজন্ম এ ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।
মৃৎশিল্পের নিপুণ কারিগরেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অনেকটা অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেক পুরুষ এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগের মত দামে বিক্রি করতে পারছে না। মাটির এ সকল পাত্রের চাহিদাও আগের মত নেই।
রাইপুর গ্রামের মৃৎশিল্পের কারিগর বিপ¬ব কুমার পাল বলেন, ‘লাভ লসের হিসাব করি না। বাপ-দাদার কাজ ছাড়ি কি করি। করোনাভাইরাসের ফলে আমাদের পেশায় অনেক প্রভাব পড়েছে। ‘পূর্বপুরুষের পেশা বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে করোনায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।
এ ব্যাপারে উপজেলার ভবানীপুর পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী ধিরেন্দ্রনাথ পাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয় তাদের। এ ছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হয় তাদের। তার মধ্যে আবার করোনার প্রভাব পড়েছে এখন কাজ কর্ম সব বন্ধ আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।
এক কালের ঐতিহ্যের মাটির তৈরি বাসন, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুল এখন প¬্যাস্টিকের দখলে। ফলে উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের জৌলুস আর নেই। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্যের কারণেই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন উপজেলার সচেতন মহল।
আত্রাইয়ে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত ২ জন
আত্রাই :: নওগাঁর আত্রাইয়ে নতুন করে ২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ত পাওয়া গেছে। নতুন আক্রান্তরা হলো উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের সোলাইমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৮) ও জাতআমরুল গ্রামের ময়না রানী বাঁশফোর (২৩)।
আজ রবিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা.রোকসানা হ্যাপি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানাযায়, জ্বর-গলাব্যাথায় শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে গত ৮ এপ্রিল ৩ জনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠান। ১৭ এপ্রিল শনিবার রাতে পাটানো নমুনার রিপোটে ২ জনের পজেটিভ আসে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা.রোকসানা হ্যাপি বলেন, আক্রান্তরা বাড়ীতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে তারা শারীরিকভাবে আগের চেয়ে ভালো আছেন। আশাকরি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্নভাবে সুস্থ্য হয়ে উঠবে।
আত্রাইয়ে ইরি বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু
আত্রাই :: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনোয়ারী ইউনিয়নে ইরি বোরো ধান কর্তনের মধ্য দিয়ে ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছেন কৃষকরা।
উপজেলায় ইরি বোরোধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে রয়েছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। এছাড়াও করোনা ভাইরাসজনিত কারণে সৃষ্ট শ্রমিক সংকট ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে এক মাসের মধ্যে আত্রাই উপজেলার সব ধান ঘরে তোলা সম্ভব।
রবিবার (১৮ই এপ্রিল) আত্রাই উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাওছার হোসেনের আয়োজনে ইরি বোরো শস্য কর্তনের মধ্য দিয়ে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এছাড়াও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটার ধুম পড়ে যাবে। উপজেলার কৃষকরা যেন বছরের একটিমাত্র ফসল ইরি বোরো ধান নিরাপদে-নির্বিঘেœ ঘরে তুলতে পারেন সে লক্ষ্যে নানা ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন প্রশাসন। এসব উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনকে কৃষিশ্রমিকদের তালিকা সরবরাহ করা, অসুস্থ হলে চিকিৎসককে জানানো, কৃষি যন্ত্রপাতির দোকান বন্ধের আওতামুক্ত,বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে আসা প্রভৃতি।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকতেখারুল ইসলাম ইরি বোরো শস্য কর্তন পরিদর্শনে এসে বলেছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই! ছোট সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি’ দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ সোনালী ধানে ভরে গেছে। এ এক অপরূপ দৃশ্যে যেন মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, “করোনা ভাইরাসের বিস্তার মোকাবেলার পাশাপাশি এই মূহুর্তে আত্রাই উপজেলার ইরি বোরো ধান নিরাপদে ঘরে তুলে আনাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আর এ লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানা যায়, ”লতি মৌসুমে আত্রাই উপজেলায় ১৮ হাজার ৮শত ৮৫ হেক্টর জমিতে ইরি ও বোরো ধান আবাদ হয়েছে।এখানে হাইব্রিডসহ ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখতে পাওয়া যায়, “এখানে নিচু এলাকায় আবাদ করা দেশি ও ব্রি-২৮ জাতের ধান বিক্ষিপ্তভাবে কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা।এছাড়াও মাঠ জুড়ে আধাপাকা ধানের সমাহার। আর জমির পাড়ে ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য কৃষান-কৃষানিরা ব্যস্ত খোলা তৈরির কাজে।
মনোয়ারী গ্রামের কৃষক সাত্তার ইসলাম জানান, “এই বছর বোরো ধানের ফলন অনেক ভাল হইছে। এমনকি আজ থেকে কেউ কেউ কাটা শুরু করছে। তবে পুরাদমে কাটা শুরু করতে আরও পাঁচ-সাত দিন লাগবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাওছার হোসেন জানিয়েছেন, “এবার আত্রাই উপজেলায় বোরা ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলা চলে। আজকে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটা শুরু হয়েছে।তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে সব ধান ঘরে তোলা সম্ভব। এছাড়াও এরকম হলে অবশ্যই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।