মঙ্গলবার ● ২০ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ভুমি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করা মামলায়, আ’লীগ নেতার দেড় ঘন্টায় জামিন
ভুমি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করা মামলায়, আ’লীগ নেতার দেড় ঘন্টায় জামিন
মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে মতিয়ার রহমান নামে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা মামলায় দেড় ঘন্টার মধ্যে জামিন পেয়েছেন সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ফারুকুজ্জামান ফরিদ। মারধরের শিকার ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান গত শুক্রবার মামলাটি করেন। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার নবগঙ্গা নদী থেকে অবৈধ ভাবে মাটি খনন করছিলেন ফরিদ। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেন স্থানীয় ভুমি সহকারী কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান। নিষেধ করা মাত্রই ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারী কর্মকর্তার উপর হামলা করেন ফরিদ। প্রকাশ্যে একজন সরকারী কর্মকর্তাকে কিল-ঘুষি ও গলা টিপে ধরে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এদিকে জামিন পেয়ে নিজের ফেসবুকে ফারুকুজ্জামান ফরিদ লিখেছেন “সকলের উদ্দেশ্য বলতে চাই, আমাকে নিয়ে গত দুইদিন আগে একটি মিথ্যা মামলা করা হয়! অতঃপর আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ও আমার নৈতিকতার জায়গা থেকে আমি নিজে আজ ১৯-০৪-২০২১ তারিখ সকাল ১১ টায় ঝিনাইদহ সদর থানায় নিজেকে সোপর্দ করি। ১৯-০৪-২১ তারিখ বেলা ১২:৩০ টায় আমাকে ঝিনাইদহ জজ্ কোর্টে হাজির করা হয় এবং আমি নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় মহামান্য আদালত আমাকে জামিন দেন। অতএব, কোনো প্রকার গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি”। জামিনের বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহের পিপি এড ইসমাইল হোসেন জানান, সাবেক চেয়ারম্যান ও মহামারী করোনা বিবেচনায় ইচ্ছা করলে বিজ্ঞ আদালত এই মামলায় জামিন দিতে পারেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শাহিন জানান, সরকারী কর্মকর্তা লাঞ্চিত হয়েছেন। সরকারী বিভাগ পুলিশ তদন্ত করেছেন। সরকারী আদালত জামিন দিয়েছেন। এ নিয়ে আমার বলার কিছুনেই। আদালত যা ভাল মনে করেছেন সেটাই করেছেন।
করোনায় চা দোকানীর মৃত্যু, নুতন করে আক্রান্ত ১৩
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ইসরাইল হোসেন জোয়ারদার (৬৫) নামে এক চা দোকানীর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি শৈলকুপার লাঙ্গলবাঁধ এলাকার পুরাতন মালিথিয়া গ্রামের মৃত ইয়ানত জোয়ারদারের ছেলে। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খান জানান, গত ৭ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে ইসরাইল হোসেন মাগুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে করোনা পরীক্ষা শেষে ফলাফল পজিটিভ আসে। পরবর্ততে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১১ এপ্রিল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার মধ্যরাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গঠিত লাশ দাফন কমিটির ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ইসরাইলকে পুরাতন মালিথিয়া গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে ঝিনাইদহ গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১১জন, কালীগঞ্জ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় একজন করে রয়েছে। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে লাশ দাফন কমিটি এ পর্যন্ত ৭৫ জন করোনা আক্রান্ত ও করোনা উপসগ নির্য়ে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করলো।
চিত্রা নদী প্রভাবশালীদের দখলে
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের চিত্রা নদী তার গতিপথ হারিয়ে সরু খালের আকার ধারণ করেছে। একসময় সওদাগারদের এই অঞ্চলের ব্যবসা বানিজ্যের জন্য প্রান কেন্দ্র ছিল এই চিত্রা নদী। নদীর বুকে চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমান মৌসুমে ব্যাপক হারে ইরি আবাদ হয়েছে নদীর বুকে। নদীর পলিতে ফলন ভাল হওয়ায় নদীর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে স্যালো ডিপটিউবওয়েল। শুধু মাত্র বর্ষাকালের ৩ মাস পানি থাকে। পানি শুকিয়ে গেলে নদী পাড়ের কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য আবাদ করে থাকে। কালীগঞ্জে চিত্রা নদীর জায়গা দখল করে পাকা ভবন নির্মান করে ব্যাপক প্রতিযোগিতা করেছে। কালীগঞ্জ শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা নদী। এই নদীতে শহরের মধ্যে রয়েছে একটি সেতু। পুরাতন ব্রিজ হিসেবে সবাই এই সেতুটিকে চেনেন। এই সেতুর দুই ধারে নদীর জায়গা দখল করে পাকা দোকান তৈরি করেছেন একাধিক দখলকারী। দীর্ঘ সময়ে এই দখলের পরিমাণ বেড়েছে। দখলের কারণে নদী সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সড়ক চওড়া করতে প্রশাসনের নির্দেশে চিত্রা নদীর ৪ ফুট জায়গা দখল ছেড়ে দেবার নির্দেশ থাকলে ও সে নির্দেশ মানেনি কেউ। দখলকারীরা নদীর মধ্যে আরো ১৫ থেকে ৩০ ফুট নদীর জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মান করেছে। কালীগঞ্জ শহরের পুরাতন ব্রীজ থেকে হাইওয়ে মহাসড়কের পাশ পর্যন্ত নদীর ভেতর থেকে পিলার উঠিয়ে তার উপর নির্মাণ করা রয়েছে এই পাকা ভবন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে দুই পাশে নদীর জায়গা দখল করে যারা ভবন নির্মাণ করেছেন তাদের ভবন গুলো সামনে থেকে ফাঁকা করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ পেয়ে ব্যবসায়ীরা ৩ থেকে ৪ ফুট ভেঙে ফাঁকা করে নিয়েছিল। যার বেশির ভাগই ছিল দোকানের সামনের চালা ও সাইনবোর্ড। আর এই ফাঁকা করতে গিয়ে তারা পেছনে নতুন করে দখল করছে ১৫ থেকে ৩০ ফুট নদীর জায়গা। অনেকে পাকা ভবন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাকিয়েছে, কেউ ভাড়া দিয়ে টাকা গুনছে, কেউ আলিশান ভবন করে বসবাস করছে। চিত্রা নদী কালের ক্রমে তার চিরচেনা রুপ হারিয়ে নিজেই নিজের বোঝা হয়ে পড়ে রয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে নদী পলি জমে ভরাট হয়ে পানি ধারন ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং নদীর দু,পাড় মাটি ভরাট করে ভূমি দস্যুরা ভূমি দখল করে নদীর দু,প্রান্তে গড়ে তুলেছে বসতি ঘর। আর কিছু দিন পর দেখা যাবে নদীর মাঝ খানে গড়ে উঠবে ৪/৫ তলা বাড়ী। নদীকে রক্ষা করতে হলে নদীর দু,পাশে উচ্ছেদ অভিযান ও খাল খনন। তা নাহলে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম হয়তো বিশ্বাস করবে না যে কোন একসময় এখানে চিত্রা নদী ছিল। নদীতে পুরো শহরের আবর্জনা ফেলে নদী ভরাট এবং দূগন্ধ পুরো এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। এব্যপারে যাদের দেখাশোনা করার কথা তারা অদৃশ্য কারণে রয়েছে চুপ করে। কালীগঞ্জ শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র নদীটিকে বাচাতে এবং এর দু,পাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে এখনই নদীটিকে বাচানো একান্ত দরকার। নারিকেল বাড়িয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু জানান, নদীতে পানি না থাকার কারণে নদী দখল হচ্ছে। পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হলে এই প্রবণতা বন্ধ হবে। তিনি আরো জানান, নাব্যতা হারানোর ফলে এই অঞ্চলের বিল পুকুর ও ৮৫ ভাগ নলকুপে পানি থাকে না। মিঠাপানির মাছও এখন পাওয়া যায় না। নানামুখি সংকট তৈরী হচ্ছে নদীর নব্যতা হারানোর কারণে। জীব বৈচিত্র্য বাঁচাতে নদীগুলো আশু খননসহ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। চলাচল করত বড় বড় নৌকা ও জাহাজ। কলকাতার সঙ্গে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র বিন্দু ছিল এই অঞ্চলের জলপথ। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাল্টে গেছে সে চিত্র, এখন আর নদীতে চলে না মালবাহী নৌকা। বর্ষা মৌসুমে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুম শুরুতেই শুকিয়ে যায় এসব নদ-নদী। ফলে একদিকে এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে, অন্যদিকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় হাজার হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া এক সময়ের প্রবাহমান নদীর বুকে স্থানীয়রা এখন যে যার মত দখল করে চাষ করছে। এক শ্রেনীর প্রভাবশালী মহল প্রতিনিয়তই নদী পাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে সংকুচিত করে ফেলছে নদীর প্রশÍস্ততা। এখানেই শেষ না, ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করছে নদীর পানি। এতে জীব-বৈচিত্র্য যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। শহরের মধ্যখান দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদী। কিন্তু খননের অভাবে অধিকাংশ জায়গা শুকিয়ে গেছে, কোথাও কিছুটা পানি থাকলেও দু-ধার দখলে অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে প্রশস্ততা। শুকিয়ে যাওয়া নদীর দু-ধার দখল করে স্থানীয়রা ধানের চাষ করেছে। অন্যদিকে নদীপাড়ে অবাধে বেড়ে ওঠা ঘাস ব্যবহৃত হচ্ছে গো-খাদ্য হিসেবে। চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ উপজেলার মধূগঞ্জ বাজার এলাকা, ১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থ বছরের পর খনন করা হয়নি বিদ্যমান চিত্র নদীর কোনো অংশ। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে চিত্রা নদীটি শুকিয়ে যাবার কারণে ধানের চাষ, মাঝে মাঝে কুপ কেটে মাছের চাষ করে দখল করে রেখেছে।