বুধবার ● ২১ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » পাদুকা ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় গাইবান্ধায় দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার
পাদুকা ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় গাইবান্ধায় দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার
সাইফুল মিলন, ষ্টাফ রিপোর্টার :: অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে পুলিশ পুনরায় অপহরণকারীর হাতে তুলে দেয়ার পর ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন পুলিশ সুপার।
এ ঘটনায় পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাতে গাইবান্ধা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) মজিবর রহমান ও এস আই মোশাররফকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
একই সাথে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজার রহমানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে পত্র দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি।
হাসান হত্যা প্রতিবাদ মঞ্চের সংগঠক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করায় পুলিশের দায়িত্বহীনতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু থানার ওসি মাহফুজার রহমান এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু অবিলম্বে ওসি মাহফুজার রহমানকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে দোষীদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
হাসান হত্যা প্রতিবাদ মঞ্চের সমন্বয়ক প্রবীণ রাজনীতিক আমিনুল ইসলাম গোলাপ বলেন, অভিযোগ প্রমাণের পর শুধু প্রত্যাহার নয়, দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে ওসি মাহাফুজার রহমানকে থানায় রেখে ওই মামলার সঠিক তদন্ত সম্ভব নয়।
গত ৫ মার্চ পাদুকা ব্যবসায়ী হাসান আলীকে অপহরণ করে গাইবান্ধা জেলা আ’লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানা। এরপর তাকে উদ্ধারের দাবিতে হাসানের স্ত্রী বিথী বেগম থানায় অভিযোগ করলে মাসুদের বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর অপহৃত ব্যবসায়ী হাসান আলীকে আবারও অপহরণকারী মাসুদের জিম্মায় দেয় পুলিশ।
টানা একমাস মাসুদের বাড়িতে আটক থাকার পর গত ১০ এপ্রিল শনিবার মাসুদের বাড়ির টয়লেট থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর আগে মোবাইল থেকে ক্ষুদে বার্তায় হাসান আলী স্বজনদের জানান মাসুদ রানা তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে তার কাছ থেকে মিথ্যা অঙ্গীকার নেয়। ওই দিনই মাসুদকে আটক করে পুলিশ। পরদিন দলীয় পদ থেকে রোববার মাসুদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম বাদী হয়ে মাসুদ রানা, রুমেন হক খলিলুর রহমান বাবুকে আসামি করে সদর থানার দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ এনে সদর থানায় মামলায় করেন। ওই মামলায় মাসুদ রানাকে গ্রেফতার দেখিয়ে চারদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
অন্যদিকে পাদুকা ব্যবসায়ী হাসান আলীকে উদ্ধারের পর থানা থেকে অপহরণকারী মাসুদ রানার হাতে তুলে দেয়ার ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাহাত গাওহারীকে আহবায়ক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খায়ের ও পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল লতিফকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। ওই কমিটি তদন্ত শেষে ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
ঘটনার পরপরই হাসান আলী হত্যার বিচার দাবীতে ফুঁসে ওঠে গাইবান্ধার সর্বস্তরের মানুষ। মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। গঠন করা হয় হাসান হত্যা প্রতিবাদ মঞ্চ।