বৃহস্পতিবার ● ২২ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » কখনো আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও পরিচয় দেন প্রতারক লিলি
কখনো আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও পরিচয় দেন প্রতারক লিলি
মো. আবুল কাশেম, স্টাফ রিপোর্টার :: কখনো তিনি নিজেকে পরিচয় দেন আইনজীবী হিসেবে। কখনোবা সাংবাদিক অথবা শিক্ষক। এমনকি মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও পরিচয় দেন নিজেকে। এই সব পরিচয় ব্যবহার করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকেন শংকু রানী সরকার লিলি নামের এই নারী।
প্রতারণার অভিযোগে বুধবার বিকেলে সিলেটের আদালতপাড়ায় তাকে আটক করে জনতা। পরে তাকে আইনজীবী সমিতির কাছে তুলে দেওয়া হয়। পরে মুছলেকা দিয়ে ছাড়া পান লিলি।
প্রতারণার মাধ্যমে এক গৃহকর্মীর কাছ থেকে তার ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন শংকু রানী লিলি। এই ঘটনায় বুধবার বিকেলে সিলেট আদালতপাড়ার বার হল নং-২ এর সামনে তাকে আটক করা হয়।
শংকু রানী সরকার লিলি সিলেটের মেজরটিলায় এন আর টাওয়ারে ৩৫/২ নং বাসায় ভাড়াটে থাকেন।
জানা গেছে, এক মাস আগে সিলেটের মিরাবাজারের একটি বাসায় ভাড়াটে থাকা গৃহকর্মী শিল্পী বেগমের অটোরিকশা চালক ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। ছেলেকে ছাড়াতে শংকু রানী সরকার লিলির কাছে আসেন গৃহকর্মী শিল্পী বেগমের। লিলি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দেন এবং শিল্পী বেগমের ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার জন্য ৪৫ হাজার টাকার চুক্তি করেন। পরে এক মাসে শিল্পী বেগম মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে টাকা জমিয়ে ৩-৪ কিস্তিতে লিলিকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন। কিন্তু লিলি মামলার শুনানির তারিখ গুলো নানা টালবাহানায় পার করতে থাকেন।
বুধবার (২১ এপ্রিল) ছিলো শিল্পী বেগমের ছেলের মামলার আরেকটি শুনানির তারিখ। বুধবার তার ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা চূড়ান্ত করেন লিলি। কিন্তু বুধবারও ছেলের জামিন না হওয়ায় সিলেট বার হল নং-২ এর সামনে লিলির কাছে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত চান শিল্পী বেগম। এতে লিলি ক্ষিপ্ত হয়ে শিল্পী বেগমকে মারধর শুরু করেন। এসময় ঘটনাস্থলে আইনজীবী ও লোকজন জড়ো হলে শিল্পী বেগম বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন। তখন আইনজীবী ও জনতা প্রতারক লিলিকে আটক করেন।
এদিকে, আটকের পর প্রতারক লিলি উত্তেজিত হয়ে নিজেকে একাধারে আয়কর আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্বনাথ কলেজের অধ্যাপিকা পরিচয় দেন। এসময় তার গলায় ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউমেন রাইটস’ মানবাধিকার সংস্থার একটি পরিচয়পত্র ঝুলতে দেখা যায়। এটি সবাইকে দেখিয়ে লিলি নিজেকে ওই সংস্থা সম্পাদিত পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দেন।
এসময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের উপরও ক্ষেপে যান তিনি। ক্ষুব্দ হয়ে লিলি বলেন, তবে কোন পরিচয়ে যখন কাজ হচ্ছিলো না তখন শংকু রানী ক্ষেপে যান সাংবাদিকদের উপর। বলেন, ‘বাঁশ দিবো। আমি ক্রাইম রিপোর্টার। সব সাংবাদিকদের বাঁশ দিবো।’
পরে তাকে পুলিশের ভয় দেখালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের ভুল শিকার করেন এবং ওই ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর টাকা ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে মুক্তি পান।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজর রহমান বলেন, ‘শংকু রানী নিজেকে আয়কর আইনজীবী পরিচয় দেন। এবং সিলেট কোর্টের তারই সহকর্মী একজন আইনজীবী দিয়ে একজন নারীর কারাগারে থাকা ছেলেকে জামিন করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগদে ৪৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু ভুক্তভোগী নারীকে বার বার ঘুরালেও নারীর ছেলেকে জামিন করাতে পারেননি। আজ আবার ভুক্তভোগী নারীকে আদালতে নিয়ে এসে ছেলের জামিন করাতে না পারায় ওই নারী কারণ জানতে চাইলে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। যা আইনজীবীদের নজরে এলে তাকে আটক করা হয়।’
তবে নগদ ৩০ হাজার টাকা আদায় করে ভবিষ্যতে এমন কাজ সে আর করবে না মর্মে মুচলেকা রেখে শংকু রানীকে ছেড়ে দেওয়ার হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ।
তিনি বলেন, আমরা ওই প্রতারক মহিলাকে পুলিশের হাতেই সোপর্দ করতাম। কিন্তু তার কান্নাকাটি আর মাফ চাওয়া দেখে এবং টাকা ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেই।
বিশ্বনাথে ভাতা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার প্রবীণরা
বিশ্বনাথ :: সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় ‘বয়স্ক ভাতা’ প্রাপ্তিতে নিদারুণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দু’শতাধিক প্রবীণ।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ও লকডাউনের মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা অপেক্ষা করেও ভাতা পাচ্ছেন না তারা। সংশ্লিষ্টদের অপব্যবস্থাপনার কারণে দিনের পর দিন ধর্না দিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান বয়স্ক নারী-পুরুষ।
সরেজমিন উপজেলা সদরের ডিজিটাল ডাক ঘরের ‘ব্যাংক এশিয়ার’ এজেন্ট শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ডাক ঘরের সামনে ভাতা নিতে আসা বয়স্ক নারী-পুরুষের জটলা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাতার জন্যে সকাল থেকেই ওখানে অবস্থান নিয়েছেন তারা। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও, কাউকে সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। অনেকেই পরেননি মাস্ক। দীর্ঘ অপেক্ষায় কান্ত তারা। কখনও দাঁড়িয়ে, কখনও বসে বার্ধক্যের শরীর নিয়ে চরম বিরক্তির সময় কাটছিল তাদের।
অনেকে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ বোধ করছিলেন। সময় তখন সাড়ে ১১টা হলেও, তখনও অনুপস্থিত, ডাক ঘরের উদ্যোক্তা ও ভাতা প্রদানকারী কর্তা কৃপেশ দেবনাথ।
কথা হয় ভাতাভোগী রাজনগর গ্রামের পয়ষট্টি বছর বয়সি মছব্বির আলীর সাথে। তিনি জানান, চলমান পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের বাহিরে আসা উচিত নয়। আমরা গরীব মানুষ, তাই ঝুঁকি নিয়ে এসেও নিরাশ হয়ে ফিরে যাই বার বার। লকডাউনের মধ্যে এ নিয়ে চারদিন এসেছি। উদ্যোক্তা (কৃপেশ দেবনাথ) প্রতিবারই ল্যাপটপে সমস্যা বলে ফিরিয়ে দেন। আর প্রতিদিন অল্প ক’জনকে ভাতা দিয়েই চলে যান তিনি।
মুফতির গাঁও গ্রামের আশি বছর বয়সি আমরুজা বেগম জানান, আমাকে প্রথমে একটি ‘বিশেষ টোকেন’ দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ভাতা নিতে বলা হয়। পরে সোনালী ব্যাংকে গেলে তারা আবার ব্যাংক এশিয়া’য় পূণরায় আমাকে পাঠান। অসুস্থ শরীর
নিয়ে কয়দিন ধরে এভাবেই ঘুরছি আমি।
ভাতা প্রদানকারী ডিজিটাল ডাক ঘরের উদ্যোক্তা ও ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট’র পরিচালক কৃপেশ দেবনাথ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট রয়েছে, সবাই ঠিক মতো সেবা দিচ্ছে না। ভাতা প্রদান কার্যক্রম সকলে অব্যাহত রাখলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। উপজেলা পর্যায়ে সার্ভিস দেয়ার জন্যই, লকডাউনের মধ্যেও আমি সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্ঠা
করছি। মাঝে মধ্যে সার্ভার সমস্যার কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্ঠি হয়।
এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাশ বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি। কোন ধরণের ভোগান্তি ছাড়াই যাতে প্রবীণরা ভাতা পান সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিশ্বনাথে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে রক্ষা পেল নতুন স্কুলভবন
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ধ্বসের হাত থেকে রক্ষা পেল বাউশি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন। যদি না সেটা নজরে আসত নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌরপ্রশাসক সুমন চন্দ্র দাসের তাহলে জলেই আছড়ে পড়তো ভবনটি। তাঁর হস্তক্ষেপে ধ্বসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের বাউশী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন। কিভাবে ভবনটিকে ধ্বসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন তিনি, সেটা নিজেই সচিত্র তুলে ধরেছেন তার অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে। ঘটনাটি শোনলে বিস্মিত হয়ে যাবেন যে কেউ। কতটুকু দায়িত্বজ্ঞানহীন কান্ড ঘটিয়েছেন ওই ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিশ্বনাথের নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সেই স্ট্যাটাস জন্যে হুবহু তুলে ধরা হল,
‘বাউশি উচ্চ বিদ্যালয়। আজ হাওরে বোরো ধান কাটা দর্শন শেষে বিদ্যালয়টির পিছনে সরকারের মানবিক প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণাধীন ঘর পরিদর্শনে গেলে ছবিগুলোর বাস্তব অবস্থা নজরে আসে। নতুন স্কুল ভবনটি এক মাস আগে কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হলেও করোনা ভাইরাসের কারণে এখনো ব্যবহৃত হয় নি। বিদ্যালয়টির আরেকটি চারতলা ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে অতি অবিবেচকের মত কাজ শুরু করে। আজ কোন এক সময় বৃষ্টি হলে যেকোনো মুহুর্তে নবনির্মিত ভবনটি ধ্বসে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সরকারের সম্পদ রক্ষায় জনস্বার্থে তাৎক্ষণিকভাবে এক্সেভেটর ও ট্রাক জব্দ করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তলব করি।
কারও পক্ষ হতে কোন সদুত্তর পাওয়া না যাওয়ায় ভবন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়কে ফোন অবহিত করে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাইট ইঞ্জিনিয়ার তা পরিদর্শন করে গর্ত ভরাটের কাজ শুরু করেন। অবশেষে সরকারি সম্পদ ও স্কুল ভবনটি সুরক্ষিত হচ্ছে। আসুন আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করি। এ দেশ আমার, এদেশের সম্পদও আমার।’