বৃহস্পতিবার ● ২২ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » দেশে পাঁচ কোটি গরিব মানুষ রয়েছেন, সাড়ে ১০ কোটি টাকা তাদের মধ্যে ভাগ করা হলে জনপ্রতি পাবেন দুই টাকা করে
দেশে পাঁচ কোটি গরিব মানুষ রয়েছেন, সাড়ে ১০ কোটি টাকা তাদের মধ্যে ভাগ করা হলে জনপ্রতি পাবেন দুই টাকা করে
ঢাকা :: করোনার বিস্তার রোধে চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত, দরিদ্র, অসচ্ছল মানুষের জন্য সাড়ে ১০ কোটি টাকা সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষণাকৃত এই অর্থ বাড়িয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা করার দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদরা।
বরাদ্দ বাড়ানোর দাবির কারণ হিসেবে বলা হয়, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী দেশে পাঁচ কোটি গরিব মানুষ রয়েছেন। সাড়ে ১০ কোটি টাকা তাদের মধ্যে ভাগ করা হলে জনপ্রতি পাবেন দুই টাকা করে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ‘লকডাউনে মানুষের হাহাকার বন্ধে ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছাও’ ব্যানারে আয়োজিত প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচী থেকে এ দাবি জানানো হয়।
অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি প্রত্যেক দিন খারাপ হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের কিছু গবেষক বলছেন, মে মাসের শেষ দুসপ্তাহ ভারতীয় উপমহাদেশে খুব ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এখন এ পরিস্থিতিতে মানুষের সঞ্চয় যা ছিল, তা ফুরিয়ে গেছে। কর্মহীন মানুষের অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল গরীব মানুষের জন্য সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে, কমপক্ষে আমাদের দেশে এখন পাঁচ কোটি গরীব মানুষ আছে। সাড়ে ১০ কোটি টাকা ভাগ করলে তারা দুই টাকা করে পাবেন।’
তিনি সরকারের কাছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করার প্রস্তাব রেখে বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ কোটি গরীব মানুষকে ৫০ টাকা করে দেওয়া হোক। মনে হতে পারে গরীব দেশে এটা কীভাবে সম্ভব। পাঁচ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা নেওয়া খুব বেশি না। আর এটা তো শখের কোনো সেতু বা জাদুঘরের জন্য না। এটা মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য।’
‘মানুষকে বাঁচানোর জন্য এই সরকারের হাত দিয়ে বিদেশিদের দেওয়া বিশাল অর্থ করোনার জন্য এসেছে। তাই মাত্র সাড়ে ১০ কোটি টাকায় হবে না। ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। এতে আপনাদের বাজেটেও তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। দেড় থেকে দুই শতাংশ বাজেট ঘাটতি বাড়বে, আর রিজার্ভের ওপর একটু প্রভাব পড়বে। কিন্তু এখন সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় মাসের রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি আছে। আর রিজার্ভ মানুষ খায় না। মানুষকে খাবার দেন। সরকারের সেটা করণীয়,’ যোগ করেন তিনি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এতে প্রতিটি পরিবার যা পাবে তা দিয়ে কী কিনতে পারবে? একটি বা দুটি পেঁয়াজু। সাধারণ অসহায় মানুষের সঙ্গে এ জাতীয় মস্করা করছেন প্রধানমন্ত্রী? ওনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, এই মস্করার দিন ফুরিয়ে আসবে। আমাদের একসঙ্গে এ সরকারের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আসলে ভোট ডাকাতের সরকার কখনও জনগণের হতে পারে না।’
‘যারা মুক্তিযুদ্ধের সুবিধা নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনারা প্রধানমন্ত্রীর বিপরীতে গরীব মানুষকে সাহায্যে না নামলে একদিন আপনারাও হারিয়ে যাবেন। আপনাদেরও খুঁজে পাওয়া যাবে না,’ যোগ করেন তিনি।
আগামী সোমবার থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসায় গিয়ে গণস্বাস্থ্যের ভ্রাম্যমান চিকিৎসা দল করোনার চিকিৎসা দেওয়া শুরু করবে বলে জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এ দল আক্রান্তদের বাড়ির অন্তত একজনকে প্রশিক্ষণ দেবে। এতে করে যিনি প্রশিক্ষণ নেবেন তিনি করোনা কেউ থাকলে তার দেখাশোনা করতে পারবেন।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কত নির্লজ্জ হতে পারে এ সরকার। মাত্র সাড়ে ১০ কোটি টাকা গরীব মানুষের জন্য ঘোষণা করেছে তারা। সরকার কী এতোই গরীব? এজন্য প্রধানমন্ত্রীর তো লজ্জা পাওয়া উচিত। করোনার শুরুর দিকে সরকার বলছে, ৪৫ হাজার পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেবে। এ ঘোষণার এক বছর পার হয়ে গেলো, সে টাকা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে ওই টাকার ৪৬ শতাংশ আগেই সরকারের দালাল-চামচারা আত্মসাৎ করেছে।’
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, ‘এই ৪৫ হাজার পরিবারকে টাকা দেওয়ার পদ্ধতি কী? সেটা এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে। এক লাখ দুস্থ কৃষক পরিবারকে সাহায্য করা হবে, সাহায্য করার পদ্ধতি ও ডাটাবেজ কী হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।’
তিনি সরকারকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দিন মজুরদের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার দাবি জানান। যদি তা না করা হয়, তাহলে ঈদের আগে বা পরে হাজারো মানুষ নিয়ে আবার সমাবেশ করার হুশিয়ারি দেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, জনসংহতি আন্দোলনে প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজীজ ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য রাখাল রাহা প্রমুখ।