শনিবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » বাবার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে ছেলে হাফিজুল ইসলাম লস্করের স্মৃতি চারণ
বাবার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে ছেলে হাফিজুল ইসলাম লস্করের স্মৃতি চারণ
ষ্টাফ রিপোর্টার :: বিএমএসএস এর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ও সাপ্তাহিক ইউনানী কন্ঠের সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম লস্করের পিতা আলহাজ্জ মছব্বীর আলী লস্কর (মরহুম) এর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। (৮রামাদ্বান হিসেবে ১বছর পুর্ণ হলেও ইংরেজী সাল হিসেবে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী হবে ২মে। কেননা তিনি গত বছরের ২মে ২০২০ মোতাবেক ১৪৪১ হিজরীর ৮রামাদ্বান ইন্তেকাল করেন)। তিনি গত ২০২০ সাল মোতাবেক ১৪৪১ হিজরীর ৮ই রামাদ্বান বিকেল ৩-১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।
বাবার স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে হাফিজুল ইসলাম লস্কর জানান, আমার বাবা আমাদের সামনেই চেয়ারে বসা ছিলেন। আর আমরা কথা বলতে ছিলাম, হঠাৎ বাবার হাত পা কাপতে লাগলো আর বাবা তখন মুখ দিয়ে কি যেন পড়তে ছিলেন, মা তখন বাবার মুখে পানি তুলে দিলে বাবা সেই পানি পান করেন, তারপর আমি পানি দিলাম বাবা সেই পানি পান করলেন। এরপর আমরা বাবাকে বিছানায় শুয়ালাম। এর কিছু সময় পরই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন শান্তির ঘুমে। দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে।
আমার বাবা বেশ কয়েকদিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও ঘুম বেড়ে গিয়েছিল মারাত্মকভাবে। তাছাড়া খাবার খেতে চাইতেন না মোটেও। খাবার খাওয়ানোর জন্য বারবার চেষ্টা করতাম আমরা সবাই। তিনি শুধু বলতেন খাবার জানে চায়’না রে বাবা।
বাবার কথা মনে পড়লে মনে খুবই কষ্ট পাই। এই কষ্ট নিয়ে এখন দিন কাটাচ্ছি। বাবাকে হারানোর আজ এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
বাবাহীন একজন ছেলের জীবন যে কতটা বিয়োগান্ত হয়, তা হয়তো যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা কখনোই বুঝতে পারবে না। প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয় সত্যি আমি বড়ই একা। একটু ভালোবাসা দেওয়ার, সান্ত্বনা দিয়ে সামনে চলার প্রেরণা জোগানোর মানুষটি আজ বেঁচে নেই। বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারব এ কল্পনা কখনো করিনি। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। কেটে যাচ্ছে একেকটি দিন, একেকটি মাস।
বাবার অনেক স্মৃতি, অনেক কথা, যা আজও ভুলতে পারিনি, ভুলা যায় না। বাবাহীন প্রত্যেক দিন একেকটি ঝামেলা, একেকটি একাকিত্ব। ছায়াহীন পথ, আর লক্ষ্যহীন সকল যুক্তি। বাবাকে খুব মনে করছি। বাবার জন্য অনেক কষ্ট হয়। বাবা না থাকাটা যতটুকু কষ্টের, তার চেয়েও বেশি ঝামেলার।
বাবা, তুমি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গিয়েছ না ফেরার দেশে। তুমি বেঁচে থাকতে তোমার গুরুত্ব আমরা কখনো বুঝিনি। আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি তোমার অনুপস্থিতি। তোমার চলে যাওয়া আমাদের জীবনে বিশেষ করে আমার জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি।
আমার আর এই যান্ত্রিক জীবন ভালো লাগে না বাবা। তোমার ছায়ায় যতটা দিন ছিলাম ভালোই তো ছিলাম। ছোট্ট পুঁচকে একটা ছেলের মতো জীবনটা এগোচ্ছিল। বাবা আমার মতো এই পুঁচকে ছেলেকে এত বড় সংসারে একা ছেড়ে গেলে বাবা? আমি আজকাল বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি বাবা। জীবনের একটা বছর তোমাকে না দেখে কাটিয়ে দিয়েছি আমি।
সত্যি ভাবতে বড় অবাক লাগে। জানিনা কীভাবে সময় এত দ্রুত ক্ষয়ে যায় বাবা। সবকিছু যদি ক্ষণিকের জন্য উল্টো হয়ে যেত, খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম। কী ফিরে পেতাম জানি না, তবে তোমাকে আবারও ফিরে পেতাম ঠিকই বাবা। ফিরে পেতাম সেই সোনাঝরা আনন্দের দিনগুলো। বুকের পাঁজরে আটকে রাখতাম তোমায় বাবা। যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ বাবা।
জানি না জীবন নামের অংক খাতায় আর কত বিয়োগ হবে। তবে তোমাকে হারানোর পরে মনে হয়েছিল দুনিয়াটা বড়ই নিষ্ঠুর একটা জায়গা বাবা। পৃথিবীতে যুগে যুগে একজন মহৎ মানুষের আবির্ভাব ঘটে। আমার চোখে আমার বাবা তাদের একজন। যিনি সারা জীবন কল্যাণ করেছেন মানুষের। অনেক মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। যিনি জীবনে কষ্ট করেছেন কিন্তু কখনো কাউকে কষ্ট দেননি। কখনো বিচ্যুত হননি নীতি ও আদর্শ থেকে। সগৌরবে পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ৯০ টি বছর।
সুখী মানুষের কাছে ৯০ বছর হয়তো কিছুই না। কিন্তু আমার বাবা জীবনে ৯০ বছরের প্রতিটি মুহূর্ত সংগ্রামের সঙ্গে পাড়ি দিয়েছেন। গড়ে গেছেন এক বর্ণাঢ্য জীবনের ইতিহাস। আমার লেখনীর মাধ্যমে তার জীবনী বা তাকে সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলার স্পর্ধা আমার নেই। কোনো কালে হবে কিনা জানি না। বাবার বিবেক আর তার দেখানো পথে হাঁটছি অবিরাম। জানি না এই পথের শেষ আছে কিনা। যদি বা শেষ না হয় এই পথের, ক্ষতি নেই। জীবন তো চলবেই জীবনের মতো। ভয় কী, বাবার আশীর্বাদ আমার সঙ্গেই আছে। বাবা, তোমায় বুকে ধারণ করেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব। তুমি যেখানেই থাকো ভীষণ ভালো থেকো বাবা। মহান রাব্বুল আলামিন দান করুন আপনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম।
আমার বাবার চলাফেরায় কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন, আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দিবেন। আপনাদের সকলের কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। (আমিন)