শনিবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » কঠোর পরিশ্রমে করোনায় আক্রান্ত হয়নি কৃষকরা
কঠোর পরিশ্রমে করোনায় আক্রান্ত হয়নি কৃষকরা
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহ জেলার কোন গ্রামে একাধিক কৃষক আক্রান্ত হয়েছে এমন তথ্য স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে নেই। কঠোর পরিশ্রম ও রোদে পুড়ে কাজ করার কারণে কৃষকদের শরীরে করোনা বাসা বাধতে পারেনি। এদিকে গ্রামাঞ্চলের লোকজন বিশেষ করে মাঠে মাঠে কর্মরত কৃষকরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের হাতে নেই বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ গনমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সারাদেশেই এখন কৃষিতে বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে। মাঠে মাঠে ধান কাটার ভরা মৌসুম আসন্ন। করোনার ভয় স্পর্শ করেনি কৃষকদের। তার কথা, বোরো ধান কর্তন শুরু হয়েছে। মাঠে মাঠে পাট বপনের কাজ চলছে। আউশের বীজতলা তৈরী হচ্ছে। আদা ও হলুদসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদও চলছে। গম ও ভুট্রা কর্তন এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদসহ এক ইঞ্চি জমি কোন সময় পড়ে থাকতে না। সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে। করোনার কারণে শহরের অনেক শিক্ষিত যুবক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ যাদের গ্রামে জমি আছে তারাও গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করছেন বলে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর পেয়েছি। তিনি বললেন, দেশে ১ লাখ ৪০হাজার পারিবারিক বাগান তৈরী করায় সবজির উৎপাদন এতটা বেড়ে গেছে যে, এখনো সবজির বাজার কমতে শুরু করেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদের কথা, কৃষি প্রধান বাংলাদেশের শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত। কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মোট আবদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫শ’৫৬ হেক্টর। আরো প্রায় লক্ষাধিক হেক্টর পতিত জমি আবাদের আওতায় এসেছে এই করোনার মধ্যে। অল্পজমিতে বেশি শস্য উৎপাদনের গবেষণা ও অভিযোজন কৌশল প্রয়োগ অর্থাৎ আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়া যখন যেমন পদ্ধতি, সমস্যাদি সমাধান, লাগসই ও টেকসই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগানো এবং সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি। এই তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ডক্টর নাজিরুল ইসলাম জানান, বাস্তব ভিত্তিক স্থায়ী পরিকল্পনা করে নিত্য নতুন শস্যজাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। যা আবহাওয়া ও জলবায়ু উপযোগী। ভাসমান কৃষি, জলমগ্ন কিঞ্চিৎ লবণাক্ত আবাদী জমি ও বৈচিত্রপূর্ণ ফসলের আবাদ ও কৃষির উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ, গুণগতমান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহের লক্ষ্যে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, করোনা পরিস্থিতিতে একমাত্র কৃষি সেক্টর সাচ্ছন্দ্যে কর্মকান্ড চলছে। এই মহামারীর মধ্যে কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ জাহিদুল আমিন জানান, মাঠে মাঠে কৃষকরা রোদে পুড়ে ক্ষেতে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে মহেশপুরে বোরো ধান কর্তন হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোন তথ্য নেই।
ভাই ভাই ক্লিনিকে আবারো রোগীর মৃত্যু, দেড় লাখ টাকায় টাকায় রফা দফা
ঝিনাইদহ :: কসাইখানা হিসেবে পরিচিত ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা শহরের ভাই ভাই ক্লিনিকে আবারো আব্দুর রহিম লিটু (৪৮) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। লিটু একই উপজেলার দখলপুর গ্রামের সদর উদ্দীনের ছেলে। শুক্রবার বিকালে এ্যাপেন্ডিসাইটিস অপরেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করানো হলে স্বজনদের কাছে লিটুর মৃত লাশ ফেরৎ দেওয়া হয়। অপারেশন করেন হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ আহসান হাবিব দিপু। পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই অপারেশন করার ফলে এই অকাল মৃত্যু বলে রোগীর স্বজনরা জানান। তবে ক্লিনিক মালিক আজমত ও আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, অপারেশনের সময় টেবিলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লিটুর মৃত্যু হয়। এর জন্য ক্লিনিক মালিক বা চিকিৎসক দায় নয়। রোগীর চাচা মিজানুর রহমান ওল্টু জানান, সুস্থ মানুষ ঢুকিয়ে আমাদেরকে মৃত মানুষ ফেরৎ দিল। তাছাড়া ক্লিনিক মালিক সরসরি লাশ গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে লিটুর মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে আপোষ রফার জন্য দফায় দফায় দখলপুর গ্রামে শালিস বৈঠক হয়েছে। দেড় লাখ টাকায় বিষয়টি রফা হতে পারে বলে বৈঠক সুত্রে জানা গেছে। শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে মধ্যস্থতায় নিয়োজিত ক্লিনিক মালিকের ভাই আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, চিকিৎসক আহসান হাবিবসহ হরিণাকুন্ডু হাসপাতাল মোড়ের কুসুম ও মোয়াজ্জেম এখন দখলপুর গ্রামে রয়েছেন। এদিকে রোগীর স্বজনরাও বিষয়টি নিয়ে আইন আদালত করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তারা ক্লিনিক ও ডাক্তারের সঙ্গে আপোষ করার পক্ষে বলে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন। এদিকে বার বার ভাই ভাই ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর কারনে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে ক্লিনিক বন্ধ ও জরিমানা আদায় করা হলেও মৃত্যুর মিছিল থামছে না। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম জানান, ক্লিনিকটি অনিয়মের কারণে বন্ধ ছিল। কিন্তু তারা শর্ত পুরণ ও কিছু সংস্কার করে আবার চালু করেছে। ওই ক্লিনিকে লিটু নামে একজন মারা গেছে বলে আমি শুনেছি। রোববার আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো কি কারণে মারা গেছে।
ঝিনাইদহে বৃষ্টি নেই ৭ মাস, নদীর বুকে হচ্ছে ধান চাষ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে ৭ মাস বৃষ্টি নেই। প্রচন্ড দাবদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে জেলার ৬ উপজেলার মাঠ-ঘাট, বিল, জলাশয়, পুকুর ও নদ-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে দেখা দিয়েছে গোসল ও সুপেয় পানির সঙ্কট। গ্রামের পুকুরগুলোর মধ্যে শিশু কিশোররা খেলা করে। নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ধান। প্রচন্ড খরতাপে চারিদিকে যেন হা হা কার। এদিকে দখলদারদের আগ্রাসন, পলি জমে ভরাট হওয়াসহ নানা কারণে নদ-নদীগুলোর অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। নদী-নালার তলদেশ শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে এখন ধান, তামাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন এলাকার চাষিরা। দেখে মনে হবে নদীর তলদেশ যেন এখন বিস্তীর্ন ফসলি ক্ষেত। এভাবে চলতে থাকলে একসময় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে বলছেন পরিবেশবাদীরা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহের ভেতর দিয়ে নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, গড়াইসহ বেশকিছু নদ-নদী প্রবাহিত। তবে একমাত্র গড়াই বাদে সবই এখন মৃত। ঝিনাইদহ জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ১২। এসব নদ-নদীর দৈর্ঘ্য ৪৮৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার। এসব নদীগুলো একসময় নদীপাড়ের মানুষদের কৃষিকাজসহ জীবিকার প্রধান মাধ্যম ছিল। নদীতে চলাচল করতো বড় নৌকা ও জাহাজ। কলকাতার সঙ্গে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল এ অঞ্চলের জলপথ। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাল্টে গেছে চিত্র। এখন আর নদীতে চলে না মালবাহী নৌকা। বর্ষা মৌসুমে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে যায় এসব নদ-নদী। ফলে এখানকার জীববৈচিত্র রয়েছে হুমকির মুখে। অন্যদিকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ঝিনাইদহে হাজার হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এরমধ্যে শুধুমাত্র শৈলকুপায়তেই ৩০ হাজার নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। জেলার কিছু জায়গায় পানি মিললেও এ মাসের শুরুতে একেবারেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে অনেক নলকূপ। এছাড়া এ নদীগুলো স্থানীয়রা যে যার মতো দখল করে চাষ করছে। এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল প্রতিনিয়তই নদীপাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে। ফলে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে নদীর প্রশস্ত। এখানেই শেষ নয়। ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করা হচ্ছে নদীর পানি। ঝিনাইদহ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। এই নদীকে ঘিরেই জেলার নামকরণ হয়েছিল। কিন্তু খননের অভাবে এর অধিকাংশ জায়গা শুকিয়ে গেছে। কোথাও কিছুটা পানি থাকলেও দু’পাড় দখলে অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে প্রশস্ততা। জেলা সদরের উদয়পুর গ্রামের নদীর অংশে দেখা যায়, শুকিয়ে যাওয়া নদীর মাঝ দিয়ে যাতায়াতের পথ তৈরি করা হয়েছে। শুকিয়ে যাওয়া নদীর দু’পাড় দখল করে স্থানীয়রা ধানচাষ করেছেন। কেউবা লগিয়েছেন তামাক। অন্যদিকে নদীপাড়ের অবাধে বেড়ে ওঠা ঘাস ব্যবহৃত হচ্ছে গোখাদ্য হিসাবে। অথচ একসময় এ নদীর প্রস্থতা ছিল ৩০০ মিটার। এদিকে চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ উপজেলার মধূগঞ্জ বাজার এলাকা, বেগবতী নদীর বিষয়খালী বাজার অংশ, কুমার নদের গাড়াগঞ্জ অংশসহ প্রায় প্রতিটি নদীর ধারেই পড়েছে দখলদারদের থাবা। ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে জেলা শহর সংলগ্ন নবগঙ্গা নদীর কিছু অংশ উচ্ছেদ করা হলেও কয়েকদিন পরেই অদৃশ্য কারণে থেমে যায় সে কার্যক্রম। পাউবোর তালিকা অনুসারে, এখন বিভিন্ন নদ-নদীতে ৬৯ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তবে বাস্তবে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া ১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থ বছরের পর আর খনন করা হয়নি বিদ্যমান নদ-নদীর কোনো অংশ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উদয়পুর গ্রামের মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগে কিছু লোক এসে নদী মেপেছিল। তখন তারা বলেছিল খনন করা হবে। এরপরে আর কোনো দিন তাদের দেখলাম না। অপর বাসিন্দা বাবলু মন্ডল বলেন, মানুষ যে যার মতো পারছে সীমানা মেপে দখল করে নিচ্ছে। কেউ ধান লাগাচ্ছে, কেউ অন্য চাষ করছে। জেলা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির জেলা সভাপতি মাসুদ আহমেদ সনজু বলেন, পরিবেশ-নদী-পানি-প্রাণী একে-অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর কোনটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে অপরটির ওপর প্রভাব পড়ে। ফলে পরিবেশের সার্বিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেখতে পারছি বর্তমান সময়ে নদী পাড়ের বাসিন্দারাই বেশি দখল উৎসবে মেতে উঠছে। তৈরি করছে স্থাপনা। খননের অভাবে ভরাট হয়ে গেছে নদী। এতে পানির অন্যতম উৎস নদ-নদী, জলাশয় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’। ‘ধারণা করা হয়, বর্তমান সময়ে পানি সঙ্কটের অন্যতম কারণ জলাশয় নষ্ট হওয়া। এছাড়া নদীকে ঘিরে বেচে থাকা অনেক প্রাণী যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ’। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য অবশ্যই নদী দখল মুক্ত করতে হবে। সঙ্গে খনন করে নাব্যতা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এছাড়া নদীর যে উৎস্য মুখগুলো আছে সেগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বলে জানান তিনি। ঝিনাইদহ পাউবো উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসাইন বলেন, নদ-নদীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট খননের বিষয়ে বোর্ডে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে। আর দখলদার উচ্ছেদ কাজ সামনের দিনগুলোতে পর্যায়ক্রমে শুরু হবে।
ঝিনাইদহে বাড়ি ছাড়া অসহায় ১৫ টি পরিবার
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাকা গ্রামের অসহায় বিশারত আলী। ৩ প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করে তার পরিবার। নিজে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ আর বাড়িতে প্রতিবন্ধী সন্তানদের সহযোগিতায় গরু লালন-পালন করে তার স্ত্রী। যা দিয়ে কোন রকম চলে তার সংসার। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একই গ্রামের অন্যপাড়ায় মারামারিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আহত ইমরান। এর পর ওই বাড়িসহ বেশকিছু বাড়িতে হামলা চালায় নিহতের পরিবার ও দলীয় সমর্থকরা। জানেন না কিছু, ছিল না ঘটনার সময়। তারপরও প্রতিবন্ধীদের এই বাড়ি থেকে লুট করে নিয়ে যায় আড়াই লাখ টাকা দামের ৩ টি গরু। গরু না থাকায় শুন্য তার গোয়াল। চাঁদা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যারা চাঁদা দেয়নি তাদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না বাড়িতে বলেও রয়েছে অভিযোগ। জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শালিসী বৈঠকে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে মারামারি। মারামারিতে আহত হয় পাকা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে ইমরান হোসেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ দিন পর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যায় সে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে পুলিশ ৩ জন আসামীকেই গ্রেফতার করে। আসামী গ্রেফতার হলেও হত্যাকে পুঁজি করে অসহায় পরিবারদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করা হচ্ছে। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গরু, ছাগল। ভুক্তভোগি সেবেরা খাতুন ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আমার পাগল ছেলে-মেয়ে গরুর পুষে বড় করছে। একটি গরু গাভিন ছিল। আমরা কিছু জানিনে। আমাদের মত অসহায় পরিবারের গরুও নিয়ে গেল। আল্লাহ এর বিচার করবে। একই গ্রামের আমিরুল ইসলাম বলেন, ইমরান মারা যাওয়ার পর তার পিতা আব্দুল মালেক বানিজ্য শুরু করেছে। আব্দুল মালেক একই এলাকার জুয়েল, মান্নান, আছালত. তকব্বার, সাব্দাল, সাঈদসহ তার সমর্থকরা অসহায়দের উপর নির্যাতন করছে। বাড়িতে উঠতে হলে তাদের মোটা অংকের টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। তাদের অত্যাচারে এখনও বাড়ি ছাড়া পাকা গ্রামের শফিউদ্দিন, আলেক, বাদশা, মজিদ, ফরিদ, ভুট্টোসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়াও প্রায় ৫০ বিঘা জমি এখনও অনাবাদী রয়ে গেছে। আবাদ করতে দিচ্ছে না ওই পক্ষ। চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেন মুল অভিযুক্ত আব্দুল মালেক বলেন, মার্ডারের পর কিছু গরু-বাছুর আমাদের লোকজন নিয়ে আসছিল। সেই সময়ই পুলিশের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি করা হচেছ না। যারা বাড়িতে আসছেন না তারা বাড়িতে আসুক। তাদের কেউ কিছু বলবে না। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ইমরান হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা হলে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। লুটপাট ও চাঁদাবাজির বিষয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত
ঝিনাইদহ :: দালান বাড়ি শুরু করেছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রেজাউল। কিন্তু নির্মান সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি কাজ বন্ধ রেখেছেন। বাজেটে আর কুলাচ্ছে না তার। নির্মান সামগ্রীর দাম হু হু কের বৃদ্ধি পাওয়ায় রেজাউলের মতো পরিবারগুলো এখন হাফিয়ে উঠেছে। ঝিনাইদহ জেলায় রড, সিমেন্ট, ইটসহ সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণকারিরা। ঝিনাইদহেগর মধুহাটী ইউনিয়নের চোরকোল বাজারের কিয়াম উদ্দীন জানান, এ্যলিফ্যান্ট সিমেন্টের প্রতি বস্তার দাম ছিল ৪৩০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। অন্যান্য ব্রান্ডের সিমেন্টের দাম বস্তা প্রতি ৩০- ৪০ টাকা করে বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিবস্তা ৪৮০ - ৪৯০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক মাস আগে বিসআরএম রডের প্রতি কেজি রডের দাম ছিল ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা। তা বেড়ে এখন ৭৫ টাকায়। ইটের দাম গাড়ি প্রতি বেড়েছে এক হাজার টাকা করে। বংকিরা গ্রামের টোকন বিশ্বাস বলেন, তিনি যখন বাড়ির কাজে হাত দেন তখন রডের কেজি ছিল ৬৫ টাকা। তা এখন ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। সিমেন্ট বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। শৈলকুপার রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী সেলিম খান জানান, রড সিমেন্ট কোম্পানী গুলো দাম বাড়িয়েছে। এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। ঢেউ টিনের দাম প্রতি বান্ডিলে ২ ’শ টাকা থেকে ৪’শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১৭’শ টাকা বান্ডিলের টিন বেড়ে ১৯’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৩ হাজার টাকা বান্ডিলের টিন ৩ হাজার ৩০০ টাকা এবং ৪ হাজার ৬০০ টাকা বান্ডিলের ঢেউ টিন দাম বেড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নির্মান ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝিনাইদহের অনেক উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ফোটন জানান, ইট তৈরির খরচ বেড়ে যাওয়ায ইটের দামও চড়ে গেছে। তিনি বলেন, ইটের দাম হাজার প্রতি এক হাজার টাকা বেড়েছে। শৈলকুপার ঠিকাদার শামীম হোসেন মোল্লা জানান, ইট, সিমেন্ট ও রডসহ সকল নির্মান সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। এতে ঠিকাদাররা লোকসান এড়াতে কাজ বন্ধ রেখেছে। তিনি ১২টি কাজ বন্ধ রেখেছেন।