শনিবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা গুলিতে চরমপন্থীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে
কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা গুলিতে চরমপন্থীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: সম্প্রতি কুষ্টিয়ার তালিকাভুক্ত চরমপন্থী লিপটনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী রাশিদুল গং কর্তৃক কুষ্টিয়া রাজাপুর গ্রামের এক গরু ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় সন্ত্রাসীরা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই সকল সন্ত্রাসীরা আটক না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তাদের আটকের বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল কারণ তারা একসময়ে ছিল গণমুক্তিফৌজের ক্যাডার বাহিনী। বর্তমানে তারা এখন মোস্ট ওয়ান্টেড ও বহুল আলোচিত একাধিক মামলার হিট লিষ্টের আসামী লিপটনের সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
একসময়ের চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ছিল কুষ্টিয়া সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা। ওই সময়ের চরমপন্থী সংগঠন শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, জাসদ গণবাহিনী সহ বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠন এর বাঘা বাঘা সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে কিছু চরমপন্থী সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। সেই সাথে শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের নেতা আমিনুল হক মুকুল দেশত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমান, পরবর্তীতে তিনি আর দেশে ফিরে আসেনি। কিন্তু আরেক শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের নেতা দুর্বাচারা এলাকার বাসিন্দা লিপটন তিনি কুষ্টিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সাথে আঁতাত করে জাসদ গণবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের মধ্যেই অবস্থান করে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাগাবাজার সন্ত্রাসীরা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর এলাকা শান্ত হলে ঐসকল সন্ত্রাসীরা ফিরে এসে যোগ দেয় লিপটনের সাথে। লিপটন এর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা রাজাপুর গ্রামের রাশিদুল, আশরাফুল, আইনাল ও শিমুলিয়া গ্রামের বিল্লাল সহ একাধিক সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে তৈরি করেছে চরমপন্থী সংগঠন।এরা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর, ভাদালিয়া, স্বস্তিপুর, রাজাপুর, কাথুলিয়া, শিমুলিয়া, দরবেশপুর সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চরমপন্থী সন্ত্রাসী লিপটনের ডান হাত রাশিদুল তার বাহিনী নিয়ে অত্র এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ নিরবে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, চুরি ডাকাতি ও মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাদের এই কর্মকাণ্ড দেখে ভয়ে আমরা কারোর কাছে মুখ খুলতে পারিনাই। তারা এলাকার সাধারণ ও নিরীহ ব্যক্তিদেরকে ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। ইতিপূর্বে খাজানগর কবুরহাটের একটি রাইস মিলে চাঁদা নিতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা যায় চরমপন্থী সন্ত্রাসী মাহবুল। ওই সময় মাহাবুলের সাথে জড়িত ছিল রাশিদুল, আশরাফুল, বিল্লাল, আয়নাল সহ তাদের পুরা সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকাবাসী আরও জানায় তাদের কাছে রয়েছে অনেক ভারী ভারী অস্ত্র যা ইতিপূর্বে বিভিন্ন জায়গায় পুঁতে রেখেছিল। সেগুলো তারা নতুন করে আবার সেখান থেকে উদ্ধার করে নিরবে চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। নিরবে এই সকল চরমপন্থী এসকল অঞ্চলে নিরীহ ব্যক্তিদেরকে জিম্মি করে এভাবেই সংগঠন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর, তবে এর পেছনের কারিগর রয়েছে সেই চরমপন্থী নেতা লিপটন।
পাশাপাশি রাত নেমে আসলেই শুরু করে তাদের তান্ডব লীলা। তারই সূত্র ধরে সন্ত্রাসী লিপটনের নির্দেশমতে রাশিদুল আয়নাল আশরাফুল, বিল্লাল সহ সাতজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী গত ১৭ তারিখ রাত আনুমানিক ৮ ঘটিকা সময় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের এক গরু ব্যবসায়ী শরীফ নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় খয়ের পুর গ্রামের মাঠে। উক্ত মাঠে নিয়ে গিয়ে তাকে পিঠমোড়া করে বেঁধে বুকে দুইটা পিস্তল ঠেকিয়ে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে আমরা গণমুক্তিফৌজের লোক। মূলত তারা গণমুক্তিফৌজের কোন ব্যাক্তি নয় বলে জানান উক্ত এলাকার বাসিন্দারা। কারণ গণমুক্তিফৌজ আজ থেকে দেড় যুগ আগে বিলীন হয়ে গেছে। রয়েছে জাসদ গণবাহিনী, আর এই জাসদ গণবাহিনীর মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন চরমপন্থী সন্ত্রাসী লিপটন।
উল্লেখ্য যে গরু ব্যবসায়ী শরীফের বাড়ি কুমিল্লার চাঁদপুর এলাকায়। গত দুই বছর আগে তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামে একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে প্রথমে শুরু করেন গরুর ব্যবসা। উক্ত গরুর ব্যবসায় তিনি লাভবান না হতে পেরে অবশেষে রাজাপুর গ্রামে একটি জমি ক্রয় করে সেখানে গত ৩ মাস আগে বড় আকারে একটি গরুর খামার তৈরি করে। খামার তৈরি করার শুরুতেই প্রতিনিয়ত তার কাছ থেকে এই সন্ত্রাসী বাহিনীটি তার কাছ থেকে প্রায়ই ২০,৩০,৪০ হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন অবশেষে তারা গত ১৭ তারিখে তাকে অপহরণ করে বুকে দুইটা অস্ত্র ঠেকিয়ে ১০ লক্ষ টাকা আদায় করে বলে স্বীকার করেন গরু ব্যবসায়ী শরীফ।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে গত ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় শরিফের গরুর খামারের পাশে এলাকাবাসীদের নিয়ে মিটিং বসে উক্ত মিটিংয়ে আশরাফুল ও রাশিদুল উপস্থিত হলেও বাকিরা কেউ উপস্থিত হয় নাই। তবে এ বিষয়ে শরিফ ভয়ে প্রথমে মুখ খুলতে রাজি হননি পরবর্তীতে তিনি প্রতিবেদক এর কাছে সম্পূর্ন কথা খুলে বলেন। তিনি এটাও বলেন যে, তারা আমাকে নানা রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে বলে যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের কাছে মুখ খুললে তুই সহ তার পরিবার হারিয়ে যাবে। এ বিষয়ে গত ১৯ তারিখ রাত্রে রাশিদুল এর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করে লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে নিউজ বন্ধের জন্য আমাকে বিভিন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে ফোন করানো শুরু করেন।
রাজাপুর এলাকার বাসিন্দারা প্রতিবেদকের কাছে বলেন, বর্তমানে আমরা পর্দার অন্তরালে থাকা মোস্ট ওয়ানটেড তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও হিটলিস্টের আসামি লিপটন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী রাশিদুল গংদের দিয়ে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে যাচ্ছেন। তারা আরো বলেন, আমরা এলাকাবাসী ওই চরমপন্থী লিপটন সহ রাশিদুল গংদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য কুষ্টিয়া জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।