বৃহস্পতিবার ● ২৯ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কালের সাক্ষী ৮’শ বছরের পুরনো সাহেববিবি মসজিদ
কালের সাক্ষী ৮’শ বছরের পুরনো সাহেববিবি মসজিদ
আমির হামজা :: চট্টগ্রামের রাউজানে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৮০০ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী সাহেববিবি মসজিদ। রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের হাঁড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত এ মসজিদ শুধু রাউজানেই নয়, পুরো চট্টগ্রামের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও কালজয়ী নাম। এ মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক দারুণ ইতিহাস। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আরাকান রাজ সভার কবি মহাকবি আলাওলের একমাত্র কন্যা সাহেববিবি (প্রকাশ সাহাবিবি) নামকরণে এই মসজিদ ‘সাহেববিবি মসজিদ’ নামে পরিচিত। সাহেববিবি হলেন রাউজান উপজেলার প্রসিদ্ধ জমিদার হাঁড়িমিয়া চৌধুরী বংশের আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর সহধর্মিণী। আমির মোহাম্মদ চৌধুরী-সাহেববিবি দম্পতির দুই কন্যা আলাকা বানু ও মালকা বানু। মালকা বানু বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক কালজয়ী নাম এবং চরিত্র। মালকা বানু নিয়ে দেশে হয়েছে অসংখ্যা নাটক ও ছবি।
মালকা বানু চট্টগ্রামের বাঁশখালির জমিদার মনু মিয়ার প্রেমে পড়ে বিয়ে করেন এবং বাঁশখালিতে বসবাস করেন। মালকা বানু আর মনু মিয়াকে নিয়ে হয়েছিল চলচ্চিত্র। সেই ঐতিহাসিক মালকা বানুর মা সাহেববিবির নামে করা সাহেববিবি মসজিদ। যা এখনো কালজয়ী এক স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে রাউজানের বুকে। চুন সুড়কির গাঁথুনিতে নির্মাণ করা হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর সাহেববিবি মসজিদটি। এর পাশে ও সামনে প্রায় ৪ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে গেইট। স্থাপনাটি ৮টি পিলার, ৩টি দরজা, দুটি জানালা ও ১ গম্বুজ বিশিষ্ট। কারুকাজের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে শৈল্পিক রূপ। স্থাপত্যের পাশে খনন করা হয়েছে বিশাল দিঘী। ৮’শ বছর পূর্বে নির্মিত স্থাপনাটি রূপগত পরিবর্তন করে বর্তমানে লাগানো হয়েছে টাইলস। এই মসজিদে নামাজ পড়তে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্যা মুসল্লীরা ছোটে আসেন। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় সাহেববিবি মসজিদ দেখার জন্য দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন সময়ে সময়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর পত্নী ও চট্টগ্রামের আলোচিত মালকা বানুর মা সাহেববিবি এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদের পাশে রয়েছে ফুলবাগান সম্বলিত কবরস্থান যেখানে শায়িত আছেন এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মরহুমা সাহেববিবি। এছাড়াও এর পাশে আছে সাহেববিবি দীঘি, যাকে শাহী পুকুর নামে পরিচিত। আর মসজিদের পাশে ঈদগাহ মাঠ যা দুই ঈদে এই মাঠে ধর্মপ্রাণ ইসলাম ধর্মের মানুষ’রা নামাজ আদায় করে থাকেন। এই মসজিদ কবরস্থানসহ ৩০শতক জায়গার উপর নির্মিত। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজান বাইন্ন্যাপুকুর এলাকার দক্ষিণ পার্শ্বের একটু অদূরে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের হাঁড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন সাহেববিবি মসজিদটি। ওই স্থানের মানুষের প্রাণের মসজিদ এটি। সঠিক কোন তথ্য না থাকলেও স্থানীয় প্রবীনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮’শ বছর পূর্বে মসজিদটি নির্মাণ করেন রাউজান গ্রামের জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর স্বনামধন্য পত্নী ও চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ মালকা বানুর মা সাহেববিবি। স্থানীয়দের তথ্যমতে, কবরস্থানসহ মসজিদটি ৩০ শতক জমির উপর নির্মিত। বিভিন্ন কারুকাজ সম্বলিত টেরাকোটার ইট ও চুন-সুরকির গাঁথুনিতে মসজিদটি নির্মিত। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশপথ। পশ্চিম দিকে গম্বুজ থেকেও উঁচু মিম্বর। আগে দেয়াল
মসজিদের বিষয়ে কথা হয় এলাকার অনেক বয়সী কয়েকজন বৃদ্ধালোক দের সাথে, তাঁরা বলেন ছোট বেলায় দাদার মুখে শুনেছিলাম এই মসজিদটি বহু বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল। আমার দাদাও তার দাদার মুখে শুনেছিল এটি বিদেশী মিস্ত্রী দ্বারা শতশত বছর পূর্বে নির্মাণ করেছে। এই মসজিদে নাকি তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোছাভাত (আঞ্চলিক শব্দ) অর্থাৎ কয়েকদিনের খাবার নিয়ে পাঁয়ে হেটে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো নামাজ পড়ার জন্য। বাদশা মুহাম্মদ শাহ স্টেট’র আমলে ডিমের আটা, চুন-সুরকি দিয়ে দেশের ২২টি গ্রামে একই রকম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ২২টি মসজিদের মধ্যে প্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল সাহেববিবি মসজিদ।’ সাহেববিবি মসজিদটির ভেতরে প্রায় শতাধিক মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি মোতোয়াল্লী তত্ত্বাবধানে গত ৪ বছর আগে রূপগত পরিবর্তন করা হয়।