বৃহস্পতিবার ● ২৯ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » ঢাকা » অন্তর্ভূক্তিকরণ পদ্ধতি সংস্কারে রাষ্ট্রপতি বরাবর খোলা চিঠি
অন্তর্ভূক্তিকরণ পদ্ধতি সংস্কারে রাষ্ট্রপতি বরাবর খোলা চিঠি
বিজ্ঞপ্তি :: আইনজীবী সনদ অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে সংগঠনের আহ্বায়ক সুজন বিপ্লব আইনজীবী অন্তর্ভূক্তিকরণ পদ্ধতি সংস্কারে ৪ টি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছেন।
নিম্নে পুরো খোলা চিঠি টি তুলে ধরা হলো :
মহামান্য রাষ্ট্রপতি,
আইনজীবী সনদ অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা নিবেন। জনজীবনের নানাবিধ সংকটে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আপনার শরণাপন্ন হতে হয়।
তেমনি এক সংকট বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ প্রত্যাশা করছি।
আমাদের দেশে চলমান পদ্ধতি অনুযায়ী একজন আইনের ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক বা এলএলবি (সম্মান) অথবা এলএলবি (পাস) উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাঁকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে আবার তিন ধাপের পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার পর আইনজীবী সনদ দেয়া হয়। কখনো কখনো এ তিন ধাপের পরীক্ষা একবার সম্পন্ন হতে তিন-চার বছর সময় লেগে যায়। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশ বেকারত্ব বৃদ্ধির হারে বিশ্বের শীর্ষের তালিকায় অবস্থান করছে। সেইসাথে অধিকাংশ তরুণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এমন নয় যে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পরও ৩-৪ বছর বা আরো বেশি সময় উপার্জনহীন অথবা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পিছে ছুটতে পারবে। এক বা একাধিক বার এই তিন ধাপের কোন একটিতে অকৃতকার্য হলে অপেক্ষাকাল আরো অনির্দিষ্ট হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় যে আইনে স্নাতকদের শতকরা আশি জনেরও বেশি আইন সম্পর্কিত পেশার বাইরে অন্য কোন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আইনজীবী কোন বেতনভূক্ত চাকুরে নন। আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করাটাই আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা নির্দেশক। স্নাতক ডিগ্রি যদি যোগ্যতার পরিচায়ক না হয় তবে এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার শিক্ষাপদ্ধতিকে হেয় প্রতিপন্ন করে অথবা ত্রুটি নির্দেশ করে। আইন শিক্ষায় ত্রুটি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাঠ্যসূচি ও পঠন-পাঠন পদ্ধতি সংস্কার করে ত্রুটি দূর করার নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে আমরা দেখতে পাই গত ২৭ এপ্রিল, ২০২০ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রায় ৭০০০০ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে মাত্র ৮৭৬৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। সংখ্যাগুলোই প্রমাণ করে যে পরীক্ষাটি প্রকৃতপক্ষে একটি ছাঁটাই প্রক্রিয়া। আর এ ছাঁটাই প্রক্রিয়ার চক্করে পড়ে একদল স্বপ্নবান তরুণের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে।
আইন পেশার শিক্ষানবিশ ও আইন ছাত্রদের জাতীয় প্লাটফর্ম হিসেবে ১৩ আগস্ট, ২০২০ আইনজীবী সনদ অধিকার আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংকট সমাধানে ৪ দফা বিকল্প প্রস্তাবনা নিয়ে সভা-সমাবেশ-মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সারাদেশে মাসব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, দাবি মাসান্তে বাংংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব মহোদয় সমীপে ডাকযোগে স্মারকলিপি পেশ, রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করে মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি পেশ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ, বিজ্ঞ আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও আইন শিক্ষানবিশদের অংশগ্রহণে জাতীয় মতবিনিময় (ভার্চুয়াল) সভা ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছি।
বর্তমানে বৈশ্বিক কোভিড মহামারি জীবন ও জীবিকা উভয়কেই যেভাবে বিপন্ন করেছে আইন শিক্ষানবিশগণ তার ভয়ংকর শিকার। আইনজীবী অন্তর্ভূক্তিকরণের অযৌক্তিক বিড়ম্বনা ও অনিশ্চয়তা আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে আজকের মহামারি। এমতাবস্থায় সংকটের গ্রহণযোগ্য সমাধানে আমরা আমাদের চার দফা বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আপনার দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছি।
আইনজীবী সনদ অধিকার আন্দোলনের চার দফা বিকল্প প্রস্তাবনা:
১) কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষা হিসেবে আইন স্নাতকদের বিশেষায়িত আইন পেশায় প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা নিরসনে জটিল, ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ, ছাঁটাইমুখী ও হয়রানিমূলক তিন ধাপের পরীক্ষা বাতিলপূর্বক অবিলম্বে সকল আইন শিক্ষানবিশের পর্যায়ক্রমে আইনজীবী সনদ প্রদানের নিশ্চয়তা বিধানে অনলাইন নিবন্ধন চালু, নিবন্ধিত শিক্ষানবিশগণের এক বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে সৃজনশীল পদ্ধতিতে আইনজীবী অন্তর্ভূক্তিকরণ পরীক্ষা, পুনপরীক্ষণ ব্যবস্থা ও সনদ প্রদান সম্পন্ন করা অন্যথায় বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে আইনজীবী সনদ প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান করা।
২) শিক্ষানবিশকালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার ও অ্যাসাইনমেন্টে অংশগ্রহণমূলক সৃজনশীল পরীক্ষা অন্যথায় বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন সাপেক্ষে আইনজীবী সনদ প্রদান করা। প্রতি জেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র ও পরীক্ষার্থীদের নিজ জেলায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা।
৩) বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সমন্বয় সভার মাধ্যমে নির্দিষ্ট মেয়াদে আইনে স্নাতক পর্যায়ে কাম্য ছাত্রসংখ্যা নির্ধারণ করা অথবা বিশেষ প্রতিষ্ঠান গঠন করে আইনের ছাত্র সংখ্যা, সিলেবাস ও পেশাগত সংকট নিরসনে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা।
৪) মামলাজট নিরসন, আইন সংশ্লিষ্ট সেবার মানোন্নয়ন ও জনতার নিকট সেবা পৌঁছাতে উপজেলা পর্য়ায়ে আদালত চালু, গ্রাম-আদালত পর্যন্ত পর্যাপ্ত বিচারক-কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ ও আইনজীবীদের কার্যক্রম বিস্তৃত করা। বিজ্ঞ আদালতে মামলা পরিচালনার নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত আইন শিক্ষানবিশদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে অন্তর্ভূক্তিকরণের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষানবিশদের ন্যূনতম সম্মানী নির্ধারণ ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
আইনজীবী অন্তর্ভূক্তিকরণ পদ্ধতি সংস্কারে উক্ত প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন মেধাবী, দক্ষ ও স্বপ্নবান তরুণদের আইনপেশায় অংশগ্রহণের পথ সুগম করবে এবং একই সাথে জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও মানসম্মত সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী হিসেবে আপনার বিবেচনার্থে আমাদের আর্জি নিবেদিত হল।
ইতি
সুজন বিপ্লব
আহ্বায়ক
আইনজীবী সনদ অধিকার আন্দোলন