রবিবার ● ২ মে ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটিতে জিপনে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া শুরু হয়েছে
রাঙামাটিতে জিপনে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া শুরু হয়েছে
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সংযোগ প্রক্রিয়া ‘ঝামেলাহীন’ এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ ‘সহজলভ্য’ হওয়ায় গ্রাহকরাও সাড়া দিচ্ছেন। তবে চাহিদা অনুযায়ী সংযোগ দিতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানি।
২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ল্যান্ডফোনে বিনামূল্যে সংযোগ দেওয়া শুরু হলে চাহিদা বাড়তে শুরু করে।
গত ২৬ মার্চ ২২ জেলায় গিগাবাইট প্যাসিভ অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক (জিপন), যা অপটিকাল ফাইবারের মাধ্যমে বিটিসিএল টেলিফোন পরিষেবার সঙ্গে ইন্টারনেট সরবরাহ করছে।
রাঙামাটি জেলায় গত ১২ এপ্রিল থেকে গিগাবাইট প্যাসিভ অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক (জিপন) সংযোগ দেয়া শুরু হয়েছে।
কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া একজন জিপন গ্রাহক তার নিজের এনআইডি কার্ডের ফটো কপি ও এক কপি ছবি দিয়ে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করার পর তিনশত তিন টাকা বিকাশ অ্যাপস থেকে ডিমান্ড নোট নম্বার (এম ২০২১ ….) পরিশোধ করার পর বিটিসিএলের পক্ষ থেকে জিপন সংযোগ দেয়া হয়।
বিটিসিএল রাঙামাটি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, রাঙামাটি বিটিসিএল ৪৯ পোল বা সংযোগ স্থান থেকে ৩৯২০ টি জিপন সংযোগ দিতে সক্ষম।
এ পর্যন্ত রাঙামাটিতে অনলাইনে ৬০ জন গ্রাহক আবেদন করেছেন তারমধ্যে ১৫টি সংযোগ দেয়া হয়েছে।
রাঙামাটিতে জিপন সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে।
সরেজমি গিয়ে দেখা গেছে, বিটিসিএল রাঙামাটি কার্যালয়ের লজেষ্ট্রিক সাপোর্ট তেমন একটা নাই, যেমন- দক্ষ লোকবল সংকট, গাড়ির সংকট ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সংকট এছাড়া বিটিসিএল রাঙামাটি কার্যালয়ের ভবনটি দীর্ঘ দিনের পুরাতন জরাজীর্ণ দরজা-জানালা ভাঙ্গা, ভবনের ইটের দেওয়াল খসে পড়ছে, কার্যালয়ের বেশীর ভাগ কক্ষে লাইট, ফ্যান বিকল, বিদ্যুৎ সংযোগ নষ্ট, ওয়াশ রুম নষ্ট, ভবনের ভিতরে এবং বাইরে রং এর বদলে শেওলাতে ভর্তি ও দুরগন্ধে ভরা ভুতুরে একটি ভবন। তার পরও এ ভবনে করোনাকালিন লকডাউনের মধ্যে জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছেন বিটিসিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।
এবিষয়ে রাঙামাটি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মান করার কাজ শুরু হবে, তখন রাঙামাটি কার্যালয়ের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশার বাণী শোনান তিনি।
বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল মতিন বলেন, “বিটিসিএলের ইন্টারনেটে সেবার মান ভালো থাকায় এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তবে সক্ষমতা না থাকায় অনেক জায়গায় এ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।”
বিটিসিএল এর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, ২০২০ এর ১৫ জুন থেকে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত উচ্চগতির ইন্টারনেটসহ জিপনের আবেদন পড়েছিল ১১ হাজার ৮৩৫টি। এর মধ্যে সংযোগ দেওয়া যাবে এ রকম ৬ হাজার ৮০৮ জনকে ডিমান্ড নোট দেওয়া হয়েছিল।
পরে তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৩৪৬ জনকে সংযোগ দেওয়া হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে জিপনের মাধ্যমে দুই থেকে ১০ এমবিপিএস পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে বিটিসিএল।
বিটিসিএলের এ হিসাবে আবেদনকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশই সংযোগ পাননি।
এ বিষেয়ে বিটিসিএল এমডি বলেন, “অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে এ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাই সব জায়গায় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মূল সড়কের পাশে রয়েছে এ রকম স্থাপনা বা কাছাকাছি জায়গায় এ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে। তবে চাহিদা বাড়ায় সেবার পরিধি বাড়াতেও কাজ হচ্ছে।”
সেজন্য প্রায় তিন হাজার ৩১৪ কোটি টাকায় টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ (এমওটিএন) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে রফিকুল মতিন বলেন, কাজ শেষ হলে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করা যাবে।
এ প্রকল্পের আওতায় ১৬ লাখ গ্রাহক ধারণ ক্ষমতার তিনটি এমআইএস কোর, ৫৬০টি ডিজিটাল এক্সচেঞ্জ প্রতিস্থাপন, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ডিডব্লউবিএম রিং, দেশের সব জেলায় জিপন সেবা এবং ২০ লাখ গ্রাহক ধারণ ক্ষমতার বস সিস্টেম স্থাপন করা হবে বলে জানান রফিকুল।
“জিপন ট্রিপল প্লে কেবলে তিনটি সেবা ইন্টারনেট, টেলিফোন ও টিভি চ্যানেল সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন শুধু ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেবা দেওয়া হচ্ছে।”
আগামীতে এ দুই সেবার সঙ্গে কেবল টিভির সেবাও যুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানান বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সেবা দিতে বিটিসিএল এগিয়ে আছে দাবি করে তিনি বলেন, নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন (এনটিটিএন) সেবায় কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার আন্ডার গ্রাউন্ড কেবল রয়েছে। কোনো ওভারহেড কেবল নেই। অন্যান্য এনটিটিএনগুলোর ওভারহেড কেবল থাকায় প্রায়ই তাদের সংযোগে সমস্যা হয়, যা বিটিসিএলে হয় না।
রফিকুল মতিন বলেন, “এই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের আরো উন্নত সেবা দেওয়া যাবে। সাধারণ ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ইন্টারনেট সংযোগ ও গতিতে যে সমস্যা প্রায়ই হচ্ছে, তা বিটিসিএলের গ্রাহকদের হবে না।
এবিষয়ে বিটিসিএল রাঙামাটি কার্যালয়ের কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক কারন চাকমা বলেন, জিপনে উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ফ্রি সংযোগ অফারে ২ এমবিপিএস ৩৫০/=, ৫এমবিপিএস ৫০০/= ১০ এমবিপিএস ৭৫০/= ও ২০ এমবিপিএস ১২০০/= টাকা হারে মাসিক বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ নিধারন করায় এছাড়া ১০ এমবিপিএস ও ২০ এমবিপিএস এর সংযোগের সাথে বিটিসিএলের পক্ষ থেকে রাউটার বা মডেম ফ্রি দেয়া ঘোষনায় গ্রাহক বেড়ে চলছে।