রবিবার ● ২ মে ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ » সাধন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে মাতৃহারা শিশু ধর্ষনের আলামত পাওয়া গেছে
সাধন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে মাতৃহারা শিশু ধর্ষনের আলামত পাওয়া গেছে
ষ্টাফ রিপোর্টার :: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার আবুরখীল, নন্দনকানন, ১২ নং উরকিরচর ইউনিয়নে সাধন বড়ুয়া নামের ৬০ বছরের বৃদ্ধের বিরুদ্ধে ডাক্তারী পরিক্ষায় মাতৃহারা ১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
গত বছর ৪ অক্টোম্বর-২০২০ রাউজান থানায় মৃত যামিনী বড়ুয়ার পুত্র সাধন বড়ুয়া (৬০) এর বিরুদ্ধে ধর্ষণের শিকার মাতৃহারা ১০ বছরের শিশুর পিতা বাদি হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে রাউজান থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
৪ অক্টোম্বর-২০২০ তারিখ রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ্ আল হারুনের পরামর্শে ধর্ষণের বিচার চেয়ে এজাহারটি রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) নূর হোসেন দুলাল এর নিকট জমা দেওয়া হয়।
৪ অক্টোম্বর ও ৫ অক্টোম্বর-২০২০ তারিখে “রাউজানে শিশুকণ্যাকে ধষণের অভিযোগ” সংবাদ শিরোনামে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়া এবং সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়াতে গত ৫ অক্টোবর-২০২০ সোমবার শিশু ধর্ষণের অভিযুক্ত সাধন বড়ুয়াকে রাউজান উপজেলার এক প্রভাবশালী ব্যাক্তির আশ্রয়স্থল থেকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭ সিপিসি-২ হাটহাজারী ক্যাম্প।
পরে ৫ অক্টোবর র্যাবের অভিযানে ধর্ষক সাধন বড়ুয়াকে আটক করা হলে তড়িগড়ি করে রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন ধর্ষণের শিকার মাতৃহারা ১০ বছরের শিশুর পিতার এজাহারটি আংশিক পরিবর্তন করে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোধনী ০৩) এর ৯ (১) ধারায় মামলাটি (৫ অক্টোবর-২০২০ সন্ধ্যা ৭টায়) নথিভুক্ত করেন। রাউজান থানার মামলা নং ০৭, তারিখ ৫/১০/২০২০ ইংরেজি।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তভার দেয়া হয় রাউজান থানার এসআই শাহাদাত হোসেনকে।
৫ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় রাউজান থানায় মামলা রুজু হওয়ার পরে রাত ১১টার দিকে ধর্ষক সাধন বড়ুয়াকে রাউজান থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে র্যাব-৭।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহাদাত হোসেন পরের দিন ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কগনিজেন্স আদালতে হাজির করা হলে আদালত শিশু ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাধন বড়ুয়াকে জেলা হাজতে প্রেরনের আদেশ দেন। ডাক্তারী পরিক্ষা এবং ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মাতৃহারা ১০ বছরের এক শিশু ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাউজান থানার এসআই শাহাদাত হোসেন অত্যন্ত দক্ষতার সহিত এমামলায় ৭ জন সাক্ষির জবানবন্দি, জব্দ তালিকা, ফরেনসিক রিপোর্ট, ডাক্তারী পরিক্ষার রিপোর্ট, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও মামলার গুরুত্বপূণ নথিসহ ৫৮ কর্মদিবসের মধ্যে ৪৫ পাতার ধর্ষক সাধন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে চুড়ান্ত অভিযোগপত্র ২১ ডিসেম্বর-২০২০ তারিখ আইও তার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন।
আদালত মাতৃহারা ১০ বছরের এক শিশু ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনটি ২৮ ডিসেম্বর-২০২০ তারিখ গ্রহন করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার চুড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, “আসামী সাধন বড়ুয়া (৭৫) টাকার প্রলোভন দেখাইয়ে কাইশ্যাপুকুর পাড়ে ভান্তের রুমে ভিকটিমকে নিয়ে যায়। তার পর উক্ত আসামী যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্যেশ্যে ভিকটিমের প্যান্ট খুলে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। তার পর ভিকটিম যেন কাউকে কিছু না বলে তার জন্য ভিকটিমকে একশত টাকার ৫টি নোট প্রদান করে। তার পর ভিকটিম সেই টাকা দিয়ে সাক্ষি (ছদ্মনাম) তাপস বড়ুয়া ও (ছদ্মনাম) সৈকত বড়ুয়ার কাছ থেকে ফটকা (বাজি) কিনে ফুটায়। ধৃত আসামী সাধন বড়ুয়া ভিকটিমকে কাইশ্যাপুকুর পাড়ে ভান্তের কক্ষে নিয়ে তাহার প্যান্ট খুলে জোরপূর্ব্বক ধর্ষণ করার অপরাধ করেছেন মর্মে তদন্তেও স্বাক্ষ্য প্রমানে আসামী সাধন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ০৩) এর ৯ (১) ধারার অপরাধ প্রাথমিক ভাবে সত্য বলিয়া প্রতীয়মান হয়।
ভিকটিমের ডাক্তারী সনদ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ডা. ফারজানা রহমান, ও,এস,ডি (ডি জি এইচ এস) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মহোদয় স্বাক্ষরিত ভিকটিমের ডাক্তারী পরীক্ষা করার সময় vaginal canal: Admit tip of finger & redness present in the vagina অবস্থায় ছিলো উল্লেখ পূর্বক রিপোর্টে মতামত দেন যে, 01.There are positive sign of vulver penelsation having been performed on her. 02. The age of the victim … is about Ten(10) years.
আমার সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার পারিপার্শি¦কতায়, ভিকটিমের ২২ ধারার জবানবন্দি ও ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনায় এজাহার নামীয় গ্রেফতারকৃত আসামী কর্তৃক অত্র মামলার ভিকটিম (১০) কে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্ব্বক ধর্ষণ করিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ০৩) এর ৯ (১) ধারার অপরাধ প্রাথমিক ভাবে সত্য বলিয়া প্রতীয়মান হওয়ায় অত্র মামলার এজাহার নামীয় গ্রেফতারকৃত আসামী সাধন বড়ুয়া (৭৫), পিতা মৃত যামিনী বড়ুয়া, মাতা-মৃত বনলতা বড়ুয়া, সাং-আবুরখীল, নন্দন কানন, (ননী চৌকিদার বাড়ী) ০২ নং ওয়ার্ড, থানা রাউজান, জেলা চট্টগ্রাম এর বিরুদ্ধে রাউজান থানার অভিযোগপত্র নং-১৬৪, তারিখ: ২১/১২/২০২০ ধারা-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ০৩) এর ৯ (১) দাখিল করিলাম।
ভিকটিমের পিতা জানান, তার স্ত্রী আনুমানিক ৯ বছর পূর্বে তার নাবালক পুত্র এবং তার মেয়ে ছদ্মনাম কলি বড়–য়া রেখে মৃত্যু বরন করেন। তার ছেলে ও মেয়ের দেখাশোন করার মত কেউ না থাকার কারণে তার ছেলে ও মেয়ে কলি বড়ুয়া (১০)কে লেখা পড়া ও দেখাশোনার স্বার্থে রাউজান থানাধীন আবুরখীল নন্দন কাননস্থ তার ছোটবোন এর তত্ত্বাবধানে তাহার শশুরবাড়িতে রেখে পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন। অভিযুক্ত সাধন বড়ুয়া গত ৩ অক্টোম্বর-২০২০ তারিখে তার অবুজ মাতৃহারা নাবালিকা কণ্যা কলি বড়ুয়া (১০) কে অভিযুক্ত সাধন বড়ুয়া ফুসলাইয়া ও লোভ লালসা দেখাইয়া সাধন বড়ুয়ার বসতঘরের দক্ষিণ পার্শ্বের কাইশ্যাপুকুর পাড়ে নিয়ে তার মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে এবং তার মেয়েকে ৫শত টাকার একটি নোট ধরিয়ে দেয়। ভিকটিমের পিতার বোন তার মেয়ের হাতে ৫শত টাকার নোট দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার মেয়ে কলি বড়ুয়া তার বোনের কাছে স্বীকার করে যে, তার অবুজ নাবালিকা শিশুকণ্যা কলি বড়ুয়া (১০) কে দীর্ঘদিন ধরিয়া ফুসলিয়ে ও লোভ লালসা দেখিয়ে অভিযুক্ত সাধন বড়ুয়া তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করিয়া আসিতেছে। বিষয়টি মোবাইল ফোনে গতকাল ৩ অক্টোম্বর-২০২০ তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার সময় মোবাইল ফোনে ঘটনার বিষয়টি জানালে তিনি ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকায় ৪ অক্টোম্বর-২০২০ তারিখ সকাল আনুমানিক ৯টার সময় আবুরখীল, নন্দনকানন তার ছোট বোনের বাড়ীতে তিনি বোন ও তার অবুজ শিশুকণ্যা কলি বড়ুয়াকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে অভিযুক্ত সাধন বড়ুয়া (৬০) তার মেয়েকে ধর্ষন করিয়া একটি ৫শত টাকার একটি নোট ধরিয়ে দেয় বলে স্বীকার করে।
তার অবুঝ নাবালিকা কণ্যাকে ধর্ষনের ন্যায় বিচারের প্রার্থনা করেন।
এ মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট মোস্তফা কামাল বলেন, মাতৃহারা ১০ বছরের শিশু ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি এখন চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে আসামী সাধন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ০৩) এর ৯ (১) ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে।
আজ ২রা মে-২০২১ ইংরেজি তারিখ এ মামলার ৮২ তম কার্যদিবস ৯০ তম কার্যদিবস আগামী ১৬ মে-২০২১ ইংরেজি তারিখ পূর্ণ হবে। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ০৩) এর ৯ (১) ধারার মামলা ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কার্য শেষ করার বিষয়ে জানতে চাইলে এডভোকেট মোস্তফা কামাল বলেন, আইনে তো আছে, ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে এধরনের মামলার নিষ্পত্তি করা। কিন্তু সম্ভব হবে না। মামলার বিচার কার্য চলছে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহন শুরু হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন কালিন কোর্ট বন্ধ থাকায় এ মামলার সাক্ষীগণের সাক্ষ্য নেয়া স্থগিত রয়েছে। কোর্ট চালু হলে মামলার সাক্ষ্যগ্রহন শুরু হবে।
তিনি বলেন, রাউজান থানার মামলা নং ০৭, তারিখ ৫/১০/২০২০ এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনে এবং ডাক্তারী পরিক্ষার প্রতিবেদনে আসামী সাধন বড়ুয়া কর্তৃক মাতৃহারা ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এটা একটা অত্যান্ত সংবেদনশীল মামলা। এমামলার বিচার কার্য বিলম্ব করার কোন সুযোগ নাই।