সোমবার ● ১০ মে ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » ২৪ লক্ষ টাকার ধান কাটার মেশিন নষ্ট : কৃষকের মাথায় হাত
২৪ লক্ষ টাকার ধান কাটার মেশিন নষ্ট : কৃষকের মাথায় হাত
আমির হামজা, ষ্টাফ রিপোর্টার :: চট্টগ্রামের রাউজানে সরকারি ভর্তুকি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ভুর্তকি দিয়ে অবশিষ্ট ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ২০ কিস্তিতে পরিশোধের চুক্তিতে কম্বাইন হারভেস্টারটি কিনেছিলেন রাউজান উপজেলার পূর্বগুজরা ইউনিয়নের আধারমানিক গ্রামের কৃষক পীযুষ কান্তি চৌধুরী বিশু। করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকট আর কম খরচে সময়মতো ফসল ঘরে তোলার জন্য এই ধান কাটার মেশিনে অধিক সুবিধা সম্বলিত এই যন্ত্রটি কেনা হলেও ব্যবহারের মাত্র কয়েক দিনের মাথায় বর্তমানে অচল হয়ে পড়েছে। সময়মতো ঘরে তুলতে না পারায় জমির ধান জমিতে নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ধান কাটার ব্যাপক শ্রমিক সংকটে রয়েছে বোরো চাষিরা, করোনাভাইরাসের কারণে কাজ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তেমন কোন মানুষ কাজে যোগ দিতে আসেনি। আসলেও তাঁদের দাম চড়া। এদিকে বৃষ্টি শুরু হলে কৃষক বিশুর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে, মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হবে। এই আধুনিক ধান কাটার মেশিন নষ্ট হয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় পড়ছে কৃষক বিশু।
জানা যায়, কৃষক বিশু চৌধুরী ৪০একর জমিতে বোরা ধানের চাষাবাদ করেছেন। ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ফলনও ভাল হয়েছে। সময়মতো ঘরে তুলতে পারলে ১শত ১০ টন ধান উৎপাদন হতো। আধুনিক ধান কাটার যন্ত্র নষ্ট হওয়ায় পাকা বোরো ধান কাটতে হচ্ছে কিছু সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে। যন্ত্র নষ্ট এবং জমির ধান জমিতে নষ্ট হওয়ায় দ্বিমূখী লোকসান ঝুঁকিতে ওই কৃষক। জানা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে কৃষক পীযুষ কান্তি চৌধুরী বিশু ধান, গম, ভুট্টোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষাবাদ করেন। এছাড়া গরু-মহিষের খামার, মাছ চাষ করেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এবার বোরো মৌসুমে রাউজানে ৫৪০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড এবং ৪ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে উফসি ধানের চাষ করা হয়েছে। এসব ধান কাটার জন্য সরকারী ভুর্তকি মূল্যে সরকার ২৪ লাখ টাকার কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রটি দেয়া হয়েছে কৃষকদের।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রার্দুভাবে শ্রমিক সংকট। এই সংকট নিরসনের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে ভুর্তুকি মূল্যে ‘মেটাল এগ্রো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করেন কম্বাইন হারভেস্টার। এই যন্ত্রটি দিয়ে রাউজানে বোরো ধান কাটা উৎসবের উদ্বোধনের পর কৃষক আনোয়ার পাশার ৪একর ধান কেটে নিজের ৩একর ধান কাটার পর অচল হয়ে পড়ে । এরপর মেটাল এগ্রো কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। যন্ত্রটি অচল হয়ে পড়ায় বিপুল পরিমান পাকা বোরো ধান ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জমির ধান জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া এই যন্ত্রের মাধ্যমে ঘন্টায় এক একর জমির ধান কাটা, মারাই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দির সুবিধার কথা থাকলেও বাস্তবে সম্ভব হচ্ছে ৪০ শতক। পাশাপাশি ১০/১২ আড়ি ধান গাছের সঙ্গে রয়ে যাচ্ছে। অথচ এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় যেসব কৃষক বেশি পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করেছেন তাদের ধান কর্তন করার সবিধা প্রদানের কথা ছিল।
এ ব্যাপারে মেটাল এগ্রো’র অফিসে ফোন করা হলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জান বলেন, আমাদের মেক্যানিক ফটিকছড়িতে রয়েছেন। তিনি এক ঘন্টার মধ্যে কৃষক বিশুর বাড়ীতে গিয়ে অচল হওয়া মেশিনটি মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা হবে।
এবিষয়ে রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ বলেন, ধানকাটার যন্ত্রটি অচল হওয়ার ব্যাপারে কৃষক আমাকে বলেনি। মেশিনটি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান মেরামত করে সচল না করলে ফেরত দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।