রবিবার ● ২৩ মে ২০২১
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » নবীগঞ্জে ভেস্তে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগ
নবীগঞ্জে ভেস্তে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগ
উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: নবীগঞ্জ মামলাজনিত কারনে উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছেনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ কাজ। মুজিব বর্ষে হতদরিদ্র ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক এ উদ্যোগ এক প্রভাবশালী লোকের কারণে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এর ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নিমার্ণকৃত ঘরের কাঠসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ সামগ্রী। এর কারণে সুবিধাভোগীদের মাথা গুজার ঠাঁই পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে উক্ত ভূমি নিজের লীজপ্রাপ্ত দাবী করে বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত নবীগঞ্জ এ একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করেছেন আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি। ফলে আদালত নিমার্ণ কাজের উপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন। সেই সাথে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। এতে ৮টি ঘরের চলমান নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকায় সরকারী ভূমি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার স্বপ্নের ঘরে উঠতে পারছেন না ওই ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮টি পরিবারের ভুক্তভোগী লোকজন। বিজ্ঞ আদালতের নিকট জবাব দাখিল করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সুত্রে জানা যায়, সারা দেশের ন্যায় নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র মানাবিক উদ্যোগ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। উপজেলায় ৩৯০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করলে প্রথম ধাপে ১১০টি গৃহ ও দ্বিতীয় ধাপে ৪০টি গৃহ নির্মাণের বরাদ্ধ আসলে কার্যক্রম শুরু হয়। যা বিগত ২৩ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা প্রশাসন পর্যায়ক্রমে ৮৭ টি নির্মিত গৃহ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করেন। ওই সময় ইনাতগঞ্জ বাজার সংলগ্ন দীঘিরপাড় এলাকায় সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের ২২.৭১ শতক ভুমির মধ্যে ৮ জন ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ১৬ শতক ভূমি বন্দোবস্ত দিয়ে ৮টি গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন। ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে একেকটি গৃহ নির্মাণে বরাদ্ধ রয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু করলে আহমদ আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি ভূমি তার নামে বন্দোবস্ত দাবী করে নির্মাণ কাজে বাধা দেন। ফলে সহকারী কমিশনার ভূমি সুমাইয়া মমিন তাকে একাধিকবার নোটিশ করলেও সে উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। গৃহ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে আসলে উপজেলা প্রশাসন ১ম পর্যায়ে ৬০টি ঘর ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে উদ্বোধনের মাধ্যমে সমঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও ২৩ জানুয়ারী ২৫টি ঘর উপকার ভোগীদের মাঝে সমঝিয়ে দেয়া হয়। বাকী নির্মিত ঘর গুলো ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে পর্যায়ক্রমে সমঝিয়ে দিলেও ইনতাগঞ্জের ৮টি ঘর আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে আটকা পড়ে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ওই ৮টি ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক উদ্যোগ এর ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে এ পর্যন্ত ৮৭টি পরিবারের মাঝে গৃহ হস্তান্তর করা হয়। তবে কপাল ভাঙ্গে ইনাতগঞ্জ ভুমিহীন ও গৃহহীন ৮টি পরিবারের। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ করে খাস জমি প্রদান করে ঘর নির্মাণ করে দেয়া কথা রয়েছে। দুই ক বিশিষ্ট প্রতিটি আধা পাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। একই ডিজাইনে বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট ও ইউলিটি স্পেসসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলা হলেও ইনাতগঞ্জ দিঘীরপাড়ে নির্মিতব্য ৮টি ঘরের মধ্যে প্রায় অধিকাংশকাজ শেষ হলেও আবুল কালামের মামলা দায়েরের ফলে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৮টি অসহায় পরিবার। এদিকে আবুল কালাম আজাদের দায়েরকৃত মামলার জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন বলেছেন, আবুল কালাম আজাদের কোন প্রকার বৈধ কাগজ পর্যন্ত নেই। যা তিনি ইতিপূর্বে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ভূমি প্রকৃত অর্থে সরকারের ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত। যা এস এ ও আর এস খতিয়ানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড বিদ্যমান রয়েছে। উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মোস্তাফাপুর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ১২৪/১২০০ দাগে মোট ২২.৭১ শতক ভুমি নদী শ্রেণী হিসেবে এসএ রেকর্ডে বিদ্যমান ছিল। বিগত আরএস জরিপে উল্লেখিত ভুমি ৬৩২ দাগে আউশ শ্রেণী হিসেবে ০.০৩০০ একর, ৬৩৫ দাগে লায়েক পতিত শ্রেণী হিসেবে ০.০৬০০ একর, ৬৩৬ দাগে চারা শ্রেণী হিসেবে ০.৩৬০০ একর, ৬৩৭ দাগে আউশ শ্রেণী হিসেবে ০.২৮০০ একর ভূমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হয়। এরমধ্যে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতি মালা ২০২০ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা মোতাবেক ১৯/২০২০-২০২১ইং নং স্থায়ী বন্দোবস্ত মোকদ্দমায় ইনাতগঞ্জে মোঃ আলফু মিয়া গং, হারুন মিয়া গং, মোঃ ইছব আলী গং, মোঃ ফরাস উদ্দিন গং, মোঃ আব্দুল নুর গং, মোঃ ছমির উদ্দিন গং, অধীর চন্দ্র দাশ গং, মোঃ জিলু মিয়া গং দের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদান পুর্বক নবীগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করে দেয়া হয়েছে। যা পরবর্তীতে তাদের নামে নামজারি করা হয়েছে। উল্লেখিত ভূমিতে সরকারী অর্থায়নে গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু হলে আবুল কালাম আজাদ নামের ওই ব্যক্তি বাধাঁ প্রদান করেন। কিন্তু সে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে। যা ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারী উদ্বোধন ও নির্মিত গৃহ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে সমঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০ জানুয়ারী সহকারী জজ আদালত নবীগঞ্জ এ নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসলে তা আটকা পরে। নির্বাচনী কার্যক্রমের কারণে উপজেলা প্রশাসন আদালতের জবাব বিলম্বে প্রেরণ করেন। পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগের ৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার তাদের নামে বরাদ্ধ দেয়া স্বপ্নের বাড়িতে উঠতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন অনুমান ৭৩/৭৪ সালে স্থায়ী বন্দোবস্ত নেন। এছাড়া তিনি আর কোন তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন যা বলার আদালতে বলবো ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন জানান, উল্লেখিত ভূমিটুকু সরকারী খাস ভূমি। বিধি মোতাবেক মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ৮ জন ভূমিহীনদের মধ্যে ১৬ শতক ভূমি বন্দোবস্ত সম্পন্ন করে তাদের নামে দলিল রেজিস্ট্র করে দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আবুল কালাম আজাদের দাবী অবৈধ ও অযৌক্তিক। এই জায়গা সরকার কাহারো নামে স্থায়ী বা অস্থায়ী বন্দোবস্ত বা লীজ প্রদান করেননি। তবে একাধিকবার উনাকে ডাকার পরও তিনি বৈধ কোন কাগজপত্র নিয়ে হাজির হননি। বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে জবাব প্রদান করা হয়েছে। আদালতের পরবর্তী আদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।