বৃহস্পতিবার ● ৩ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » নোয়াগাঁও গ্রামে থামছেনা কান্না : ১৫টি পরিবার খোলা আকাশের নীচে
নোয়াগাঁও গ্রামে থামছেনা কান্না : ১৫টি পরিবার খোলা আকাশের নীচে
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: গত ৩০ মে সকালে নিজেদের চোখের সামনেই নবীগঞ্জের নোয়াগাঁও গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাতাইহাল গ্রামের দলবদ্ধ লাটিয়াল বাহিনীর দেয়া আগুনের লেলিহান শিখায় ও সন্ত্রাসী তান্ডবলীলায় নীরিহ পরিবার গুলোর ঘরবাড়ি এখন ধ্বংস স্তুপে পরিনত হলো, নিজেদের ঘর-বাড়ী সাড়া জীবনের কামাই রোজগার সবকিছু হারিয়ে ১৫টি পরিবার এখন পাগল প্রায়, কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি।
হামলাকারীদের কবল থেকে বাদ পড়েনি গাছ পালা,গবাদিপশু সহ আসবাব পত্র স্বর্ণালংকার । লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলে অভিযোগ নির্যাতনের শিকার পরিবার গুলোর।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে যাওয়া মাত্রই পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসবাসকারী মানুষদের আহাজারিতে যেন আশপাশের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল ! কে দেবে শান্তনা ? এই প্রশ্ন এখন জনমুখে ।
নির্যাতিত পরিবারের লোকজন জানান ,নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চলের গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রাম সহ ৬ মৌজার লোকজন কর্তৃক পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগসহ তান্ডবের ঘটনা ঘটে গত রবিবার সকালে।
এঘটনায় রবিবার রাতেই মৃত আব্দুস শহীদের পুত্র জামাল হোসেন বাদি হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরপরই সোমবার ভোর রাতে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ সাতাইহাল গ্রাম সহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করেছে। আটককৃতদের সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ দিকে মাথা গুজার টাই বাড়ি-ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবযাপন করছেন নারকীয় তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। ঘটনাটি নিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলাকারীরা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, প্রায় ২ হাজার মন ধান, ৮টি টিউবওয়েল ১০/১৫ টি গরু, ১৫/২০ টি ছাগল, অসংখ্য হাঁস-মোরগ, লুটপাট করে নিয়ে যায়। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। তান্ডবের ঘটনায় রবিবার রাতে পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুশ শহীদের পুত্র জামাল হোসেন বাদি হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো আড়াই শতাধিক দাঙ্গাবাজকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর পরই নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ডালিম আহমেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে লেবু মিয়া (৩০), লেদু মিয়া (৩৫), নাঈম (১৭), মহিবুর রহমান মানিক (৪৩), জুলফু মিয়া (২৬), রকিব উল¬াহ (৬০) ও মামুন (২০) নামে ৭ জনকে আটক করে। আটককৃতদের সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। উলে¬খ্য, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক)-এর মালিকানাধীন ফিশারিতে অবস্থানরত পাহারাদার ও তার স্ত্রীকে মারধর করে নোয়াগাঁও গ্রামের কতিপয় লোকজন অভিযোগ উঠে। আহত দম্পতি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার লোকজন মিটিং করে মাইকিং করে বহিস্কৃত চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের নির্দেশে প্রায় ৪ কিঃ মিঃ দুরত্বে আরেকটি ইউনিয়নে অবস্থিত নোয়াগাঁও গ্রামে দেশীয় অস্ত্র সহকারে হামলা করার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন ও নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ডালিম আহমদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষের লোকজনদের নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রাম থেকে একটু দুরবর্তী স্থানে মিটিং করেন। মিটিং চলাকালে সাতাইহাল ৬ মৌজার প্রায় ২ সহস্রাধীক লোক বিকল্প রাস্তায় নোয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে হামলা চালায়,এতে পাক হানাদার বাহিনীর ন্যায় ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুরসহ তান্ডবলীলা চালায় হামলাকারীরা। এক পর্যায়ে তারা বাড়ি ঘরে অগ্নি সংযোগ করে প্রায় ২ হাজার মন ধান, ১০/১৫টি গরু, ১৫/২০টি ছাগল, অসংখ্য হাঁস মোরগ বাড়ি থেকে লুট করে নিয়ে যায়। লুটপাট কারীররা উলে¬খিত বাড়িগুলি থেকে ৮টি টিউবওয়লের পাম্প খুলে নিয়ে যায়। এছাড়া অগ্নি সংযোগের ফলে নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত সফর উল¬ার পুত্র রমজান মিয়া, হেলাল মিয়া, লুৎফুর মিয়া, সাদ্দক মিয়া, কামাল মিয়া, মাদ্দক মিয়া, হিরন মিয়া, মৃত আরজু মিয়ার পুত্র আব্দাল মিয়া, মৃত আবরু মিয়ার পুত্র আফজল মিয়া, আওলাদ মিয়া, তাজুদ মিয়া, আজাদ মিয়া ও সফর উল¬ার পুত্র মুহিবুর রহমানের ১৩টি পাকা-আধা পাকা, টিনসেটের বাড়িঘর পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। এ সময় হামলার শিকার হয়ে বাড়ি-ঘরে থাকা লোকজন পালিয়ে গিয়ে প্রাণ রক্ষা পান৷ এনিয়ে এ প্রতিবেদককে গৃহবধূ লুৎফা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, হামলাকারীরা আমাদের সর্বস্ব লুটপাট করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুঁড়িযে আমাদের ১৩ টি পরিবারকে নিঃস্ব করে দিলো আমরা এখন ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবো? কি খাবো? স্থানীয় সচেতন নাগরিক রাজু আহমেদ বলেন আমরা এলাকাবাসী এই বর্বরোচিত হামলা,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি পাশাপাশি দোষীদের অনতি বিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক কঠোর শাস্তির দাবী জানাচ্ছি । এনিয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ডালিম আহমেদ বলেন, এঘটনায মামলা দায়ের করা হযেছে,৭জন গ্রেফতার হয়েছেন, অপর আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে৷
ইউএনও শেখ মহি উদ্দীন বলেন ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক তবে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে সরকারীভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।