সোমবার ● ৭ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » এনআইডি নিবন্ধন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত ২০২৩ সালের নির্বাচনে কারচুপি করার নীল নক্শা
এনআইডি নিবন্ধন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত ২০২৩ সালের নির্বাচনে কারচুপি করার নীল নক্শা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভা গতকাল ৬ জুন ২০২১ সকাল ১১টা থেকে দিনব্যাপী বাসদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী কমরেড জোনোয়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবীর জাহিদ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি কমরেড হামিদুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, গণসংহতি আন্দোলনে সম্পাদক বাচ্চু ভুইয়া, মনিরুদ্দিন পাপ্পু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, করোনা সংকট, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা করে জোটের করণীয় ও আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
সভার এক প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান ভোট ডাকাতির সরকার দেশে চরম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। করোনা সংকট মোকাবেলায় একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে দেশ ও জনগণকে গভীর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। দুর্নীতি-লুটপাট-দুঃশাসন করোনা থেকেও ভয়াবহ মহামারী রূপে দেখা দিয়েছে। করোনা টেস্ট স্বল্পতা, মাস্ক, পিপিই, যন্ত্রপাতি কেনাকাটা, নিয়োগ বাণিজ্যসহ স্বাস্থ্য খাত দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র ভোটাধিকারকে নির্বাসনে পাঠিয়ে বিরোধী মত দমনে কালো আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ, বাক-ব্যক্তি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষকসহ নাগরিকের নামে হয়রানীমূলক মামলা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
২০১৪ সালে সকল দল নির্বাচন বর্জন করার পরও একদলীয় একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর আমলা-পুলিশ দিয়ে দিনের ভোট রাতে করিয়ে ক্ষমতাসীন হয়ে দেশকে একটি আমলাতন্ত্র ও পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
সভার প্রস্তাবে বলা হয়, দুর্নীতি-দুঃশাসনে সরকারের প্রতি জনসমর্থন শুন্যের কোটায় চলে গেছে, তাই অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার সাহস পায়না। ফলে একবার একদলীয় নির্বাচন, আরেকবার দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। একই পন্থা বারে বারে কার্যকর হয়না এ চিন্তা থেকেই নতুন ষড়যন্ত্রের নীল নক্শা প্রণয়ন করছে সরকার, তারই অংশ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে চাইছে। এনআইডি যেহেতু নির্বাচনে ভোটার তালিকা প্রণয়নের, সংশোধনের সাথে যুক্ত ফলে এনআইডি নিবন্ধনের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিলে ভোটার তালিকায় নাম যুক্ত করা বা বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা প্রাধান্য পাবে। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনে জনগণ যেমন হয়রানীর শিকার হয় তেমনি ভোটার তালিকায় নাম যুক্ত করতেও একটি পুলিশী বাণিজ্যের ক্ষেত্র তৈরি হবে। আর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ ও পুলিশ সম্পর্কেও জনগণের আস্থা নেই।
প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনও জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় যে মেরুদন্ডহীনতার ও সরকারের তোষামোদকারী চাটুকার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তা নিয়ে জনগণের ও আমাদের সমালোচনা ও অনাস্থা রয়েছে। তা সত্ত্বেও একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা কাটিয়ে তাকে সক্ষম করে না তোলে এনআইডি নিবন্ধন সরকারের নির্বাহী কর্তৃত্বে নেয়া দেশবাসী কোন মতেই মেনে নেবেনা। কারণ এটা আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচনে কারচুপির নতুন ষড়যন্ত্রের নীল নক্শা বলেই দেশবাসী মনে করে।
প্রস্তাবে এনআইডি নিবন্ধনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে না সরানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয় এবং সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকল গণতন্ত্রমনা দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
সভার অপর এক প্রস্তাবে বলেন, ২০২১-২২ সালের বাজেট প্রস্তাবে স্বাস্থ্য-শিক্ষা, কৃষি, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং খাতওয়ারী বরাদ্দ ও বাস্তবায়নের কোন দিক নির্দেশনা নাই। বাজেটে ধনিদের কর্পোরেট কর হ্রাস, কালো টাকা সাদা করা ও সাধারণ মানুষের উপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব প্রমাণ করেছে বাজেট ধনি তোষণ ও গরীব মারার লক্ষ্যেই সরকার বাজেটে প্রস্তাবনা দিয়েছে। তাছাড়া অর্থমন্ত্রী নিজেই বাজেটকে ব্যবসায়ী বান্ধব বলে ঘোষণা করেছেন। তাই এই গণবিরোধী বাজেট প্রত্যাখ্যান করে উৎপানদশীল ও গণমুখী খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ দ্রুত সকল জনগণকে করোনার টিকার নিশ্চয়তা প্রদানের দিক নির্দেশনাসহ বাজেট সংশোধনের দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচি
ধনিক তোষণের বাজেট প্রত্যাখ্যান করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষায় বাজেট বরাদ্দের দাবিতে আগামী ১০ জুন ২০২১ সারা দেশে বাম জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। ঐদিন ঢাকায় সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে।