বৃহস্পতিবার ● ১০ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে বাম জোট
বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে বাম জোট
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: সামরিক-বেসামরিক আমলা ও ধনিক গোষ্ঠীর স্বার্থে প্রণীত প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ উৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আজ ১০ জুন ২০২১ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে এগারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশারফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক কমরেড বাচ্চু ভুইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি কমরেড হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কমরেড শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, ধনিক শ্রেণি ও আমলা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে প্রণীত এই বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াই ত্রুটিপূর্ণ। আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রণীত এই বাজেট পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক। এর সাথে দেশের শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষের দুরতম কোন সম্পর্ক নেই। গ্রাম-ইউনিয়ন-উপজেলা-জেলা-বিভাগ পর্যায় থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনগণের চাহিদা নিরূপন করে মন্ত্রণালয় থেকে একটা সমন্বিত প্রস্তাব সংসদে পাঠালে তা আলোচনা-পর্যালোচনা করে বাজেট পাশ করলেই কেবল গণআকাঙ্খার পরিপূরক বাজেট হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে ৫০ বছর ধরে তা না করে উপর থেকে আমলারা বসে বাজেট প্রণয়ন করে, ফলে বাজেট জনবান্ধব না হয়ে আমলা-ধনিকশ্রেণির স্বার্থেই হয়ে আসছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তা আবারও প্রমাণিত হল।
বক্তাগণ বলেন, বাজেট ঘোষণার আগে সরকার বলেছিল এবারের বাজেট হবে করোনা মোকাবেলার অর্থাৎ জীবন ও জীবিকা রক্ষার বাজেট। কিন্তু ঘোষণার পর দেখা গেল ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেটের বেশিরভাগ টাকাই পূর্বের ধারাবাহিকতায় আমলা, ব্যবসায়ী, সামরিক ও পুলিশ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে। ১০০ টাকার মধ্যে ৬২ টাকা চলে যাবে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয়ে অর্থাৎ বেতন-ভাতা ও আমলা-ব্যবসায়ীদের পিছনে। আর উন্নয়ন বাজেটের বেশিরভাগ টাকা যাবে সরকারের ১১টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে। ফলে জনগণের স্বার্থে বা কল্যানের জন্য তো আর কোন টাকা থাকছে না। স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত শুধু উপেক্ষিতই থাকেনি, কোন কোন খাতে বরাদ্দ গতবারের তুলনায় কমে গেছে। করোনায় কর্মহীন, আয় কমে যাওয়া নতুন আড়াই কোটি দরিদ্র মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষায় বাজেটে কোন বরাদ্দ করা হয়নি। সরাকরি সংস্থা বিআইডিএস-এর গবেষণা রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী বলছেন তাদের কাছে কোন নতুন দরিদ্র মানুষের তথ্য নেই। বক্তাগণ করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের অসহায় অবস্থা অস্বীকার করার অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা বলেন, কিন্তু মাথাপিছু ঋণ বৃদ্ধির কথা বলেন না কেন? সরকার ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার করেন আমাদের জিডিপি ভারতের চেয়ে বেশি। কিন্তু বলেন না ভারতের চেয়ে ভাতা কম। এরা সবসময় মিথ্যা ফানুস দেখিয়ে জনগণকে বোকা বানাতে চায়। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে মানুষ করোনায় চিকিৎসা পাচ্ছে না, প্রধানমন্ত্রী ৫৬০ মডেল মসজিদ এর ৫০টি উদ্বোধন করছে। জনগণের প্রশ্ন এখন মসজিদ দরকার না হাসপাতাল দরকার?
বক্তাগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা মোকাবেলায় বাজেট বললেও তা মোকাবেলায় ১৭ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও টিকা কার্যক্রমের কোন রোড ম্যাপ বাজেটে নেই। ১৭ মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা, শিক্ষা পুনরুদ্ধারে বাজেটে কোন দিক নির্দেশনা নাই। প্রতি বছর ২২ লক্ষ যুবক কাজের বাজারে আসে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে বাজেটে কোন বক্তব্য নাই। ৬ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে। সরকার রেমিটেন্সের বড়াই করলেও ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকের ব্যাপারে বাজেটে কোন পদক্ষেপ নাই। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন এবারের বাজেট পুরোপুরিই ব্যবসাবান্ধব। যা বাস্তবে ব্যবসা বান্ধব শুধু না পুরোপুরি ব্যবসায়ী ধনিকশ্রেণির বাজেট। বক্তাগণ অবিলম্বে সামরিক-বেসামরিক আমলা ও ধনিক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষাকারী বাজেট সংশোধন করে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত জনগণের স্বার্থে বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ সরকারের স্বৈরাচারি কর্তৃত্ববাদি ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে জন্য দেশবাসীর প্রতি তোলার আহ্বান জানান।