শুক্রবার ● ১১ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » কল্পনা অপহরণের ২৫ বছর : খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের আলোচনা সভা
কল্পনা অপহরণের ২৫ বছর : খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের আলোচনা সভা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সস্পাদক কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৫ বছর উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
আজ শুক্রবার ১১ জুন খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি চাকমার সভাপতিত্বে ও খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)’র খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সংগঠক প্রকাশ চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক লিটন চাকমা প্রমুখ।
আলোচনা সভা শুরুতে কল্পনা অপহরণের বিচার দাবিতে শহীদ রূপন, সমর, সুকেশ, মনতোষসহ অধিকার আদায় লড়াইয়ে আত্মবলিদানকারী সকল বীর যোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় ইউপিডিএফর সংগঠক প্রকাশ চাকমা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে লে. ফেরদৌস গংরা অপহরণ করে। দীর্ঘ ২৫ বছরে আমরা তার হদিস পাইনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়নের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কখনো ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা-হুলিয়া দিয়ে নিপীড়ন জারি রেখেছে শাসকগোষ্ঠী।
তিনি আরো বলেন, যতদিন পর্যন্ত পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েম হবে না ততদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত রাজনৈতিক সমাধান হবে না।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নের অংশ হিসেবে এযাবতকালে নারীদেরকে বেশি নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা দেখেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনাগুলোর একটারও বিচার না হওয়াতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যার পরবর্তীতে আমরা দেখি সেই রাষ্ট্রীয় বাহিনীই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। যার বিচারও এখন পর্যন্ত হয়নি। রাষ্ট্র এসব ঘটনার বিচারকার্যে ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে। যারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার কথা তারাই আবার রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। ফলে দেশের ধর্ষণের মতো ঘটনাও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার চেয়ে নীতি চাকমা আরো বলেন, আজ কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সরকার এখনো তার হদিস দিতে পারেনি। তিনি অবিলম্বে চিহ্নিত অপহরণকারী লে.ফেরদৌস ও তার গংদের বিচারের আওতায় এনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনা করার আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, কল্পনা চাকমা এক প্রতিবাদী ও চেতনার নাম। তিনি ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থা ডিঙিয়ে রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।
তিনি বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, কল্পনা অপহরণের বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের গাফিলতি রয়েছে। এযাবত ৩৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাটি তদন্ত করলেও তারা কেউই নিরপেক্ষভাবে তদন্তকার্য পরিচালনা করেনি। বরাবরই অপরাধীদের রক্ষায় তারা চেষ্টা চালিয়েছে। ফলে ২৫ বছরেও কল্পনা চাকমা আহরণের বিচার হয়নি।
তিনি বলেন, নারীরা যুগে যুগে সমাজ ও জাতীয় মুক্তির ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল। কৃষি বিপ্লব শুরু হয়েছিল নারীদের হাত ধরে। এজন্য কল্পনা চাকমার মতো প্রত্যেক নারীকে তার উত্তরসূরী হওয়ার আহ্বান জানান।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নেতা লিটন চাকমা বলেন, শুধু কল্পনা চাকমা রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক নিপীড়নের শিকার হননি, আমরা দেখেছি রাঙামাটির বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কতিপয় সদস্য দ্বারা ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ আরো বহু নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে নারীর ওপর চলে আসা নিপীড়ন বন্ধের জন্যে নারীদের রাজপথে নামার বিকল্প নেই। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নারীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি তদন্তের নামে কালক্ষেপণ না করে চিহ্নিত অপহরণকারাী লে.ফেরদৌস ও তার গংদের বিচারের আওতায় এনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
লক্ষ্মীছড়ি : কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষ খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১১ জুন ২০২১) হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ-এর লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশ থেকে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
”পাহাড়ে নারী নিরাপত্তা রক্ষার্থে ও ভূমি বেদখল প্রতিরোধ লড়াইয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাথে যুক্ত হোন” এই শ্লোগানে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের লক্ষ্মীছড়ি থানা শাখার দপ্তর সম্পাদক জেকি চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র লক্ষ্মীছড়ি ইউনিটের সংগঠক আপ্রুসি মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি রেশমি মারমা, লক্ষ্মীছড়ি থানা শাখার আহ্বায়ক মেরিনা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি থানা শাখার সভাপতি রুপান্ত চাকমা
বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সরকার কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার তদন্ত ও মামলার শুনানীর নামে কালক্ষেপন করে দোষীদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, এই অপহরণ ঘটনার সাথে সরকার তথা রাষ্ট্রই জড়িত রয়েছে।
একইভাবে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
বক্তারা আরো বলেন কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সমর, সুকেশ, মনোতোষ, রূপন নিজেদের আত্মবলিদান দিয়েছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।
সমাবেশ থেকে বক্তারা তদন্ত ও শুনানীর নামে কালক্ষেপন না করে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও সালেহ্ আহম্মেদ গংদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানান।
একই সাথে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে খুন, গুম, অপহরণ, নারী নির্যাতন, বিনা বিচারে হত্যাসহ সকল অন্যায়-অবিচার বন্ধ করে জনগণের প্রকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে সেনা কর্মকর্তা লে. ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের দ্বারা অপহরণের শিকার হন কল্পনা চাকমা। দীর্ঘ ২৫ বছরে তার কোন হদিস মিলেনি।