মঙ্গলবার ● ৬ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মোরেলগঞ্জে জ্বর-সর্দির ওষুধ ‘নাপা’ ট্যাবলেট উধাও
মোরেলগঞ্জে জ্বর-সর্দির ওষুধ ‘নাপা’ ট্যাবলেট উধাও
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দিনে দিনে বিস্তৃত হতে থাকায় বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে জ্বরসহ সর্দি-কাশির ওষুধ‘নাপা’ ট্যাবলেট। সাধারণ জ্বর নিরাময়কারী ওষুধ নাপা। বেক্সিমকো কোম্পানির নাপা, নাপা এক্সট্রা, এক্সটেন্ড ও সিরাপ গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন ওষুধের দোকানদার ও গ্রাহকরা।
চাহিদা অনুযায়ী ঠাণ্ডা, জ্বরের ওষুধ নাপা গ্রুপের কোন ওষুধ চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকটি ওষুধের দোকানদার এমন তথ্য জানিয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে। এছাড়া বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে করোনার অত্যধিক প্রকোপে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশির ওষুধের চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক হারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদর ও গ্রামের মানুষ ঠাণ্ডা গরম লাগার কারণে ঘরে ঘরে জ্বর, খুসখুসে কাঁশি ও ঠাণ্ডা গরমে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে গেলে জ্বরের জন্য নাপা, ঠাণ্ডা-গরম লাগলে ফেকসো খেতে বলছেন। অথচ বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ফেকসো ওষুধ পাওয়া গেলেও বেক্সিমকো কোম্পানির নাপা গ্রুপের কোন ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। দূরদুরান্ত মানুষ ওষুধ কিনতে এসে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। ওষুধ না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
জাহানারা ফার্মেসিতে আসা মোরেলগঞ্জ পৌরসদরের ভাইজোড়া গ্রামের সাথী ইসলাম জানান, বাড়ির সবার ঠাণ্ডা লেগেছে সাথে জ্বরও আছে। তাই নাপা কিনতে এসেছিলাম। কোন ফার্মেসিতে পাইনি। তবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ নাপার প্রতি এতো চাহিদা কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইনে করোনার জরুরি ওষুধের মধ্যে নাপার নাম দেখেছেন। একারণে নাপা কিনতে এসেছেন তিনি।
নুরুজ্জামান ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা আলাউদ্দিন নামে একজন জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নাপা ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্যোগময় সময়ে যদি ওষুধ পাওয়া না যায় তাহলে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই না।
জাহানারা মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক মোস্তাক বিল্লাহ রুপম জানান, নাপা বিভিন্ন কোম্পানির আছে সেগুলো মানুষ খাচ্ছে না। নাপা ওষুধ মানুষ বেশি খাচ্ছে। এ কারণে এই কোম্পানির নাপা ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নাপা নেই। কোম্পানি সাপ্লাই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। অন্যান্য কোম্পানির প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দোকানে রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে প্যারাসিটামল জাতীয় অন্যান্য ওষুধ বাজারে থাকলেও শুধু নাপা কিনতে ক্রেতারা এতো ভিড় করছেন কোনো তার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ফার্মেসি মালিকরা।
এ বিষয়ে বেক্সিমকো কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, শুধু বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে নয়, গত ১০ দিন ধরে দেশের সব জেলায় নাপার সরবরাহ কম রয়েছে। কোম্পানির কাছে নাপার কাঁচামালের সরবরাহ কম থাকার কারণে ও ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এমন সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামাল হোসেন মুফতি জানান জানান,সরকারি প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সরবরাহ রয়েছে, কোনো সঙ্কট নেই। বাজারে যদি নাপা ওষুধের সংকট দেখা দেয় তাহলে প্যারাসিটামল বা অন্য কোম্পানির ওষুধ খেতে পারবে। তাতে জ্বর বা ঠাণ্ডা-গরম লাগলে ভালো হয়ে যাবে।
বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা: কে, এম, হুমায়ুন কবির জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোয় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সরবরাহ রয়েছে, কোনো সঙ্কট নেই। মানুষের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা জ্বর হলে শুধু নাপাই খেতে হবে। কিন্তু অন্য কোম্পানিগুলোরও যে বিভিন্ন নামে প্যারাসিটামল ওষুধ আছে, সে সম্পর্কে তাদের ধারণা কম। জ্বর হলে চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে তার মানে শুধু নাপা খেতে হবে তা নয়, ভালো মানের অন্য কোম্পানির প্যারাসিটামল খেলেই হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।