বৃহস্পতিবার ● ৮ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে অক্সিজেনের অভাবে বেশির ভাগ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে
ঝিনাইদহে অক্সিজেনের অভাবে বেশির ভাগ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে সংক্রমনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। পঞ্চাশ থেকে ষাটোর্ধ মানুষ আক্রান্ত হলেই ঝুকির মধ্যে চলে যাচ্ছে জীবন। তবে কম বয়সীরাও মৃত্যুবরণ করছে ঝিনাইদহে। হাই ফ্লো অক্সিজেনের অভাবে বেশির ভাগ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধায় রাবেয়া বেগম নামে এক নারীর হাই ফ্লো অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। কারণ সবগুলো করোনা রোগীর কাছে ছিল। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহের করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ঝিনাইদহে একজন আইনজীবীসহ ১১ জন করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৫৬ জন। সিভিল সার্জন ডা: সেলিনা বেগম এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা পজেটিভ নিয়ে ৫ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শৈলকুপা ১ জন ও হরিণাকুন্ডুতে ১ জন মারা গেছে। এদিকে সকালে ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ৪৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসেছে। এদের মধ্যে পজেটিভ এসেছে ১৫৬ জনের। আক্রান্তের হার ৩৪ দশমিক ১৩ ভাগ। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ৫ হাজার ১’শ ৭৬ জন। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: হারুন অর রশিদ জানান, সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বর্তমানে ১১৫ জন রোগি চিকিৎসাধীন রয়েছে। শয্যা সংখ্যার তুলনায় বেশি রোগীর কারণে চিকিৎসা দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।
১০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার দিলেন মেয়র মিন্টু
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায় ১০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার উপহার দিলেন। বুধবার ২৫টি সিলিন্ডার হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও ৭৫টি সিলিন্ডার হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট এখন প্রধান সমস্যা। যারাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের সিংহভাগই শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন। শ্বাসকষ্টা ও অন্য জটিল শারীরিক সমস্যা না থাকলে সেই রোগীদের বাড়িতে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার খুব বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে ১১৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। কোন মানুষ যাতে অক্সিজেনের অভাবে মারা না যায় সেই কারণে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এর আগে অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে। সাইদুল করিম মিন্টু জানান, খাদ্যের ঘাটতি নেই বর্তমানে দেশে। আমরা পৌরসভার মধ্যে মধ্যে ক্ষুদ্র দোকানদার, রিকশা চালক, ইজিবাইক চালক, বাস শ্রমিকসহ সকল শ্রেণির নিন্মবিত্তদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পৌছে দেওয়া হচ্ছে। কেউ খাদ্য সংকটের কথা জানালে আমরা তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা করছি। আমরা যেকোন সময়, যেকোন প্রয়োজনে পৌরসভার মানুষের পাশে আছি। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৬টি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এই সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মিথিলা ইসলাম ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা: জাকিরসহ সদর হাসাপাতালের কর্মকর্তাবৃন্দ এই সিলিন্ডার গ্রহণ করেন।
উদ্বোধনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধ্বসে পড়ছে কোটি টাকার পানির পাম্প ভবন
ঝিনাইদহ :: প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানির পাম্পটি উদ্বোধনের মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পাম্প হাউজ ঘরের মেঝের অনেকটা অংশ ধসে পড়েছে। দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানির লাইন স্বাভাবিক থাকলেও ভবনের নিচে সুড়ঙ্গ তৈরী হওয়ায় লাইনটিও ঝুকির মধ্যে রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভা এলাকার নওদাগা পাড়ায়। এখানে সদ্য স্থাপিত পানির পাম্প ভবন ধ্বসে পড়ায় নির্মান কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। স্থানীয়রা বলছেন, গত রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে পৌরসভার মেয়র মোঃ সহিদুজ্জামান সেলিম এই পাম্পের পানি সরবরাহ কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় পৌর মেয়রের সঙ্গে স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ রকিব উদ্দিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু উদ্বোধনের পর দেখা গেলো পাম্প ভবনটি ধ্বসে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোজ নিয়ে জানা গেছে, কোটচাঁদপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড নওদাগা ও কাশিপুর এলাকার নাগরিকদের জন্য গভির নলকুপটি স্থাপন করা হয়। কোটচাঁদপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জিল্লুর রহমান জানান, পাম্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের শেষ দিকে। পানির লাইনের কাজ এর জন্য প্রায় ৬০ লাখ আর ভবনের জন্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ করা হয়। কিন্তু কাজটি ত্রুটিপুর্ন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ রকিব উদ্দিন জানান, পাম্পটি তার নির্বাচনী এলাকায় বসানো হয়েছে। এই পাম্পের মাধ্যমে নওদাগা, কাশিপুর ও শহরের কিছু অংশের গ্রাহকরা পানি পাবেন। তিনি জানান, পাম্পটি এলাকার মানুষের কল্যানে নির্মিত হলেও উদ্বোধনের পরই ধসে পড়ে। এতে পাম্পটি মানুষের উপকারে আসবে কিনা তা নিয়ে শংসয় দেখা দিয়েছে। নওদাগা গ্রামের মাহাতাব আলী জানান, দুই বছরের অধিক সময় ধরে এই পাম্পটি তৈরী করা হয়েছে। এরপর গত রোববার দুুপরে চালু করার পরদিনই দেখা যায় পাম্প ভবনের নিচের অংশ থেকে মাটি ধ্বসে পড়েছে। সেখানে সুড়ঙ্গ তৈরী হয়েছে। পাম্পের চালক কোটচাঁদপুর পৌরসভার কর্মচারি সাইদুল রহমান জানান, রোববার মেয়র সহ অন্যরা এসে এটি আনুষ্ঠানিক চালু করে যান। পরদিন সকালে এসে দেখেন মাটি ধসে যেতে শুরু করেছে। কোটচাঁদপুর পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা জানান, কাজটি দেখভাল করেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। তারা মাঝে মধ্যে খোজখবর নিয়েছেন। এখন এই পরিস্তিতিতে তারা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বিভাগকে দ্রুত দেখার জন্য জানিয়েছেন। পৌরসভার মেয়র মোঃ সহিদুজ্জামান সেলিম জানিয়েছেন, ঠিকাদাররা এই কাজের বিল নিয়ে গেছেন। তারপরও তারা কাজটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলেছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের স্থানীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জিল্লুর রহমান জানান, তারা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা মেরামত করে দিতে সম্মত হয়েছেন।
রাতের আঁধারে জমিতে ৬ ফুটের গর্ত
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের জহুরুল ইসলাম নামে এক কৃষকের জমিতে হঠাৎ ৬ ফুটের গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার রাতে পাতিবিলা দাখিল মাদ্রাসার পাশের একটি জমিতে ৬ ফুটের গর্তটি খোঁড়া হয়েছে। তবে কি কারণে এই গর্ত খুঁড়েছে সেটি কেউ জানাতে পারেননি। রাতের আঁধারে খোঁড়া গর্তটি দেখতে আশেপাশের মানুষ ভিড় করছেন। জমির মালিক জহুরুল ইসলাম জানান, সোমবার রাত ৯ টার দিকে তিনি বাসায় গেছেন জমিটির পাশের দোকান থেকে। তখন তেমন কিছু দেখতে পারেননি। মঙ্গলবার সকালে পাতিবিলা দাখিল মাদ্রাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জমিতে টাঙানো কাটা দেখতে পায়। এ সময় তিনি জমিতে গেলে ৬ ফুটের বিশাল গর্ত দেখতে পান। কি জন্য এ গর্ত করা হয়েছে তিনি জানেন না। পাতিবিলা গ্রামের শওকত আলী জানান, জমিটির পাশেই তার দোকান রয়েছে। সোমবার রাত ১১ টার দিকে তিনি দোকান থেকে বাড়ি যান। গভীর রাতে কেউ এই গর্ত খুঁড়েছে। কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহা: মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, এমন কোন তথ্য এখনো তিনি পাননি। তবে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন তিনি।
মহেশপুর সিমান্তে ৬ মাসে ৫০৮ জন নারী পুরুষ বিজিবির হাতে আটক
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ মহেশপুর সীমান্তে গত ৬ মাসে দালালসহ ৫০৮ জন নারী পুরুষ বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে মহেশপুর সীমান্তে অবৈধ পারাপার বেড়ে যায়। পার্শ্ববর্তী যশোর, সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তে প্রশাসনের অভিযান জোরালো হলে দালাল চক্র নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এ সময় মহেশপুর দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় অবস্থানে থাকলে উভয় দেশ থেকে অবৈধ পারাপার বৃদ্ধি পায়। এ পারাপারই করোনা বিস্তারের কারণ বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র। বিজিবি ও অন্যান্য সূত্র জানিয়েছে, গত ৬ মাসে ভারত থেকে ১৬০ জন নারী পুুরুষ আসার পথে এবং ৩৪৪ জন যাওয়ার পথে বিজিবির হাতে আটক হয়েছে। এ সময় ৪ জন দালালও আটক হয়। আটকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মহেশপুর থানায় মামলা হয়। ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় ঝিনাইদহ পিটিআই স্কুলে ও মহেশপুর মহিলা কলেজে। এ সকল ব্যক্তির করেনা পরীক্ষা করে একাধিক ব্যক্তির শরীরে পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর থেকে মহেশপুর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেতে থাকে। একপর্যায়ে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অনেকেই আক্রান্ত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসিবুস সাত্তার জানান, সীমান্তের অবৈধ পারাপারই এ অঞ্চলে করোনা বিস্তারের মূল কারণ। মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল কামরুল আহসান বলেন, এ সীমান্ত দিয়ে যারা পার হয় তার সীমিত সংখ্যক মানুষকে আমরা আটক করতে সক্ষম হই। দালালদের মাধ্যমে অনেকেই পার হয়ে যায়। সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে থাকলেও অনেক সময় নারীরা দালালের হাতে নির্যাতনসহ লুটপাটের কার হয়। এ বিষয়ে মহেশপুর থানায় মানবপাচার ও ধর্ষণ চেষ্টা অভিযোগে মামলাও হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র ও ভিকটিমদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দালালরা নারীদেরকে রাতের আঁধারে ছত্রভঙ্গ করে তাদের উপর পাশাবিক নির্যাতন চালায়। কিন্তু মুখ খুলে আইনের মুখোমুখি হতে চায় না। যার কারণে দালালরা পার পেয়ে যায়। মহেশপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, এ সীমান্তে আটককৃতদের মধ্যে ১৮ জন এখনও মহেশপুর মহিলা কলেজে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে এবং পাসপোর্ট আইনে মামলা হয়েছে দু’শতাধিক। একটি বেসরকারি মানবপাচার প্রতিরোধ সংস্থার প্রতিনিধি রোমানা আফরোজ জানান, সীমান্তে আটককৃত নারীরা দালালদের দ্বারা নির্যাতিত হয় এবং এর মধ্যে অনেক পাচারের ভিকটিম রয়েছে যা নির্ণয় করা হয়নি। সকলকেই আসামি হিসেবে কোর্টে চালান দেওয়া হয়।