রবিবার ● ১১ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » ছয় বছর ধরে ঘরবন্দি বস্ত্রহীন যুবক
ছয় বছর ধরে ঘরবন্দি বস্ত্রহীন যুবক
ষ্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের বিশ্বনাথে দীর্ঘ ছয়টি বছর ধরে, ঘরের বাহিরে পা পড়েনি তার। চার দেয়ালের ভেতরেই থমকে আছে বস্ত্রহীন জীবন। বাহিরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সে। বন্ধ ঘরের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে দেয়া হয় খাবার।
মাঝে মধ্যে স্নানের জল। শৌচকর্মও করতে হয় ঘরেই। এ অবস্থায় বন্দীজীবনের দুর্বিষহ দিন কাটছে মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক অর্জুন দাস বেনু’র (৩২)। সে উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের স্বর্গীয় রানু দাস’র ছেলে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাহির থেকে বন্ধ ঘরের একটি খালি কাঠের চৌকিতে বিবস্ত্র শুয়ে আছে বেনু। জানালা দিয়ে ডাকলে উঠে বসে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতোই কথা বলে সে। এসময় উপস্থিত ভিন্ন গায়ের জনৈক আগন্তুকে উদ্দেশ্য করে বলছিল নানা কথা। তিনি জানালেন বেনু’র স্কুল জীবনের সহপাঠী তিনি।
দীর্ঘদিন পর তাকে দেখতে এসেছেন। বেনু তখন, নাম ধরে ধরে একে একে তার সকল সহপাঠীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছিল। তোমার এ অবস্থা কেন? জানতে চাইলে নির্বাক চেয়ে রয় সে।
বেনু’র বড়ভাই ঝুনু দাস জানান, সে খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। এসএসসিতে অকৃতকার্য হবার পর অর্থাভাবে পড়া-লেখা বাদ দিয়ে স্থানীয় বাজারে বেশ কিছুদিন টং দোকান দেয়।
পরে ২০০৬ সালে হঠাৎই একটু মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার। তার পরেও ভালোই চলছিল সে। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে পেটের পীড়া দেখা দিলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে তার লিভার অপারেশন করাই আমরা। অবস্থা জটিল হওয়ায় তিন মাস হাসপাতালেই কাটাতে হয়। এক মাস রাখা হয় আইসিউতে। এক পর্যায়ে বাড়িতে নিয়ে আসার তিন মাস পরে ক্ষতস্থান শুকায় তার। এতে ৫-৬ লক্ষ টাকা খরচ হয় আমাদের। অভাবের সংসারে জায়গা বিক্রি ও ধার-দেনা করে এ টাকা ব্যয় করেন বাবা। তিনি গত হবার পর এখনও আমরা সে ঋণের বোঝা টানছি। মূলত ভুল চিকিৎসার কারণে এমনটি হয়েছে তার। নিয়মিত ঔষধ দিতে না পারায় সে আরও অস্বাভাবিক আরচণ, গালমন্দ ও যাকে-তাকে মারতে তেড়ে যাওয়া কারণে আমরা নিরুপায় হয়ে ঘরবন্দী রেখেছি। ভালো চিকিৎসা ও নিয়মিত ঔষধ দিতে পারলে হয়তো আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে সে।
এ বিষয়ে বিশ্বনাথ পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষের প্রয়োজন পরিবারের সমর্থন ও অফুরন্ত ভালোবাসা। বিস্তারিত জেনে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিশ্বনাথে কঠোর লকডাউনে স্বাভাবিক জনজীবন
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে রাস্তা-ঘাটে যানবাহন ও মানুষের চলাচল অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। কার্যকর হচ্ছেনা আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা। উপজেলা সদরের চিত্র দেখে বুঝার উপায় নেই যে, কঠোর লকডাউন
চলছে। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নানা অজুহাতে ঘুরাফেরা করছেন মানুষ। মানা হচ্ছেনা সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি। এখনও মাস্ক পড়ায় অনীহা অনেকের। পড়লেও অধিকাংশ মানুষের মাস্ক নেই যথাস্থানে। আইনশৃংখলা বাহিনী ও ভ্রাম্যামান আদালতের অভিযানেও সড়কে কমছেনা মানুষ ও যানবাহনের চলাচল।
গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রাইভেটকার, সিএনজি ও ব্যটারি চালিত অটোরিকশায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছেন মানুষজন। বড় শপিংমল বন্ধ থাকলেও খোলা হয়েছে অলি-গলির প্রায় দোকানপাট। এতে করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্বনাথ উপজেলার নতুনবাজার ও পুরাতনবাজারে বেড়েছে মানুষের অস্বাভাবিক উপস্থিতি। বেড়েছে রাস্তায় বেড়েছে সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত রিকশার চলাচল। লক্ষ্য করা গেছে অপ্রয়োজনে মানুষের ঘোরাঘুরি। মাস্ক বিহীন একাধিক ব্যক্তিকে ব্রীজের রেলিংয়ে বসে আড্ডা দিতেও দেখা যায়।
লকডাউন বাস্তবায়নে নতুনবাজারে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সময় এদিক-সেদিক ছুটে যান মানুষ। তারা চলে যাবার পর ফের স্বাভাবিক চলাচল বাড়ে মানুষের। সদরের বড় শপিং সেন্টার বন্ধ থাকলেও অলি-গলির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেছেন অনেক ব্যবসায়ী। এতে করোনা সংক্রমণের এই সময়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় আশঙ্কা
করছেন সচেতন মহল।
বিশ্বনাথে আরও ৯ জন করোনা আক্রান্ত
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় এ উপজেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ৯ জনের।
এদিকে, প্রতিদিনই বাড়ছে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর মিছিল। শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দি-কাশির মতো উপর্সগ নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলায় মৃত্যুবরণ করছেন একাধিক ব্যক্তি।
গত ২৪ ঘন্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথে মারা গেছেন ৫ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে নানা বয়সী নারী-পুরুষ রয়েছেন। সিলেটের বিভিন্ন ল্যাবে করোনা শনাক্ত হয় তাদের। নতুন ৯ জনসহ উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮০ জনে।
এ উপজেলায় নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন করোনা আক্রান্ত ৭৯ জন। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৩৮৬ জন।