রবিবার ● ১১ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » মোরেলগঞ্জে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে খামারিরা দুশ্চিন্তায়
মোরেলগঞ্জে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে খামারিরা দুশ্চিন্তায়
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: করোনার সংক্রমণ বাড়ায় কোরবানির আগে লকডাউন শুরু হওয়ায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার খামার মালিকেরা। সারা বছর খামারে পরিশ্রম ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করার পর এখন পশুর বাজার ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষনা করছে। লকডাউনের মেয়াদও বাড়ছে। এদিকে কোরবানির বাকি দুসপ্তাহ। খামারীরা বলছেন, গত বছরের মতোই এখন পর্যন্ত দেখা নেই ব্যাপারীদের। এই উপজেলায় এবার প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা এবং তাদের সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি গরুর খামার। এর মধ্যে উপজেলার বারইখালী, নিশানবাড়িয়া, জিউধারা, দৈবজ্ঞহাটি, খাউলিয়া সহ কয়েকটি ইউনিয়নে রয়েছে সবচেয়ে বেশি গরু মোটাতাজাকরণ খামার।
এছাড়াও বিশেষ করে যারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমিত আকারে গরু পালন করেছেন তারা এ বছর উপযুক্ত দামে গরু বিক্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন ।
এই উপজেলায় কোরবানিযোগ্য পশুপালনকারী খামারিদের প্রত্যাশা ছিল, ঈদের আগে হাটে পশু বিক্রি করে মুনাফা করবেন। কিন্তু তাদের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে মহামারি করোনাভাইরাস। খামারিরা বলছেন, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস খানেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবার গরু কেনায় তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ব্যাপারীদের মধ্যে। তাদের দাবি, করোনার কারণে বিগত বছরের চেয়ে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সে অনুযায়ী, গরু দামও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে জেলার সব পশুহাট বন্ধ রয়েছে। ফলে গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেয়া তথ্যমতে, এবারের কোরবানির জন্য মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৭৬৮ টি গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ২১৮৮ টি, মহিষ ৫০ টি, ছাগল ১,১৬৮ টি, ভেড়া ৫০ টি, বাজা গাভী ১,১৩৩ টি, বলদ ১,১৭৮ টি । এখনো এর ৭০ ভাগ গরু বিক্রয় বাকী রয়ে গেছে।
বারইখালী গ্রামের খামারি আবুল কালাম শেখ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি করে ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ একটি গরুর জন্য দিনে ১৫০ -১৮০ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন গরুগুলোকে খৈল, ভুসি, কুড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এবার গরু বিক্রি করে লাভ করতে পারবো কি-না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। কিন্তু পশু বিক্রি না করতে পারলে সাত-আটমাস ধরে খাটানো টাকার অনেকটাই লোকসানে যাবে। পরের কোরবানি পর্যন্ত এসব পশুপালনে অনেক টাকা খরচ হবে।
একই উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াতলে গ্রামের একজন নারী খামারি মাসুমা বেগম বলেন, ছয়মাস আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০-৩২ টাকা কেজি। করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। শুধু ভুষি ও খৈলই নয়, সব গো-খাদ্যের দাম গড়ে ২০-২৫ ভাগ বাড়ছে।
পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ভাইজোড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত দু’ মাস ধরে নিয়মিত হাট বসছে না। আর কোরবানির আগ মুহূর্তেও হাট বসার সম্ভাবনাও খুবই কম। এমতাবস্থায় কোনোভাবেই ভালো ব্যবসার আশা করা যাচ্ছে না।
উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের পাইকারি গরু ব্যবসায়ী আব্দুল আলিমও প্রায় একই কথা বলেছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি গরু কিনে লালন-পালন করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির আশঙ্কায় আছেন খাউলিয়ার হুমায়ুন কবির।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জি এম কুদ্দুস বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কোরবানি উপলক্ষে গরু পালন করে থাকেন খামারিরা। আমাদের পক্ষ থেকে পশু পালনকারীদের প্রাকৃতিকভাবে পশু মোটাতাজাকরণে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খামারিরা সেভাবে পশুপালন করেছেন। প্রাকৃতিক উপায়ের তুলনায় রাসায়নিকভাবে মোটাতাজা করলে খরচ বেশি হয় এবং ঝুঁকিও কম থাকে। গ্রাম পর্যায়ে পশু পালনকারীরা এসব বুঝতে পেরেছেন। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের কার্যক্রম একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি।
করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির বাজার কিছুটা মন্দা হতে পারে বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থাৎ যেসব জায়গায় বেশি পশু বিক্রি হয়, সেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানোর চিন্তা রয়েছে।
এছাড়া অনলাইনেও পশু বিক্রির জন্য খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা অনলাইনে কোরবানীর গরুর হাট নামে একটি ওয়েবসাইট ওপেন করেছি। কোরবানির আগ মুহূর্তে হাটের জন্য অপেক্ষা না করে খামারিদের অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রির জন্য পরামর্শ দিয়েছি।
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগে আটক এক
বাগেরহাট :: সুন্দরবনের খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগে এক চোরা শিকারীকে আটক করেছে বন বিভাগ। আজ রবিবার (১১ জুলাই) সকালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বরইতলা টহল ফাঁড়ির ভাড়ানির খাল থেকে কিটনাশকসহ তাকে আটক করা হয়।
চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, রবিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে গোপন সংবাদেরভিত্তিতে চোরা মাছ শিকারী সলেমান ব্যাপারি (৪৫) ওই খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে এমন অভিযোগ আসে বনরক্ষীদের কাছে। বনের জিউধারা স্টেশন অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম নির্দেশনায় বনরক্ষীদের একটি চৌকস টিম ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় বন রক্ষীদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও মাছ ধরার বিষসহ হাতেনাতে সলেমানকে আটক করা হয়। আটক সলেমান ব্যাপারী ৫নং সুন্দরবন ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্ধা তাইজ উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে।
বরইতলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আঃ হান্নান বলেন, অভিযান পরিচালনা করে আসামীকে আটক করেছি কিন্ত তার সহযোগী আরও দু’জন ছিলো তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। আটক চোরা শিকারী সলেমান ব্যাপারির স্বীকাউক্তি মতে বৈদ্যমারী এলাকার গোলাম হওলাদারের ছেলে জাকির হাওলাদার (৩৭) ও জজ আলী ব্যাপারীর ছেলে কামাল ব্যাপারী (৪৩)সহ ৩জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের অভিযানের টের পেয়ে গহীন বনে পালিয়ে যায় অন্য আসামীরা, তাদের কাছ থেকে একটি নৌকা, ৪টি বিষের বোতল, বিষ দেয়া পাঁচ কেজি মাছ ও সাদা মাছ ধরার রোটেনন নামের কিটনাশক জব্দ করা হয়। আটক কৃত বিষ দিয়ে মাছ শিকারীকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে নির্দেশে জিউধরা স্টেশনের নিয়ে আসা হয়। আটক সলেমান ব্যাপারি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়েরের শেষে বাগেরহাট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান ও বনরক্ষী মিজানুর রহমান বলেন, সুন্দরবন ও সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষন, মৎস্যসম্পদ রায় তাদের এই সকল অভিযান অব্যাহত আছে ও ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে করোনা : এমপি মিলন
বাগেরহাট :: মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা এবং সঠিক দিক নির্দেশনায় বৈষ্মিক মহামারী করোনা থেকে বাংলাদেশে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বহুগুণ কম। তাই করোনা প্রতিরোধে সকল জনগণকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা চিকিৎসাসামগ্রী প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠান শেষে এমপি মিলন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া ১০সেট পাল্স অক্সিমিটার এবং ৫টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রদান করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির, উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত ও ইউএনও খাতুনে জান্নাত।
অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান, জেলা আওয়ামীগের সদস্য এম সাইফুল ইসলাম খোকন, প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ রশিদ আকন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, শ্রমিক লীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন খোকন, প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন, সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক শেখ মোহাম্মদ আলী, নজরুল ইসলাম আকন, ডা. এস এম ফয়সাল আহমেদ, ডা. আরিফুল ইসলাম রাকিব প্রমূখ।
বাগেরহাটে আর্জেন্টিনার জয়ে আনন্দ মিছিল
বাগেরহাট : : লকডাউনের মধ্যেও আর্জেন্টিনার জয় উপলক্ষে বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করেছে ভক্ত-সমর্থকরা। আজ রবিবার (১১ জুলাই) সকালে কোপা আমেরিকা ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজতেই সমর্থকরা ফেটে পড়েন উল্লাসে। করোনা ভীতি উপেক্ষা করে নেমে আসেন রাস্তায়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই মিছিল শেষ করে বাড়ি ফিরে যায় তারা।
জানা গেছে, ছোট ছোট আনন্দ মিছিলগুলো মূলত গ্রামমুখী ছিল। শহরে প্রশাসনের কড়াকড়ি আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হওয়ায় সড়কে সমর্থকদের উপস্থিতি খুব একটা ছিল না।
আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়া হিমু, নাইম, মাসুদসহ কয়েকজন জানান, আমরা আর্জেন্টিনার ঘোর সমর্থক। এতদিন অনেক কথা শুনতে হয়েছে, আর্জেন্টিনার কোনো শিরোপা নেই। দীর্ঘ ২৮ বছর পর সেই আক্ষেপ ঘুচল। তাই ভয়-ভীতি থাকা সত্ত্বেও ছোট করে আনন্দ মিছিল করলাম। মেসিদের আনন্দে নিজেদের অংশীদার করলাম। ইচ্ছে ছিল বড় মিছিল করার, কিন্তু দেশের অবস্থা ভালো না। এ সময় বেশি আনন্দ করা উচিৎ নয়। আমরাও বুঝি এই বিষয়টা। এ জন্য দ্রুত ফিরে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পর কোনো বড় আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। মেসি পেলেন প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার করা একমাত্র গোলে কোপা আমেরিকার ফাইনালে লিড নেয় লিওনেল মেসির দল। আর এই এক গোলই নির্ধারিত করে দেয় ম্যাচের ফলাফল। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টানা দুটি কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা ফাইনালে গিয়েও হেরে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই কোপা আমেরিকা দিয়েই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের স্বাদ পেলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি